F.Rahman

Call

ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর আমি পর্যায়ক্রমে দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

১। আপনার প্রথম প্রশ্নটা ছিল দুয়া বা সূরা শয়তানকে দূরে রাখে নাকি আল্লাহ্‌ তায়ালা? 

      উত্তরঃ মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। মানুষের জ্ঞান সীমিত, অভিজ্ঞতা অস্পষ্ট এবং সামর্থ্য নেই বললেই চলে। এ জন্যই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-

 “তাঁরই কাছে আছে অদৃশ্যের চাবি! তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানেন না। তিনি জানেন যা কিছু আছে স্থলে ও জলে। গাছের একটি পাতাও ঝরে না তাঁর অজ্ঞাতসারে। কোন শস্যকণা মাটির গভীর আঁঁধারে অংকুরিত হয় না অথবা ভেজা আর শুকনো কোন জিনিশ নেই যার স্পষ্ট বিবরণ তাঁর লিখনীতে (কিতাব, বিধানে) নেই।” (আনআম: ৫৯)

কোন মানুষের তো ক্ষমতা নেই ই, কোন দুয়া বা সূরার ও নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই যে সে মানুষের বিপদের সময়ে তাকে বিপদমুক্ত করবে। যদি আপনি বিশ্বাস করেন যে সূরা বা দুয়া তার নিজস্ব কোন ক্ষমতাবলে আপনাকে বিপদমুক্ত করছে তাহলে আপনি অনাকাঙ্খিত ভাবে ই শিরক করছেন। মানে আল্লাহর ক্ষমতার সাথে সূরা বা দুয়ার ক্ষমতার তুলনা করছেন বা আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করছেন।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বহুবার মানুষকে শিরকের গুনাহ থেকে সাবধান করেছেন।

“নিশ্চয়ই শিরক একটি মস্ত বড় অন্যায়” (সুরা লোকমান: ১৩)


“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তার সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা
করবেন না। এ ছাড়া অন্য সকল গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে
দিবেন” (সুরা নিসা: ৪৮)


“নিশ্চয় যে আল্লাহ’র সাথে শিরক করবে আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দেবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ: ৭২)

“আর যদি তারা শিরক করে তাহলে তাদের সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে।” (সুরা আনআম: ৮৮)


"আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। (সূরা যুমার: ৬৫) 

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল। (সূরা নিসা ৪৮)

কিন্তু প্রশ্ন তাহলে এই যে, আমরা তাহলে বিপদে পড়লে দুয়া কেন পড়ি? সূরা বা আয়াত কেন পড়ি?

কারণ টা হল দুয়া বা সূরার মাধ্যমে আমরা বিপদের সময় আল্লাহ্‌ কে ডাকি। আমাদের অত্যন্ত পরিচিত কিছু দুয়া যার সাহায্যে আমরা আল্লাহ্‌কে ডাকি বা বিপদের সময় তার সাহায্য কামনা করি সেই দুয়া গুলোর অর্থগুলো যদি পড়েন তাহলে দেখবেন যে...  

দুয়া ইউনুসঃ

"লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন।"
আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। অবশ্যই আমি পাপী। -সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭

দুয়া ইউনুসের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্‌র একত্ববাদ ও পবিত্রতা ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইছি।

আয়াতুল কুরসীঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, সূরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। [মুসতাদরাকে হাকিম]।

চলুন দেখি আয়াতুল কুরসীর মাধ্যমে আমরা আসলে কী কী বলছি।

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বিয়্যুম লা তা’খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।(সূরা বাকারা-২৫৫)

‪অর্থ‬: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।
তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।(সূরা বাকারা-২৫৫)

আমরা বিপদের মুহূর্তে যে সব দুয়া বা সূরা পড়ি সেগুলো শুধুই বাক্য। কোন বাক্যের কোন ক্ষমতা থাকে না কোন মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করার। কিন্তু এই বাক্যগুলোর মাধ্যমে আমরা আসলে যার কাছে সাহায্য চাই তিনিই আল্লাহ যিনি আমাজিনিসব বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

 

২। উত্তরটা অনেকটা প্রথম উত্তরটার মত। পানিতে সূরা পড়ে ফুঁ দিচ্ছি। ধরে নিলাম আয়াতুল কুরসী পড়ে পানিতে ফুঁ দিচ্ছি। তার মানে আয়াতুল কুরসী পড়ার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করছি আর ঐ পানির মাধ্যমে উপকৃত হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি।

৩। যায়দ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "এসব টয়লেটে জিন-শয়তানরা উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যারা টয়লেটে যাবে তারা যেন এ দু'আ পড়ে :

“আ'উযু বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস”
"আমি আল্লাহর নিকট নাপাক নর-নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।"
[সহীহ : আবু দাউদ ৬, ইবনে মাজাহ্ ২৯৬, সহীহুল জামি‘ ২২৬৩।]

দুয়ার মাঝে ই প্রশ্নের উত্তর আছে। এই দুয়া মানে এই বাক্যটার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি।

দুয়া বা সূরা হল শুধুমাত্র কুরআন বা হাদীসে বর্ণিত সে সব বাক্য যেভাবে আমরা আল্লাহ্‌ কে ডাকতে পারি। কিন্তু আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো বিপদের সময়ে মানুষকে রক্ষা করার ক্ষমতা নেই। 

ধন্যবাদ।

 

 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ