শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
RabbyHosen

Call

আদর্শ সমাজ গঠন সমাজের প্রধান উপাদান ব্যক্তি। তাই আদর্শ সমাজ গঠনে ব্যক্তিগঠনই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন আদর্শ বা চেতনা যত সুন্দরই হোক, যদি সেই আদর্শ অনুযায়ী ব্যক্তিগঠন না করা হয় তাহলে আদর্শ সমাজ গঠনের স্বপ্ন একসময় ধুলোমলিন হয়ে যাবে। সেই সাথে তার বাস্তবায়নও হয়ে পড়বে অসম্ভব এবং সুদূরপরাহত বিষয়। আদর্শ সমাজ গঠন করতে হলে এ ব্যাপারে যার অভিজ্ঞতা রয়েছে, সকলের সামনে যিনি এর মডেল উপস্থাপন করেছেন- প্রথমে তার শরণাপন্ন হতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো পৃথিবীর সামনে শ্রেষ্ঠ আদর্শ সমাজের মডেল উপস্থাপন করেছেন। তাই আমরা যদি রাসূলের সীরাতকে সামনে রেখে তার সমাজ গঠন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে, তিনি ব্যক্তিগঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি মৌলিক নীতি ও কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। যার আলোকে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নীতি ও কর্মপদ্ধতিগুলো নি¤œরূপ- এক. তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী ব্যক্তির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠা করা। যেন শত প্রভুর গোলামির জিঞ্জির তথা শিরক থেকে মুক্ত হয়ে সে এক আল্লাহর দাসত্বে বিশ্বাসী হয়ে উঠে। তাওহীদের সঠিক চেতনা ও বিশ্বাস মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে মাথা নত না করতে শিক্ষা দেয়। তাওহীদ আদর্শ ব্যক্তিত্ব গড়তে সহায়তা করে। সর্বোপরী সমাজের একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের মূল প্রেরণা ও ভিত্তি হিসেবে কাজ করে তাওহীদ বা এক আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস। দুই. রিসালাত তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তিনি সর্বশেষ নবী। তাওহীদের বাণীর পাশাপাশি তার রিসালাতের মর্মও ব্যক্তির হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করা। অর্থাৎ আমার সবকিছু আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তবে তা হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পথ ও পাথেয় অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে। এতে আমার প্রবৃত্তির কোন প্রভুত্ব থাকবে না। থাকবে না কোন কায়েমী স্বার্থবাদীদেরও কর্তৃত্ব। তিন. আখেরাতের বিশ্বাসের সরল পাঠ। অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষের মৃত্যু পরবর্তী আরেকটি জীবন রয়েছে। পরকালীন জীবন। যেখানে তার ভাল-মন্দ কাজের প্রতিদান দেয়া হবে। জবাবদিহি করতে হবে প্রত্যেক কৃতকর্মের। সেখানে আছে অনিন্দ্য সুখের জান্নাত। আছে দুঃখ ও কষ্টে ভরা জাহান্নাম। পার্থিব জীবনে আমার কৃতকর্ম ভাল হলে আমলনামা দেয়া হবে ডান হাতে। পুরস্কার হিসেবে আবাসস্থল হবে জান্নাত। কর্মফল ভাল না হলে আমলনামা দেয়া হবে বাম হাতে। শাস্তি হিসেবে আমার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। সুতরাং এই জীবনেই আমাকে সতর্ক ও সচেতন হয়ে জীবন-যাপন করতে হবে। পরকালের প্রয়োজনীয় পাথেয় এখান থেকেই সংগ্রহ করে নিতে হবে। ব্যক্তিগঠনের ক্ষেত্রে এমন বোধ ও বিশ্বাস ব্যক্তির মাঝে প্রতিষ্ঠিত করা ছিল ব্যক্তিগঠনের ক্ষেত্রে রাসূলের অন্যতম নীতি। চার. চারিত্রিক নৈতিকতার প্রশিক্ষণ প্রদান। ব্যক্তিগঠনের ক্ষেত্রে নৈতিকতা শিক্ষাদানের বিকল্প নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে হাতে-কলমে নৈতিক চরিত্র অর্জনের প্রশিক্ষণ দান করেছেন। নীতিহীন কাজ আর নৈতিকতাহীন মানুষের কোন মূল্য নেই। কোন ব্যক্তি জ্ঞানের সাগর বা পন্ডিত হতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি নৈতিক চরিত্রের অধিকারী না হন, তাহলে তিনি সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারবেন না। তাই নৈতিকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারিত্রিক নৈতিকতার দুটি দিক রয়েছে। এক. ইতিবাচক দিক বা অর্জনীয় গুণসমূহ। যথা- তাকওয়া ও খোদাভীতি, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহ ভরসা, বিনয় ও নম্রতা, স্নেহ ও মায়া, দয়া ও সহমর্মিতা, সবর ও শোকর, ক্ষমা ও উদারতা, অল্পেতুষ্টি ও দানশীলতা, ইহসান ও লজ্জাশীলতা, সততা ও সত্যবাদিতা, আমানতরক্ষা ও ন্যায়পরায়ণতা এবং ত্যাগ ও কুরবানী ইত্যাদি। দুই. নেতিবাচক দিক বা বর্জনীয় গুণসমূহ। যথা- অহংকার ও আত্মগর্ব, ক্রোধ ও লৌকিকতা, লোভ ও লালসা, হিংসা ও বিদ্বেষ, গীবত ও পরনিন্দা, চোগলখুরি ও পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যা ও অপবাদ, খেয়ানত ও মন্দ ধারণা, অশ্লীলতা ও কামাসক্তি, কৃপণতা ও জুলুম এবং কোন মুমিনকে অপমান করা ইত্যাদি। চারিত্রিক নৈতিকতার এই অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণগুলোর মাঝে সমন্বয় ঘটানো ছাড়া একজন মানুষ নৈতিক চরিত্রের শীর্ষচূড়ায় পৌঁছতে পারবে না। গঠিত হবে না আদর্শ ব্যক্তিসত্ত্বাও। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের সুদীর্ঘ ২৩ বছর সাহাবায়ে কেরামকে নৈতিকতার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তিরূপে গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি উন্নত চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ উপরোক্ত চারটি নীতি বা কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে আদর্শ ব্যক্তিগঠন করা সম্ভব- একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখিয়েছেন। তার পথকে অনুসরণ করে পরবর্তীতে সাহাবায়েকেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন ও সালাফে সালেহীনগণ ব্যক্তিত্ব গঠন করেছেন। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ব্যক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কয়েকজন ব্যক্তি মিলে গঠিত হয় পরিবার। কয়েকটি পরিবার মিলে গঠিত হয় সমাজ। আর বহু সমাজের সামষ্টিক রূপ হলো-রাষ্ট্র। তাই আদর্শ সমাজ গঠনে ব্যক্তির বিকাশ ও গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ