শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

১.সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন। ২.তা হতে ও অসমর্থ পক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার। ৩.যদি উহাতেও অসমর্থ হন একাদশীতে পঞ্চ রবিশষ্য বর্জ্জন করতঃ ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান  রহিয়াছে। সমর্থ পক্ষে রাত্রি জাগরনের বিধি আছে গৌড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেগুলি সেমতে করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু সবজি ফল মূলাদি গ্রহণ করতে পারেন। যেমন - গোল আলু, মিষ্টি আলু ও চাল কুমড়া, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি অথবা বাদাম তৈল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। হলুদ, লবন ও মরিচ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য যেমন - দুধ, কলা ,আপেল, আঙ্গুর, আনারস,আখ,আমড়া, শস্য, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু, বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফল মূলাদি পেতে পারেন। স্মরণীয় একাদশীতে পাঁচ প্রকার রবিশস্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হইয়াছেঃ ১. ধান জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন - চাউল, মুড়ি, চিড়া, সুজি, পায়েস,খিচুড়ি, চাউলের পিঠা, খৈ ইত্যাদি। ২. গম জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন - আটা,ময়দা,সুজি, বেকারীর রুটি বা সকল প্রকার  বিস্কুট, হরলিকস জাতীয় ইত্যাদি। ৩. যব বা ভূট্টা জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন - ছাতু, খই, রুটি ইত্যাদি। ৪. ডাল জাতীয় সকল প্রকার খাদ্য যেমন - মুগ, মাসকলাই, খেসারী, মশরী, ছোলা, অড়হর, ফেলন, বরবটী ও শিম ইত্যাদি। ৫. সরিষা তৈল, সয়াবিন তৈল, তিল তৈল ইত্যাদি।        উপরোক্ত পঞ্চ রবিশষ্য যে কোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত নষ্ট হবে। উল্লেখ্য যারা সাত্তি¡ক আহাড়ী নন এবং চা, বিড়ি/ সিগারেট, পান, কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় গ্রহণ করেন একাদশী ব্রত পালনের সময় কাল পর্যন্ত ঐগুলি গ্রহণ না করাই ভাল। একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের সদ্গতি হবে তা নয় একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা/ মাতা নিজ কর্মদোষে নরকবাসী হন তবে সেই পুত্রই (একাদশী ব্রত) পিতা মাতাকে নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে। “ইন্দ্রিরা একাদশী” আশ্বিনের কৃষ্ণা একাদশীর নাম। যদি কেহ কোন বিধি নিষেধ পালন ছাড়া একাদশীর করার উদ্দেশ্যহীন ভাবে (বাধ্যতামূলক) তিথিতে উপবাস থাকে ও রাত্রি জাগরন করে তবে সে একাদশীর সম্পূর্ণ ফল পাবে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে যেমন নিজে নরকবাসী হবে অন্যকে ভোজন করালেও নরকবাসী হবে। কাজেই একাদশী পালন করা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।  একাদশী পারণ - পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের যে সময় দেওয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশষ্য ভগবানের নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত দরকার। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হয় না।          একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীর দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
sahukrishna

Call

হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মেই চাঁদকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চাঁদের আবার ১৫ টি তিথি আর ০২ টি পক্ষ আছে -০১.কৃষ্ণ পক্ষ এবং ০২. শুক্ল পক্ষ। চাঁদের এই তিথি গুলোর আবর্তনের ফলে পক্ষের রদবদল ঘটে। 

প্রতি ৩০ দিনে ১৫ টি তিথি ০২ বার করে আবর্তিত হয়। একবার কৃষ্ণ পক্ষে আর একবার শুক্ল পক্ষে। একাদশী  তিথিটিও চাঁদের দুই পক্ষে একবার করে মাসে দুই বার আবর্তিত হয়।

 হিন্দু ধর্মমতে চাঁদের ১৫ টি তিথির মধ্যে একাদশী হল এমন একটি তিথি, যে তিথিটিকে হিন্দু ধর্মে পূর্ণ্য অর্জনের বিশেষ দিন বলে মনে করা হয়। 

তবে হিন্দু ধর্মে একাদশীর গুরুত্ব যদি বিচার করতে যান তাহলে তার পিছনে একাদশী কেন পালন করা হয় তার এক আলাদা ইতিহাস আছে। 

পুরানের কাহিনী অনুসারে ভগবান যখন পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার করেন তখন নানা প্রকার জীব জন্তুর পাশাপাশি পাপপুরষ নামে একটি বিশেষ পুরুষ তৈরী করেন। 

পাপপুরুষের শারীরিক গঠন ভয়ঙ্কর রকমের। তার শরীরের সমস্ত অঙ্গ বিভিন্ন ধরণের পাপে পরিপূর্ণ। মর্ত্যবাসী পাপী মানুষদের শাস্তি দেওয়ায় তার বিশেষ কাজ। 

কিন্ত ভগবান যখন পাপী পুরুষ তৈরী করলেন তখন মানুষদের কথা চিন্তা করে পাপ পূর্ণ্যের বিচার করে শাস্তি দেওয়ার জন্য যমরাজ এবং নরকের সৃষ্টি করলেন। 

এইভাবে চলতে থাকার পর একদিন ভগবান স্বয়ং যমলোকে বেড়াতে এলেন। যমলোকে যমরাজ সিংহাসনে বসিয়ে ভগবানের পূজা অর্চনা করলেন। 

কিন্ত যমলোকের নরকের দরজা থেকে ভগবান তখন মানুষের অসহায় পীড়া কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। কান্নার আওয়াজ শুনে ভগবান জিজ্ঞাসা করলেন এই ধরণের আওয়াজ কোথা থেকে আসছে ? 

যমরাজ তখন বললেন হে প্রভু নরকে মানুষ তার কৃতকর্মের করা পাপের ফলে নরক যন্ত্রনা ভোগ করছে। তখন ভগবান নরক যন্ত্রনায় কষ্ট পাওয়া মানুষজনদের দেখতে নরকের দরজায় গেলেন। 

সেখানে ভগবানকে দেখতে পেয়ে সকল পাপী মানুষ চিৎকার করে উঠলেন হে প্রভু আমাদের নরক যন্ত্রনা থেকে রক্ষা করুন। ভগবানের মনে তখন দয়ার উদয় হল এবং 

পাপী মানুষজনদের নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তির জন্যে নিজে একাদশী নামের এক দেব মূর্তিতে প্রকট হলেন। তারপর সমস্ত নরকবাসী মানুষদের কাছে প্রতিশ্রুতি নিলেন 

তারা যেন সবাই একাদশীর ব্রত পালন করে তবেই তারা এই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবে। এরপর নরকের সবাই একাদশী পালন করল এবং নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেল। 

অপরদিকে একাদশীর আবির্ভাবের ফলে মর্ত্যধামের মানুষ পাপ কাজ থেকে বিরত হতে লাগলে মর্ত্যে পাপের পরিমান হ্রাস পেতে থাকে। তখন পাপপুরুষ নিজের থাকার জায়গা খুঁজে না পেয়ে 

ভগবানের স্মরণাপন্ন হলেন এবং তিনি তার বাসস্থানের জন্যে একটি উত্তম জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে বললেন। ভগবান তখন বললেন যে দিন একাদশী দেবীর আবির্ভাব হবে , 

সেদিন তুমি মনুষ্য সংসার ছেড়ে পঞ্চ রবি শস্যের মধ্যে অবস্থান করবে এবং সেখানে তুমি সুরক্ষিত থাকবে। আর সেই জন্যেই একাদশীর দিন পঞ্চ রবি শস্য অথাৎ ধান, গম, ডাল, তৈল বীজ ইত্যাদি শস্য দ্বারা খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। 

একাদশীর দিন এইসমস্ত খাবার খেলে ব্রাহ্মণ হত্যার সমতুল্য পাপ হয়। যাইহোক এইতো ছিল হিন্দু ধর্মে একাদশী পালনের পিছনের কিছু সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। 

তবে আপনারা যদি একাদশী পালনের নিয়ম ও একাদশীর মাহাত্ম্য বা আমাদের একাদশী কেন পালন করা উচিত আরো ভালোভাবে জানতে চান, তাহলে এখানে ক্লিক করে….একাদশী পালনের নিয়ম আর্টিকেলটি পড়ুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ