মুসলিম রা কি টেটু করতে পারবে??পারলে কোথায় করা যাবে??কি রকম করা যাবে?না করা গেলে কেন করা জাবেনা??সমসসা কি?
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

আর ট্যাটুর আরবী শব্দ হলো ﻭﺷﻢ . আরবী অভিধানগুলোতে এর পরিচয় এভাবে দেয়া হয়েছে, ﻫُﻮَ ﻏَﺮْﺯُ ﺍﻟْﺠِﻠْﺪِ ﺑِﺈِﺑْﺮَﺓٍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺮُﺝَ ﺍﻟﺪَّﻡُ ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺬَﺭُّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻧِﻴﻠَﺔٌ ﺃَﻭْ ﻛُﺤْﻞٌ ﻟِﻴَﺰْﺭَﻕَّ ﺃَﻭْ ﻳَﺨْﻀَﺮَّ . - ﺭَﺩّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺘَﺎﺭِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺪَّﺭِّ ﺍﻟْﻤُﺨْﺘَﺎﺭِ 5 / 239 ، ﻭَﺍﻟْﻔَﻮَﺍﻛِﻪ ﺍﻟﺪَّﻭَﺍﻧِﻲ 2 / 411 ، ﻭَﺣَﺎﺷِﻴَﺔ ﺍﻟْﺠُﻤَﻞ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﺮْﺡِ ﺍﻟْﻤَﻨْﻬَﺞِ 1 / 416 ، 417 ﻭَﺍﻟْﻤُﻐْﻨِﻲ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺸَّﺮْﺡِ ﺍﻟْﻜَﺒِﻴﺮِ 1 / 77 . ﺍﻟﻤﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﻔﻘﻬﻴﺔ ﺍﻟﻜﻮﻳﺘﻴﺔ – ‏( 43 / 157 ) সবমিলিয়ে যা স্পষ্ট হয় তা হলো, শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করা। এ রকম ট্যাটু বা উল্কি সাধারণত পার্মানেন্ট বা স্থায়ী হয়ে থাকে। এবং সহজে ওঠানো যায় না। এ ধরণের ট্যাটু বা উল্কি অধিকাংশ ফকীহদের নিকট হারাম। কেননা সহীহ হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ১. ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻟَﻌَﻦَ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻮَﺍﺻِﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻮْﺹِﻟَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻮَﺍﺷِﻤَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻮْﺵِﻣَﺔَ যেসব মহিলা নকল চুল ব্যবহার করে এবং যারা অন্য মহিলাকে নকল চুল এনে দেয়, যেসব মহিলা উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, রাসূল স. তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারী : ৫৫৯৮, মুসলিম : ৫৬৯৩) ২. ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﻟﻌﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻮﺍﺷﻤﺎﺕ ﻭﺍﻟﻤﺴﺘﻮﺷﻤﺎﺕ ﻭﺍﻟﻤﺘﻨﻤﺼﺎﺕ ﻭﺍﻟﻤﺘﻔﻠﺠﺎﺕ ﻟﻠﺤﺴﻦ ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺍﺕ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ যেসব মহিলা সৌন্দর্য্যের জন্য উল্কি অঙ্কন করে এবং যাদের জন্য করে, যেসব মহিলা ভ্রু উৎপাটন করে এবং দাঁত ফাঁকা করে, আল্লাহ তা’আলা তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী : ৫৬০৪) ট্যাটুর মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়। যা আল্লাহ অপছন্দ করেন। ক্বিয়ামতের দিন তিনি এসব লোককে তাঁর সামনে তাঁর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করতে বলবেন। তিনি বলেন, ﺇِﻥ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻧِﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﺇِﻧَﺎﺛًﺎ ﻭَﺇِﻥ ﻳَﺪْﻋُﻮﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﺷَﻴْﻄَﺎﻧًﺎ ﻣَّﺮِﻳﺪًﺍ – ﻟَّﻌَﻨَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۘ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟَﺄَﺗَّﺨِﺬَﻥَّ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻙَ ﻧَﺼِﻴﺒًﺎ ﻣَّﻔْﺮُﻭﺿًﺎ – ﻭَﻟَﺄُﺿِﻠَّﻨَّﻪْﻡُ ﻭَﻟَﺄُﻣَﻨِّﻴَﻦّْﻢُﻫَ ﻭَﻟَﺂﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﺒَﺘِّﻜُﻦَّ ﺁﺫَﺍﻥَ ﺍﻟْﺄَﻧْﻌَﺎﻡِ ﻭَﻟَﺂﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺘَّﺨِﺬِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻭَﻟِﻴًّﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺧَﺴِﺮَ ﺧُﺴْﺮَﺍﻧًﺎ ﻣُّﺒِﻴﻨًﺎ - তারা আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শুধু নারীর আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। শয়তান বললঃ আমি অবশ্যই তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব। তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়। (৪:১১৭-১১৯) এসব হাদীসের আলোকে অধিকাংশ ফকীহদের মতে ট্যাটু হারাম। পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই। (আল মাউসুয়াতিল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েইতিয়্যাহ তে ﻭﺷﻢ শব্দের অধীনে বর্ণিত এবং নিম্নোক্ত সূত্র সম্বলিত। ﺣَﺎﺷِﻴَﺔ ﺍﺑْﻦ ﻋَﺎﺑِﺪِﻳﻦَ 5 / 239 ، ﻭَﺍﻟْﻔَﻮَﺍﻛِﻪ ﺍﻟﺪَّﻭَﺍﻧِﻲ 2 / 411 ، ﻭَﺍﻟْﻤَﺠْﻤُﻮﻉ 1 / 296 ، ﻭَﻛَﺸَّﺎﻑ ﺍﻟْﻘِﻨَﺎﻉ 1 / 81 ، ﻭَﻓَﺘْﺢ ﺍﻟْﺒَﺎﺭِﻱ 10 / 306 ، ﻭَﺩَﻟِﻴﻞ ﺍﻟْﻔَﺎﻟِﺤِﻴﻦَ 4 / 493 .) অতএব সৌন্দর্য্যের জন্য ট্যাটু আঁকা হারাম। কেননা এতে আল্লাহর সৃষ্টিতে হস্তক্ষেপ ও পরিবর্তন করা হয়। মানুষের দেহের মালিক মূলত আল্লাহ তা’আলা। মানুষ তার দেহের মালিক নয়। তবে যদি কখনো চিকিৎসার জন্য ট্যাটু আঁকার প্রয়োজন পড়ে, তখন চিকিৎসার জন্যই কেবল তা বৈধ হবে। উল্লেখ্য যে, স্থায়ী ট্যাটুর সাথে সাদৃশ্য থাকায় অনেকে চামড়ার ক্ষত ছাড়া কৃত বিভিন্ন অঙ্কনকেও ট্যাটু বলে থাকেন। এগুলো অস্থায়ী এবং কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর এমনিতেই মুছে যায়। হাদীস ও ফকীহদের ভাষ্য অনুযায় যা বোঝা যায় তা হলো, এগুলো হারাম নয়। তবে যদি এমন হয় যাতে চামড়ায় পানি ঢুকতে বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে তা অঙ্কন করা অনুচিৎ। কেননা অযুর অঙ্গতে হলে এগুলো সহ অযু করা যাবে না। আর অন্য কোথাও হলে ফরয গোসল আদায় করা যাবে না। ফলে সবসময় অপবিত্র শরীর বয়ে বেড়াতে হবে। আর ট্যাটুর সাথে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুভূতি, অশ্লীল ফ্যাশন ইত্যাদি যুক্ত থাকায় একজন পরহেযগার মুসলিম হিসেবে সম্পূর্ণভাবে এসব পরিত্যাগ করা উচিৎ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ