রেসাস ফ্যাক্টর-জানাটা খুব জরুরীঃ
রক্তের গ্রুপ নিয়ে এখনও আমরা কিছু মান্ধাতার আমলের ভুল ধারণায় ডুবে আছি। এ ব্যাপারগুলো প্রকট হয়ে উঠে বিয়ের সময়ে এবং এইসব ভুল ধারণার কারণে এখনও অনেক বিয়েও ভেঙে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা, তা হল স্বামী এবং স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ একই হলে তা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। আসলেই কি তাই?
মানুষের তিরিশটি রক্তের গ্রুপ সিস্টেমের মধ্যে রেসাস গ্রুপ সিস্টেম একটি। রেসাস গ্রুপ সিস্টেমে মোট পঞ্চাশটি এ্যান্টিজেন আছে, যার মধ্যে পাঁচটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ--D, C, c, E, এবং e। রেসাস ফ্যাক্টর অর্থাৎ Rh positive এবং Rh negative বলতে সাধারণত D এ্যান্টিজেনকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
একজন ব্যক্তি Rh positive অথবা Rh negative, যে কোনটাই হতে পারে। এটা গুরুত্ব বহন করে একমাত্র গর্ভকালীন সময়েই। যদি মা Rh- হয়ে থাকেন তবে জানাটা খুবই জরুরী বাবাও Rh- কি না। কারণ তা না হলে খুব জোর সম্ভাবনা থাকে যে গর্ভের সন্তানও Rh+ হবে। আর তখনই শুরু হবে সমস্যার।
যখনই Rh- রক্ত কোন Rh+ রক্তের সংস্পর্শে আসবে, তার কাছে তা হবে অজানা এক বস্তু। আর এই অজানা বস্তু থেকে নিজেকে বাঁচাতে সে কিছু এ্যান্টিবডি তৈরি করবে, যা Rh+ কে ধ্বংস করে ফেলবে। যেমনটা করে থাকে ফ্লু'র ভাইরাসকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে। Rh- ব্যক্তির রক্তে একবার Rh+ এ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা সেখানেই রয়ে যায়।
আগেই বলেছি মা যদি Rh- হোন এবং বাবা Rh+, তাহলে বাচ্চার Rh+ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তারমানে হল যখনই মা'র রক্ত প্লাসেন্টার মাধ্যমে বাচ্চার রক্তের সংস্পর্শে আসে তখনই মা'র শরীরে Rh+ এর বিরুদ্ধে এ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে। এটা সাধারণত প্রথমবার গর্ভধারণের পরেই হয়ে থাকে, যখন বাচ্চার Rh+ রক্ত মা'র রক্তের প্রবাহে মিশে যায়। এমনকি যদি গর্ভপাত হয়ে যায়, বা মা কোন কারণে গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলেন তাহলেও হতে পারে। তখন মা'র রক্ত Rh+ রক্তের বিপরীতে এ্যান্টিবডি তৈরি করে। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে এটা কোন ক্ষতির কারণ হয় না, তবে এই এ্যান্টিবডি মায়ের শরীরে রয়েই যায়। দ্বিতীয়বার মা যখন গর্ভধারণ করেন এবং দ্বিতীয়বারও যদি বাচ্চাটি Rh+ হয়, তবে দ্বিতীয় বাচ্চাটি পড়ে যাবে ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে। মা'র রক্তে উপস্থিত Rh+ এ্যান্টিবডি বাচ্চার রক্তে প্রবাহিত হবে এবং বাচ্চার রক্তের লোহিত কণিকার ক্ষতি সাধন, এমনকি ধ্বংসও করে ফেলতে পারে। এর ফলে বাচ্চা রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারে, জন্ডিসে আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি এরচেয়ে জটিল কোন পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হতে পারে।
তবে আশার কথা হল, রেসাস ফ্যাক্টরের এই সমস্যা প্রায় পুরোপুরিই দূর করা সম্ভব। Rh- মাকে Anti-D নামে একটি ইনজেকশন নিতে হবে রুটিনমাফিক, প্রথম বাচ্চা জন্মের পরপরই অথবা প্রথমবার গর্ভপাতের পরে। এই Anti-D মা'র রক্তে উপস্থিত Rh+ রক্তকোষকে ধ্বংস করে, যাতে এগুলো আর কোন এ্যান্টিবডি তৈরি করতে না পারে। কোন কোন সময়ে এটা গর্ভকালীন সময়েও দেয়া হয়ে থাকে, সাধারণত ২৪তম থেকে ৩৬তম সপ্তাহের মধ্যে। এবং প্রথমবার গর্ভকালীন সময়েও একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর মা'র রক্ত পরীক্ষা করা হয় দেখার জন্য তার রক্তে কোন এ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে কি না। সে সময় সাধারণত সেটা খুব কম পরিমাণেই থাকে। সুতরাং এর প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু যদি বেশি পরিমাণে তৈরি হয়ে থাকে, যা বাচ্চার জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে, তাহলে গর্ভে থাকাকালীন অবস্থাতেই বাচ্চার শরীরের রক্ত পরিবর্তন করে ফেলা উচিত, অথবা বাচ্চা জন্মানোর সাথে সাথেই। একমাত্র এর মাধ্যমেই একটি সুস্থ স্বাভাবিক শিশু পাওয়া সম্ভব।
রক্তের গ্রুপ নিয়ে এইসব অকারন সংস্কার দূর করে একটু সচেতন হলেই অনেক জটিলতা এড়ানো যায়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট