শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আমেরিকার আদি অধিবাসী

রেড ইন্ডিয়ান (Red Indian)-কে বা কারা? জেনে নিন তাদের বিষ্ময়কর ইতিহাস????????????

????সে অনেক দিন আগের কথা। এখন থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ইতালিয় এক নাবিক ভারতে আসবে বলে আটলান্টিক পাড়ি দিতে শুরু করলো। আটলান্টিকের বুকে জাহাজ চালিয়ে সে এসে হাজির এল এক দেশে। সেই নাবিকটা ভাবলো সে ভারতেই এসেছে। ভারতকে ইউরোপের লোকেরা ইন্ডিয়া বলে ডাকে। নাবিক যখন দ্বীপে নামলো তখন স্থানীয় অধিবাসীরা তাকে স্বাগত জানালো।

????নাবিকটি ভাবলো সে যখন ইন্ডিয়াতে এসেই পড়েছে এখানকার লোকজন নিশ্চই ইন্ডিয়ান হবে। তাই সেই নাবিকটি নতুন আসা দেশের লোকদের ইন্ডিয়ান ভেবে তাদের ইনডিয়ান বলে ডাকতে শুরু করলো। সেই নাবিকটির নাম ছিল কলম্বাস। তার বাড়ী ইতালি হলেও তিনি কিন্তু স্পেনের রাণীর অনুগ্রহে স্পেন থেকে আটলান্টিকের বুকে পাড়ি দেন। কলম্বাস স্পেনে ফিরে গিয়ে জানান যে তিনি পুর্ব ভারত বা ইষ্ট ইন্ডিজ গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একদল মানুষদের দেখেছেন।

????কলম্বাসের মতো সবাই ধরেই নিল যে কলম্বাস যেখানে গেছেন সেটাই ইন্ডিয়া আর সেখানকার লোকজন ইন্ডিয়ান।

????এরপর অনেকদিন পার হয়ে যায়। সবাই যখন দেশটিকে ইন্ডিয়া বলে ভাবতে শুরু করেছে সে সময় আরেকজন নাবিক বলেন কলম্বাস যে দেশটি আবিস্কার করেছেন তা ইন্ডিয়া নয়। এই নাবিকটির নাম ছিল আমেরিগো ভেসপুচি। তার নামে দেশটির নাম হয় আমেরিকা। দেশটির নাম পাল্টালেও তার আদিবাসীদের নাম কিন্তু পাল্টায়নি। এখনও বিশ্বের মানুষ তাদের ইন্ডিয়ান নামে ডাকে। এখন শুধু নামের আগে রেড শব্দটি বাসানো হয়। যার ফলে আমেরিকার আদিবাসীদের নাম হয়ে গেছে রেড ইন্ডিয়ান।

????কাদের কলম্বাস রেড ইন্ডিয়ান ভেবেছিলেনঃআজ আমেরিকার সকল আদিবাসীদের রেড ইন্ডিয়ান বলে ডাকা হয়। তবে তারা আসলে ছিলেন আমেরিকার আদিবাসী এবং তারা নিজেদের কখনই রেড ইন্ডিয়ান বলে পরিচয় দেয় না। আমেরিকা এক বিশাল মাহাদেশ এবং এই মহাদেশটির দুটি অংশ রয়েছে। একটিকে বলে উত্তর আমেরিকা আরেকটি হলো দক্ষিন আমেরিকা। পুরো দুটি মহাদেশ এখন থেকে পাঁচশ বছর আগেও এশিয়া আর ইউরোপের মানুষের কাছে অজানা ছিল।

????তাহলে সেখানে যারা বাস করে তারা কোথা থেকে এলো? কী তাদের পরিচয়?

????এই বিশাল আমেরিকায় ছড়িয়ে আছে নানা গোষ্ঠী এরাই একত্রে রেড ইন্ডিয়ান নামে পরিচিত। এরা আকারে লম্বা। এদের নাকটা খানিকটা চ্যাপ্টা। তবে এরা নিজেদের নিজস্ব নামে পরিচয় দিতে ভালোসে। আমেরিকাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। উত্তর আর দক্ষিন। উভয় মহাদেশেই রেড ইনডিয়ান বাস করে। তবে এরা সবাই একই রকম নয়। মানে এদের আচার আচরণ চাল চলন আলাদা আলাদা। যেমন, সিউক্স রেড ইনডিয়ান, কেচুয়া ইনডিয়ান।

????এক সময় ভাবা হতো যে রেড ইন্ডিয়ানা যুগ যুগ ধরে আমেরিকায় বাস করতো। তবে নৃবিজ্ঞনীরা এখন গবেষণা করে বলছেন এই রেড ইন্ডিয়ান দর পুর্ব পুরুষ এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছে। এদের আদিপুরষ মঙ্গোলীয় মানে চাইনিজদের মতো ছিল দেখতে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বের করেছেন কত বছর আগে এরা এশীয়া থেকে আমেরিকা পাড়ি দিয়েছে।

????বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এখন থেকে হাজার হাজার বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার সাথে মেক্সিকোর একটি অংশের যোগযোগ ছিল। সেই পথ ধরেই এই সব লোকেরা আমেরিকায় এসেছিল। তাদের একটা দল এসে চিলিতে বসতি গড়ে। সেটও ছিল এখন থেকে ১২৫০০০ হাজার বিপি বছর আগে। বিপি বলতে ইংরেজিতে বোঝায় বিফোর প্রজেন্ট। যার মনে হচ্ছে বর্তমান সময়ের আগে। বিপি শব্দটি বর্তমান বিজ্ঞনীরা গড়ে তুলেছে।

????১৯৫০ সালে পুরোন জিনিষের বয়স পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি আবিস্কার হয় যাকে বলা হয় বিজ্ঞানভিত্তিক বয়স নির্ধারন পদ্ধতি। এই পদ্ধতি যে বছর আবিস্কার হয় সে বছরে আদর্শ ধরে পুরোন কোন বস্তু বা ফসিল প্রাণীর বয়স নির্ধারন করা হয়।

????এখন বিপি ১২৫০০০ মানে হলো ১৯৫০ সালের ঠিক ১২৫০০ বছর আগে চিলিতে মানব বসতি ছিল। তবে অনেকে মনে করেন ৩০,০০০ বছর আগেও দক্ষিণ আমেরিকায় মানব বসতি ছিল। এদেরই বংশধর এই রেড ইন্ডিয়ানরা।

????রেড ইন্ডিয়ানরা একই সময়ে বেশ কয়েকটি জায়গায় সভ্যতা গড়ে তোলেঃআমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া ইতিহাস থেকে জানা যায় রেড ইনডিয়ানদের অনেকেই হাজার হাজার বছর আগে থেকেই কৃষিকাজ জানতো। তারা আগুনের ব্যবহারও জানতো। এ ছাড়া রেড ইন্ডিয়ানরা দুটি ফসল ফলাতো যা কিনা বাকী দুনিয়া জানতো না। এখন সেই খাবারটি প্রায় আমাদের সবার টেবিলে থাকে, তার নাম আলু। এই আলু কিন্তু রেড ইনডিয়ানদের কাছ থেকে অন্য সবাই খেতে শিখেছে। এ ছাড়া তারা কোকা নামের এক ধরনের গাছের বীজের রস খেত। এই রস দিয়ে এখন চকোলটে বানানো হয়। এ ছাড়া ভুট্টা রেড ইনডিয়ানরা ছাড়া অন্যরা কেউ চাষ করতো জানতো না। তারাই ভুট্টা দিয়ে নানা ধরনের খাবার তৈরী করে খেত।

????রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে অনেক আলাদা জাতি আছে এবং এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন ধরনের সভ্যতা সৃষ্টি করেছিল। এদের মধ্যে ছিল মায়া ও ইনকা সভ্যতা। এই সব লোকেরা সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং এবং নগর গড়ে তুলেছিল। রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে অনেকে লিখতে এবং পড়তে শিখেছিল। আর তারা গণনা করতে পারতো। তারা সুন্দর ক্যালেন্ডার তৈরী করতো। যে দিয়ে তারা তদের ফসল বোনা ও কাটার হিসেব করতো। রেড ইন্ডিয়ানদের অনেকে বনে বাস করতো।

????এখনও রেড ইনডিয়ানদের অনেকে জঙ্গলে বাস করে। এদের অনেকে আদিম দেবদেবীর পুজো করতো। তবে রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে মায়া আর ইনকারা সুর্যকে দেবতা মেনে পুজা করতো।

????এক সময় পুরো আমেরিকায় রেড ইনডিয়ানরা বাস করলো এখন তাদের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। এর কারন হচ্ছে ইউরোপ থেকে যে সমস্ত দেশের লোকেরা আসতো তারা অনেকেই এই নতুন দেশে বসতি গড়তো। তাদের সঙ্গে রেড ইনডিয়ানদের যুদ্ধ হত। প্রথম দিকে অনেক রেড ইন্ডিয়ান সাদা মানুষদের দেবতা মনে করে তাদের আমেরিকার মাটিতে জায়গা দেয়। কিন্তু এক সময় উভয়ের যুদ্ধ হয় সেই যুদ্ধে অনেক রেড ইনডিয়ানা তাদের এলাকা ছেড়ে বনের দিকে চলে যায়। ইউরোপ থেকে লোক আসার আগে আমেরিকায় ঘোড়া ছিল না।

????আমেরিকার অনেক দেশে এখনও রেড ইনডিয়ানরা সংখ্যায় বেশী। এই সমস্ত দেশগুলো মধ্যে রয়েছে বলিভিয়া, পেরু মেক্সিকো, ব্রাজিল, ইকুয়েডোর, গুয়েতেমালা, কলোম্বিয় ইত্যাদি। রেড ইন্ডিয়ানরা নিজেদের রেড ইন্ডিয়ান ভাবে না। কারন নামটি তাদের দেওয়া নয়। তারা নিজেদের নিজস্ব জাতিগোষ্ঠীর নামে পরিচিত হতেই ভালোবাসে। এদের মধ্যে অনেকে তাদের গোত্রের নামে পরিচিত হয়। অনেকে আবার ভাষার মধ্যে দিয়ে নিজেদের নাম তৈরী করে। এদের মধ্যে রয়েছে কেচুয়া, গুয়ারানি ইত্যাদি রেড ইনডিয়ান।

????কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের পরে ইউরোপ থেকে হাজার হাজার মানুষ আমেরিকা পাড়ি জমায়। এই সব মানুষেরা এসে মূলত রেড ইনডিয়ানদের জায়গা দখল করতে থাকে। এক সময় তারা পুরো এলাকা দখল করে ফেলে। এর ফলে গোটা আমেরিকায় ইউরোপের ভাষা আর সংস্কৃতি রাজত্ব করতে থাকে। আর এতে রেড ইন্ডিয়ানরা জাতি হিসেবে টিকে থাকলেও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়ে যায়।

????বর্তমানে আমেরিকার আর কানাডায় থাকা রেড ইনডিয়ান যাদের মূলত নেটিভ আমেরিকান বলা হয় তাদের মধ্যে ১৫০টি ভাষা টিকে আছে। এছাড়া মধ্য দক্ষিণ আমেরিকার টিকে আছে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ ভাষা।

????বর্তমানে রেড ইন্ডিয়ানরা তাদের দাবী নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠেছে। এখন তারা আমেরিকার অনেক রাজ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ