শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

ক্যাবিনেট বা ডেস্কে তথ্যপূর্ণ ফাইলগুলো সাজিয়ে রাখি আমরা। যেন যখন তখন প্রয়োজন হলেই তা দ্রুত বের করে নেওয়া যায়।

মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে কি ঘটে?

মানুষ তার খুলির নিচে মোটামুটি দেড় কেজি ওজনের ভেজা ও জটিল টিস্যু ধারণ করছে, সেখানেই যাবতীয় তথ্য জমা হয়ে থাকে। যখন প্রয়োজন পড়ে, তখনই তা বের করে নেওয়া যায়। 

বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা করছেন। নিউরোসায়েন্টিস্টরা মস্তিষ্কের এই তথ্য ধারণের বিষয়টিকে বলেন 'এপিডোসিক মেমোরি'। বছরের পর বছর গবেষণার পর কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে, মস্তিষ্ক কিভাবে এ কাজ করে। 

মগজের বাইরের দিকের স্তরের নিচে ছোট একটি অংশ রয়েছে যার নাম হিপোক্যাম্পাস। মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার এর দৈর্ঘ্য। কিন্তু মস্তিষ্কের মূল অংশের সঙ্গে দারুণভাবে জড়িত। 

হিপোক্যাম্পাসের আশপাশের কয়েকটি অংশেই নতুন তথ্য বিশেষ প্রক্রিয়া সংরক্ষিত হয় বলে জানান ইউনিভার্সিটি অব লেসিস্টারের গবেষকরা।

এপিলেপসিতে আক্রান্ত এক রোগীর মস্তিষ্কে সার্জারির সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষ বিশ্লেষণের সুযোগ মেলে তাদের। 

হিপোক্যাম্পাসের একটিমাত্র কোষ প্রয়োজনে নতুন একটি জোট গঠন করতে পারে নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্যে। 

মস্তিষ্কের বাইরের দিকে ভাঁজ হয়ে রয়েছে কর্টেক্স। এটি আকারে হিপোক্যাম্পাসের চেয়ে বড় এবং অসংখ্য কাজ করে। দেহের অঙ্গের নড়ন-চড়ন এর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিছু অনুভবের জন্যে, যেমন- সৈকতে বাতাস খাওয়ার সময় আমরা যা অনুভব করি তার জন্যে মস্তিষ্কের কর্টেক্স বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। পুরনো বন্ধুকে চিনতে, পাখির ডাকে কান খাড়া করতে এবং আরামদায়ক বাতাসের অনুভূতি পেতে নানা কাজ করে কর্টেক্স। 

এ ধরনের অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কে জড়ো হয়ে থাকে। এমন বহু অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি কর্টেক্সজুড়ে ছড়িয়ে থাকে। পুরনো কিছু মনে করার সময় এই অংশ থেকে তথ্যটা শুধুমাত্র খুঁজে নেয় মস্তিষ্ক। 

নিউরোলজিস্ট গিওর্গি বুসাকি ২০০৬ সালে প্রকাশিত 'রিদমস অব দ্য ব্রেন' বইয়ে লিখেছিলেন, কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের বিশাল লাইব্রেরি। আর হিপোক্যাম্পাস সেখানকার লাইব্রেরিয়ান। 

নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, এফএমআরআই-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কোনো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার চিত্র দেখা সম্ভব হয়েছে। মানুষ কিভাবে পুরনো তথ্য মনে করে, হিপোক্যাম্পাসে তার প্রক্রিয়াটি দেখার চেষ্টা করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী ড. আইডান হরনার এবং তার সহকর্মীরা। যদি আইফেল টাওয়ারে কোনো বন্ধুর সঙ্গে ঘোরার দৃশ্য স্মৃতিতে থাকে, তখন আপনাকে আইফেল টাওয়ারের ছবি দেখানো হলে আপনি ওই বন্ধুর কথাও মনে করবেন। স্মৃতিতে কিভাবে ভেসে ওঠে তার প্রক্রিয়াটির চিত্র ধারণ এখনো পরীক্ষাধীন হয়েছে। 

যদি কোনো মানুষের পরিচয় মনে করা চেষ্টা করেন, তখন সে স্থানে ওই মানুষটির সঙ্গ দেখা হয়েছিল তার কথাও মনে ভেসে ওঠে।

প্রক্রিয়াটি নিয়ে বড় মাপের গবেষণা চলমান রয়েছে। মস্তিষ্কে যেভাবেই কাজটি করুক না কেন, জীবনটাকে আলো অর্থপূর্ণ ও সুন্দর করতে এটি দারুণ এক পদ্ধতি। 

তথ্য সংগ্রহ : কালের কন্ঠ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ