Call

দুয়া কবুলের উত্তম সময় রেফারেন্স সহ নিম্নে দেওয়া হলোঃ

১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো। কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো? (সহীহ বুখারী)।

২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জোবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলো আর তাকে তা দেয়া হলো না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে। (মুসলিমঃ ৭৫৭)।

৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না। (আবু দাউদঃ ৫২১, তিরমিজিঃ ২১২)।

৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। (সহীহ বুখারী)।

৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, জমজম পানি হলো তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়। (ইবন মাজাহঃ ৩০৬২, আহমাদঃ ৩/৩৫৭)।

অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।

৬। সিজদাহর সময়েঃ আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে সময়টাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)।

৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হা’মদু ওয়াহুয়া আ’লা কিল্লি শায়্যিন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে ‘আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে। (সহীহ বুখারী)।

৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ আবু উমামাহ (রাঃ) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।

অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলো সালাম ফেরানোর আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।

৯। কদরের রাতেঃ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন, “আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।

বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।

১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া। (আবু দাউদঃ ২৫৪০)।

১১। আযানের সময়ঃ পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালো সময়।

১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মুয়াজকে বলেছেন, মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না। (সহীহ বুখারী)।

১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া। (বায়হাকি, তিরমিজি)।

১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।

১৫। রোজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ পূর্ববর্তি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী। এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলো আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)।

১৬। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না ‘তোমার জন্যও তা হোক’”। (মুসলিম)।

১৭। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)।

১৮। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলেঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুটি দোয়া কক্ষনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়”। (আবু দাউদঃ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)।

১৯। জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)।

২০। রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)।

২১। অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যখন তোমরা কোন অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাও, তখন ভালো কথা বলো (ভালো কিছু চাও), কেননা তোমরা তখন যাই বলো, তার সাথে সাথে ফেরেশতারা ‘আমিন’ বলে”। (মুসলিম)। ©


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ