সৌদি আরব আমাদের চেয়ে ৩ ঘন্টা পিছিয়ে থেকেও ১ দিন আগে কীভাবে ঈদ পালন করে? সময়ে এগিয়ে থাকার কারণে তো বরং সৌদির ১ দিন আগে আমরা ঈদ পালন করার কথা। কিন্তু বিষয়টা উল্টো হয়ে যাচ্ছে কেন? প্রতিবছর রোযার ঈদের ১ দিন কিংবা ২ দিন আগে এই প্রশ্ন অধিকাংশ বাঙালির মাথায় ঘুরপাক খায় এবং ঈদ চলে যাওয়ার সাথেসাথে ঘুরপাকও হারিয়ে যায়। বিষয়টা জানা দরকার। সময়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমের দেশগুলো আমাদের চেয়ে পিছিয়ে, আর পূর্বের দেশগুলো আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তাহলে তো নিয়ম অনুযায়ী আমাদের চেয়ে পূর্বে অবস্থিত দেশগুলোতে রোযা এবং ঈদ আগে হওয়ার কথা। সেটা তাহলে না হয়ে উল্টোটা হচ্ছে কেন? আসলে ইসলামে রোযা এবং ঈদের বিষয়টা চাঁদ দেখা যাওয়া, না যাওয়ার উপর নির্ভরশীল। চাঁদ পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় মূলত ২৯.৫ দিন। ঠিক এই কারণে রোযা কখনও ২৯ দিনে, আবার কখনও ৩০ দিনে হয়। অনেকে বলতে পারেন, চাঁদ তো সময় নেয় ২৭.৩ দিন। তাহলে আমি ২৯.৫ বলছি কেন? আসলে একটা নতুন চাঁদ থেকে আরেকটা নতুন চাঁদ পর্যন্ত সময়ের ব্যবধান হয় ২৯.৫ দিনের একটু কম বেশি। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝামাঝি চাঁদ থাকার কারণে, মানে সূর্যগ্রহণ চলার সময়, আমরা ২ দিনের মতো চাঁদকে দেখি না। এই সময়টা ২৯.৫ থেকে বাদ দিয়ে অরবিটাল টাইম হিসেব করা হয় দেখে ২৭.৩ দিনের বিষয়টা এসেছে। ছবিতে বিষয়টা স্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে। সময়ের এই হিসেবটাকে দুদিক থেকেই সঠিক বলতে পারেন। তবে আমরা যেহেতু রোযা নিয়ে কথা বলছি, সেহেতু আমরা ২৯.৫ এর কথাই বলবো। নতুন চাঁদ প্রথম দেখা যায় পশ্চিম আকাশে। সূর্যগ্রহণ শেষে সূর্যের আলো যখন ধীরে ধীরে চাঁদে পড়া শুরু হয়, সেই সময়টাকে আমরা নতুন চাঁদ বলি। এই জিনিসটা পশ্চিমের দেশগুলো আগে দেখতে পায়, মানে সৌদি আরব বাংলাদেশের আগে নতুন চাঁদটা দেখতে পায়। আর সেজন্যই সোদি সময়ে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও একদিন আগে ঈদ পালন করে। কারণ, বিষয়টা সম্পূর্ণ চাঁদ দেখা যাওয়ার উপর নির্ভরশীল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের আকাশেও কি তাহলে একইদিনে ৩ ঘন্টা পরে চাঁদ দেখতে পাওয়ার কথা না? হ্যাঁ, দেখা যেতে পারে। অনেক সময় এই জিনিসটা রাত ১১ টা কিংবা ১২ টায়ও হতে পারে। আবার অনেকসময় আবহাওয়া জনিত কারণে নাও দেখা যেতে পারে। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের চেয়েও পূর্বে অবস্থিত অনেক দেশও তো বাংলাদেশের আগে ঈদ পালন করে। তাহলে সেটা কীভাবে হয়? এক্ষেত্রে ২ টা কারণ হতে পারে। প্রথমত, কিছু কিছু দেশ পশ্চিমের দেশগুলোকে বিশ্বাস করে। সেক্ষেত্রে তারা মনে করে, যেহেতু আমাদের টার্গেট দেশটি চাঁদ দেখেছে, সেহেতু আকাশে চাঁদ সত্যিই আছে। সুতরাং, আমাদেরও ঈদ তাদের সাথে হবে। দ্বিতীয়ত, পৃথিবী গোল হওয়ার কারণে আপনি যতই পূর্বে যেতে থাকবেন, একসময় কিন্তু আপনি সর্ব পশ্চিমে চলে আসবেন। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো? আমাদের চেয়ে অনেক দূরের পূর্বের দেশটা আসলে ঘুরেফিরে পশ্চিমে। মূলত, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে চাঁদ দেখা যাওয়ার কারণ হচ্ছে দেশগুলোর অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের কারণে। সহজ কথায় বলতে গেলে ভৌগোলিক অবস্থান বলতে যাকে বুঝি আমরা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ কেন সৌদিকে অন্ধ অনুসরণ করে? বাংলাদেশ কেন আগে থেকে বলতে পারে না আসলে ঈদ কবে হবে? কারণ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান মানে না। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাহায্যে আপনি সহজেই স্পষ্ট করে অনেক আগেই বলে দিতে পারবেন ঈদ আসলে কবে হবে। জ্যোতির্বিজ্ঞান কে অস্বীকার করার একটা কুফল বলি। আবহাওয়াজনিত কারণে সৌদি কিংবা বাংলাদেশ যদি কখনও চাঁদ দেখতে ব্যর্থ হয়, তখন একদিন পর সবকিছু হয়। সেক্ষেত্রে আপনি শবে কদরের রাত মিস করবেন এবং নির্দিষ্ট দিনে ঈদ পালন করতে ব্যর্থ হবেন। উদাহরণ হিসেবে গতবারের আগেরবারের রোযার ঈদের কথাই ভাবতে পারেন। আহা! দেশে ঈদ হবে, নাকি রোযা হবে- সেটা নির্ভর করে খালি আকাশে চশমা চোখে দিয়ে তাকিয়ে থাকা চাঁদ দেখা কমিটির কয়েকজন বৃদ্ধ লোকের উপর! বুঝতে পারেন, সমস্যাটা কতটা গুরুতর? যাইহোক, এই ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রকম মতবাদে বিশ্বাসী। তাই ঈদ এবং রোযায় পার্থক্য দেখা যায়। তুরস্ক বিজ্ঞানের সাহায্যে আগেই ঘোষণা দিয়ে রাখে ঈদ কবে হবে। আবহাওয়াজনিত কারণে তারা চাঁদ দেখতে না পেলেও রোযা এবং ঈদ ঠিক দিনেই পালন করতে পারে। কারণ, ওরা আমাদের মতো গোঁড়ামিতে বিশ্বাসী না, আর সৌদিকেও অন্ধ অনুকরণ করে না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ