আইনগত বাস্তবতা হলো কোর্টে কখনও কোনো বিয়ে হয় না । কারণ, বাংলাদেশের প্রচলিত ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। তাই এক্ষেত্রে যদি কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে বা মেয়ে বিয়ে করতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই কোনো লাইসেন্স প্রাপ্ত কাজীর মাধ্যমে কাবিন রেজিস্ট্রী ও আকদ সম্পাদন করেই তা করতে হবে । আসলে কোর্ট এ যেয়ে ওই সব পাত্র-পাত্রী মূলত পঞ্চাশ টাকার নন - জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা একশত পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে এক ধরণের হলফনামা করে। এটাকেই আমরা সবাই কোর্ট ম্যারিজ বলে অভিহিত করে থাকি। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুমাত্র একটি ঘোষণাপত্র, যেখানে পাত্র এবং পাত্রী এটা ঘোষণা করে যে তারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং কারো দ্বারা কোনো প্রকার প্রভাবিত না হয়ে সম্পূর্ণ নিজেদের ইচ্ছাতেই বিবাহ করে একসাথে বসবাস করতে ইচ্ছুক। এরূপ হলফনামা মূলত এক রকম আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মাত্র, এর বেশি কিছু নয়। সাধারণত, আমাদের সমাজে কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন পরিবারের অমতে বিয়ে করে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় উভয়ের পরিবার বিশেষ করে মেয়েদের পরিবার সেটা মেনে নিতে চায় না। তাই তারা তখন ছেলের বিরুদ্ধে অপহরণপূর্বক ধর্ষণসহ নানা রকম হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে উক্ত ছেলেকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করে। সেক্ষেত্রে কাবিন রেজিস্ট্রির সাথে এমন ঘোষণাপত্র থাকলে কোর্টে উভয়েরই কিছুটা সুবিধা হয়। তবে যতই কোর্টের হলফনামা থাকুক না কেন মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে যদি কাবিন রেজিস্ট্রি না থাকে তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সেই বিবাহের কোনো বৈধ ভিত্তি নেই। এমনকি বাংলাদেশের প্রচলিত মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রিকরণ) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন না করলে ২ বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে, তবে মুসলিম আইন অনুযায়ী উক্ত রেজিস্ট্রিবিহীন বিয়েটি বাতিল হবে না, তাদেরকে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।  খ্রিস্টান আইনে রেজিস্ট্রেশন বিয়ের অন্যতম অংশ ফলে এক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক কিন্তু হিন্দু এবং বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন এখনো ঐচ্ছিক। তারা চাইলে এটা করতে পারে আবার না ও করতে পারে ।

এবার আসি আপনার ভাইয়ের বিষয়টা; হিন্দুমতে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য প্রচলিত রীতিনীতি পালন করাটা আবশ্যক। সাধারণত হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী এই বিবাহের অনুষ্ঠান শুরু হয়; অগ্নিসাক্ষী রেখে সপ্তপদী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ শেষ হয়। তাছাড়া হিন্দুদের জন্য স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট অনুযায়ীও বিবাহ হতে পারে এবং স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের আইনে রেজিস্ট্রি করা যেতে পারে। তবে এই স্পেশাল ম্যারেজ এক্টে বিবাহ করতে হলে বিবাহের অন্তত ২ মাস আগে লাইসেন্স প্রাপ্ত বিবাহ-রেজিস্ট্রারের কাছে নির্দিষ্ট একটি ফরম পুরন করে আবেদনপত্র সহ সেটি জমা করতে হয়। যেহেতু হিন্দু বিবাহের রেজিস্ট্রেশন এখনো ঐচ্ছিক সেই হিসাবে আইনত তাদের করা বিয়েটা আসলে হলফনামা বা একটা ঘোষণাপত্র মাত্র কিন্তু হিন্দু ধর্ম অনুসারে বিয়েটা বৈধ নয়।

প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বাবা-মা যদি ঘরে আটকিয়ে রেখে জোর করে বিয়ে দিতে চায় সেটা ফৌজদারি অপরাধ আর সেটার জন্য আপনার ভাই থানায় অভিযোগ করতে পারেন তবে এ ক্ষেত্রে মেয়েকে আপনার ভাইয়ের পক্ষে কথা বলতে হবে। আর ছেলে-মেয়ে কাউকেই জোর করে বিয়ে দেয়া সম্ভব না কারন বিয়ে বৈধ করতে উভয়ের সম্মতি ও দস্তখত লাগে যেটা কাজী/পুরোহিত/রেজিষ্টার/স্বাক্ষীগনের সামনে জোর করে আদায় করা অসম্ভব। মেয়ের পরিবার আপনার ভাইয়ের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কিছু করতে পারবে না কারন আপনাদের কাছে কোর্টের হলফনামা রয়েছে। মুল কথা হলো যেহেতু মেয়ে এখনো তার পরিবারের অধীনে রয়েছে তাই জোর করে বা আইনীভাবে তাকে বিয়ে করা সম্ভব না, ভাল হয় সামাজিক ও পারিবারিকভাবে আলোচনা করে বিষয়টা মিমাংসা করুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আসসালামু আলাইকুম,

আশা করি আপনার ভাই কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে থাকলে সেটা বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে সঠিক পন্থায় করিয়েছেন।আপনার ভাইকে বলুন কাবিন নামা সংগ্রহ করতে।

যে কোন মাধ্যমে ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ করুন সে ঠিক আছেতো,তার সম্মতি আগের মতই আছেতো?আর যদি সে পরিবার ছেড়ে বের হতে এই মূহুর্তে আগ্রহী হয় তবে আপনি আপনার ভাইকে একজন আইনজীবীর কাছে কাবিন নামা সহ পাঠিয়ে দিন এবং  তার পরামর্শ নিন।

এক্ষেত্রে সাধারন ভাবে আইনি পদক্ষেপ হচ্ছে ফো:কা:বি আইনের ১০০ ধারার মামলা।এই মামলায় ঐ মেয়েকে মাননীয় আদালতে পপুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিয়ে এসে তার মতামত জেনে তার ইচ্ছায় আপনার কাছে পৌছে দিবে এতে ঐ মেয়ের অভিভাবক এর কিছুই করার থাকবে না।(মেয়ে অবশ্যই প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে)।

পরামর্শ :বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন তানাহলে উলটো মিথ্যা মামলায় ফেসে যেতে পারেন।থানায় এই সংক্রান্তে যাওয়া অর্থহীন তবে সাধারণ ডায়েরী করে নিতে পারেন।যেটা বিজ্ঞ আইনজীবী আপনাকে বাতলে দিবেন।

ধন্যবাদান্তে :

মো:এমদাদুল হানিফ

এডভোকেট

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ