পেটে কৃমির সংক্রমণ কি?
পেটে কৃমির সংক্রমণ হল একটি অতি সাধারণ ধরনের সংক্রমণ, যা সাধারণত দরিদ্র সামাজিক অর্থনীতি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সাথে জড়িত। এটি হুইপওয়ার্মস, টেপওয়ার্মস, হুকওয়ার্মস, থ্রেডওয়ার্মস, এবং রাউন্ডওওয়ার্মসের কারণে হতে পারে। এই পরজীবীটি উৎপন্ন হয় মানুষের শরীরের ভিতরে মূলত পেটে। হুক ওয়ার্মের একমাত্র খাদ্য হচ্ছে আক্রান্ত রোগীর রক্ত।

পেটে কৃমির সংক্রমণ এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
কৃমি হলে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। পেটে কৃমির সংক্রমণের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ক্লান্তি।
  • অত্যধিক ওজন হ্রাস।
  • জ্বর।
  • বমি বমি ভাব।
  • পেট ফোলা, পেট মোটা বা ভারি হওয়া।
  • পেট কামড়া।
  • জন্ডিস।
  • নরম, পিচ্ছিল পায়খানা বা জলজ ডায়রিয়া।
  • আমাশয় (পানির মতো পায়খানার সাথে রক্ত ও মিউকাস)।
  • মলদ্বারের চারপাশ চুলকানো।
  • বাচ্চাদের কাছে অস্বস্তিকর বা বিরক্তিকর যার জন্য রাতে ঘুমাতে না পারা।
  • খাবারে অরুচি।
  • মুখে থুথু ওঠা।
  • অপুষ্টি দেখা দেয়।
  • রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
  • অনেক সময় বক্র কৃমির এক মুখ শিশুদের এপেনডিক্সের মধ্যে প্রবেশ করে।ফলে এপেনডিসাইটিসের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
  • শিশুর নাক, মুখ দিয়েও কৃমি পড়তে পারে।
  • পেটে কৃমির আধিক্যে অন্ত্রনালীর পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া অন্ত্র ফুটো করে মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। তাই উপরোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


পেটে কৃমির সংক্রমণ এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
পরজীবীর কারণে হওয়া পেটে কৃমির সংক্রমণ বিভিন্ন উৎসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সাধারণ কারণগুলি, যার ফলে একটি ব্যক্তি সংক্রামণ প্রবণ হয় তার মধ্যে রয়েছে:

  • পরিচ্ছন্নতার অভাব।
  • কাঁচা অথবা রান্না না করা খাদ্য গ্রহণ করা।
  • সংক্রামিত খাদ্য ও পানির সংস্পর্শে আসা।
  • খালি পায়ে অপরিচ্ছন্ন স্থানে হাঁটা।
  • দূষিত মাটির সংস্পর্শে আসা।
  • দূষিত বস্তুর সংস্পর্শে আসা যেমন প্লেট, খাবার জিনিস, খেলনা, টয়লেট সিট, বিছানা ইত্যাদি।
  • ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের দ্বারা এক ব্যাক্তি থেকে অন্য ব্যাক্তির মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়া।


পেটে কৃমির সংক্রমণ কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রোগীর লক্ষণ ও উপসর্গগুলির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক যে পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করেন সেগুলি হল:

  • মল পরীক্ষা।
  • টেপ পরীক্ষা: এই পরীক্ষায়, মলদ্বারের চারপাশের ত্বকে সেলোফেন টেপ চাপিয়ে দিয়ে পরজীবীর ডিমগুলিকে মাইক্রোস্কোপিকভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং তারপর একটি মাইক্রোস্কোপের ভিতরে দেখা হয়।
  • ভিজুয়াল পরীক্ষা: শিশুর মলদ্বার, আন্ডারওয়্যার বা ডাইপার পর্যবেক্ষণ করা হয়।


পেটে কৃমি সংক্রমণের জন্য ব্যবস্থাপনা:

  • ভাল স্বাস্থ্যকর রক্ষনাবেক্ষনের অভ্যাস, পেটে কৃমির সংক্রমণ ঠিক করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • স্কুলে থাকা বাচ্চাদের জন্য হাত ধোওয়া এবং উন্নত স্যানিটেশন কৌশলের ব্যবহার।
  • স্বাস্থ্যকর আচরণের জন্য শিক্ষা যার মধ্যে রয়েছে ভাল স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি যা সংক্রমণ এবং পুনরায় সংক্রমণকে দূর করতে সাহায্য করে।
  • পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি করা।
  • ক্রিমিনাশক ট্যাবলেট ব্যবহার করে পর্যায়ক্রমিকভাবে ক্রিমিনাশক নিতে উৎসাহিত করা।
  • প্রাকবিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য ভিটামিন এ-র সম্পূরক নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা।
  • এন্থেলমিন্থিক ওষুধের চিকিৎসা প্রদান।


পেটে কৃমি সংক্রমণে ঘরোয়া প্রতিকারঃ
কয়েকটি ঘরোয়া উপায়ে পেটের কৃমি দূর করা যায়। যেমন:

  • সকালে খালি পেটে দুই-তিন কোয়া কাঁচা রসুন খেলে কৃমি মরে যায়। কাঁচা রসুন অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। প্রায় ২০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ৬০ ধরনের ফাঙ্গাস মেরে ফেলতে পারে রসুন। তাই কয়েকটা দিন সকালে নিয়মিত দুই-তিনটি করে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে কৃমি মরে যায়।
  • এ ছাড়া লবঙ্গ খাওয়া যেতে পারে। লবঙ্গ কলেরা, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মাকে প্রতিরোধ করতে পারে। সারাক্ষণ একটি বা দুইটি লবঙ্গ মুখে রাখলে পেটের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি মরে যায়।
  • পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করতে পেঁপের চেয়ে ভালো আর কিছু হয় না। যেকোনো ধরনের কৃমি তাড়াতে তাই পাকা পেঁপের বীজ গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। ভালো ফল পেতে মধুর সাথে পাকা পেঁপেও খাওয়া যেতে পারে।
  • পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন অ্যাসিডিটি, পেটে ইনফেকশন, খাদ্য হজম না হওয়া ইত্যাদি দূর করতে আদার জুড়ি মেলা ভার। তাই এই ধরনের সমস্যায় আদার রস খাওয়া যেতে পারে।
  • এ ছাড়া এক চা চামচ শসার বীজ গুঁড়ো করে কাঁচা হলুদের সাথে মিশিয়ে খেলে পেটে ফিতাকৃমি থাকলে তা মরে যায়। কাঁচা হলুদ অ্যান্টিবায়োটিকেরও কাজ করে। এসব প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করেও কৃমি দূর না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পুরো পরিবার এক সাথে কৃমির ওষুধ সেবন করতে হবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে