শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

একটা গ্রহ অন্য গ্রহের থেকে বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা হতে পারে। গ্রহ সাধারণত দুই প্রকার হয়ে থাকে

  • পাথুরে গ্রহ (the terrestrial planets)
  • গ্যাসীয় গ্রহ (the gas giant planets)।

আমাদের সৌরজগতের (মোট ৮ টি গ্রহের মধ্যে) প্রথম চারটি গ্রহ হচ্ছে পাথুরে গ্রহ - যথাক্রমে…

  1. Mercury – বুধ
  2. Venus – শুক্র
  3. Earth – পৃথিবী
  4. Mars – মঙ্গল

আর পরের চারটি গ্রহ হচ্ছে গ্যাসীয় গ্রহ - যথাক্রমে…

  1. Jupiter – বৃহস্পতি
  2. Saturn – শনি
  3. Uranus – ইউরেনাস
  4. Neptune – নেপচুন

এ ছারাও আর এক ধরনের গ্রহ আছে যাদেরকে বলা হয় dwarf planet যেগুলো আসলে কোন গ্রহ নয়। যেমন - প্লুটো,সিরিস,এরিস। (এগুলো কেন গ্রহ নয় সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।)

এখন আসি পৃথিবী কেন অন্য গ্রহ থেকে আলাদা।

আমার মনে হয় আপনি বুঝাতে চেয়েছেন যে পৃথিবী তে প্রাণ আছে তাই পৃথিবী আলাদা।

আমি এই পয়েন্ট এর উপরেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিব।

আর যদি অন্য কোন কারন বুঝিয়ে থাকেন (প্রানের অস্তিত্ব বাদ দিয়ে) তাহলে আমি বলব পৃথিবী অন্য গ্রহের থেকে আলাদা না। কারন পৃথিবীর মত - মঙ্গল এবং শুক্র গ্রহেও বায়ু মণ্ডল আছে। পৃথিবীর মত শনির উপগ্রহ ইউরোপাতেও পানি রয়েছে (ইউরোপা পুরটাই বরফে ঢাকা, যে বরফের কয়েকশ কিলোমিটার নিচে রয়েছে তরল পানি)। এ ছাড়াও বিগত কয়েক বছরে অ্যাস্ট্রোনোমার রা কয়েক হাজার XO প্ল্যানেট এর সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো পুরো পৃথিবীর মতই।

পৃথিবীতে প্রানের অস্তিত্ব ৬ টি কারনে সম্ভব হয়েছে।

  1. আমারদে সৌরজগতের অবস্থান মিল্কি ওয়ের একটি সুবিধা জনক স্থানে।

আমাদের সৌরজগতের আমাদের মিল্কি ওয়ের দুটি স্পাইরাল আর্ম এর মাঝামাঝি অবস্থিত।যেটা আমাদের সূর্যেকে বৃত্তাকার অরবিট এ থাকতে সাহায্য করে। এটি আমাদের সৌরজগতকে ছায়াপথের বিপজ্জনক অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলি এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। আর আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি খুব কম তারা থাকায় মহাকর্ষীয় টান, গামা-রে বার্স্ট, সুপারনোভার কোন আশঙ্কা থাকে না।

2. আমাদের সূর্য দীর্ঘস্থায়ী।

সূর্যের চেয়ে উত্তপ্ত আর বড় তারাগুলো সাধারণত বেশি দিন ধরে জ্বলে না/ খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়। যার ফলে সেই তারাগুলোর কক্ষ পথে থাকা গ্রহগুলো জীবন ধারনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় না। আমাদের সূর্যের মত স্বল্প ভরের এবং কম বয়সী তারাগুলো দীর্ঘদিন ধরে জ্বলে যার ফলে সেই তারাগুলোর কক্ষ পথে থাকা গ্রহগুলো জীবন ধারনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়।

3. পৃথিবী সূর্য থেকে সঠিক দূরত্বে অবস্থিত।

পৃথিবী তথাকথিত গোল্ডিলকস জোনে প্রদক্ষিণ করে, যেখানে গ্রহ এমন তাপমাত্রায় থাকে যা পানিকে গ্রহটির ভূপৃষ্ঠের উপরে তরল অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে। এর বেশি দূরে হলে পানি বরফ হয়ে থাকত, আর কাছে হলে পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ু মণ্ডলে মিশে যেত।

4. চাঁদ পৃথিবীকে স্থির থাকতে সাহায্য করে।

পৃথিবী সূর্যের প্রতি একটু কাত হয়ে ঘুরে এবং এটি ঘুরতে ঘুরতে সময়ের সাথে আরও কাত হয় যেটা পৃথিবীর জলবায়ুকে ৪১,০০০ বছর পর উষ্ণ থেকে বরফের দিকে বদলে দেয়। চাঁদ যদি পৃথিবীকে স্থির না রাখতো তাহলে এই সময় আরো কম হত। যার ফলে পৃথিবীতে জীবন ধারন অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।

5. পৃথিবীর কোর বা কেন্দ্র সচল।

পৃথিবীর কোর বা কেন্দ্র সচল। পৃথিবীর কেন্দ্রে অনেক ধাতব আর যথেষ্ট পরিমাণে তেজস্ক্রিয় উপাদান রয়েছে। এগুলি একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে যা পৃথিবীকে ক্ষতিকারক ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রশ্মি, 'সোলার ফ্লেয়ার' -এর মত আর অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করে। চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে কোন গ্রহের পক্ষে জীবন ধারন করা সম্ভব না। যে গ্রহগুলোর কোর বা কেন্দ্র সচল নয় সেগুলোকে 'ডেড প্ল্যানেট' বলে হয়ে থাকে।

6. পৃথিবীতে একটি ওজোন লেয়ার রয়েছে।

কয়েক মিলিয়ন বছর আগে সাগরে প্রাচীন উদ্ভিদ জাতিও জীব পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন যুক্ত করেছিল যেটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অনেক উপরে ওজোন গ্যাসের একটি লেয়ার তৈরি করেছিল। এই ওজোন গ্যাসের স্তর (ওজোনোস্ফিয়ার) আদি প্রজাতিগুলোকে মহাবিশ্বের প্রাণঘাতী বিকিরণ থেকে রক্ষা করেছিল।

এই ব্যাপার গুলোর জন্যেই পৃথিবীতে প্রানের সঞ্চার সম্ভব হয়েছিল। আর ঠিক এই কারনেই পৃথিবী অন্য গ্রহ থেকে আলাদা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ