ফরজ গোসলের নিয়ম সহিহ হাদিস অনুসারে সংক্ষেপে দেওয়া হল। ১। মনে মনে গোসলের নিয়ত করা (নিয়ত পড়া নয়)। ২। ‘বিসমিল্লাহ’ বলে গোসল শুরু করা ৩। দুই হাত কবজি পর্যন্ত ধোওয়া (বুখারী ২৪৮) ৪। পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে লজ্জাস্থান পরিষ্কার করা (বুখারী ২৫৭) ৫। বাম হাতটি ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নেওয়া (বুখারী ২৬৬) ৬। নামাজের ওজুর মতো ভালভাবে পূর্ণরূপে ওজু করা। (দুই হাত তিনবার ধোওয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া, মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধোওয়া। মাথা মাসেহ করতে হবে না।) এক্ষেত্রে শুধু পা দুটো বাকি রাখলেও চলবে, যা গোসলের শেষে ধুয়ে ফেলতে হবে। (বুখারী ২৫৭, ২৫৯, ২৬৫) ৭। মাথায় পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভালভাবে আঙ্গুল দিয়ে ভিজানো। (বুখারী ২৫৮) মহিলাদের বেনী না খুলেও গোড়া ভালভাবে ভিজলেই হবে। (মুসলিম ৩৩০) ৮। পুরো শরীরে পানি ঢালা; প্রথমে ডানে, পরে বামে। (বুখারী ১৬৮) ৯। গোসলের জায়গা থেকে একটু সরে গিয়ে দুই পা ধোওয়া।(বুখারী ২৫৭) Courtesy: QuranerAlo.com
ল করেছেন ঠিক সেইভাবে গোসল করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেইভাবে গোসল করেছেনঃ ১. পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করার “নিয়ত” করে নিতে হবে। এরজন্য কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে কিছু বলতে হবেনা। শুধু গোসল শুরু করার আগে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য গোসল করছি - এই বিষয়টা অন্তরে খেয়াল থাকলেই হবে। ২. “বিসমিল্লাহ” বলে শুরু করতে হবে। ওযু বা গোসলের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা কিছু আলেমের মতে সুন্নত, অনেক আলেমের মতে ফরয। তাই সবসময় চেষ্টা করতে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলেই ওযু/ গোসল শুরু করার জন্য। আর বাথরুমে ওযু করও বিসমিল্লাহ বলবে। উল্লেখ্য, শুধু “বিসমিল্লাহ” বলাই সুন্নত, বিসমিল্লাহ-হির রাহমানীর রাহীম – পুরোটা নয়। ৩. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ২বার অথবা ৩বার ধৌত করতে হবে। দুই হাত কবজি পর্যন্ত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত দেওয়া যাবেনা। ৪. তারপর নাপাকী সংশ্লিষ্ট স্থান এবং লজ্জাস্থান বাঁ হাতে দিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করে নিতে হবে। ৫. এর পরে বাঁ হাত মাটিতে ঘষে বা সাবান দিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। ৬. এরপর পরিপূর্ণরূপে সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী ওযু করে নিবে। যেহেতু আমাদের প্রচলিত বাথরুমগুলো পরিষ্কার থাকে, তাই পূর্ণাংগ ওযু করে নিবে, ওযুর সর্বশেষ পাও ধুয়ে নিবে। কিন্তু গোসল করার জায়গাটা যদি মাটির হয় বা এমন ময়লা থাকে যাতে করে গোসল করার সময় পায়ে ময়লা লাগে, তাহলে ওযুর পা ধৌত করবেনা। গোসলের সবার শেষে পায়ে পানি ঢেলে পায়ের ময়লা পরিষ্কার করবে। ওযুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ ক. এক আজলা পানির কিছুটা মুখে নিয়ে কুলি করবে আর বাকি অংশ নাকে পানি দিবে। কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া একবার পানি নিয়েই করবে, আলাদা আলাদা নয়। ওযুর বিস্তারিত বর্ণনায় বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে। খ. মুখমন্ডল ধৌত করবে ৩ বার। কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতি পর্যন্ত ও থুতনীর নিচ পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। গ. কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত। ঘ. মাথা মাসা করবে একবার ঙ. টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান পা পরে বাম পা। ওযুর পূর্ণাংগ বর্ণনা জানার জন্য এই নোটটা পড়ুনঃ কমেন্টস এ দেওয়া আছে। ৭. ওযু শেষ করে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবে। ফরয গোসলের সময় মহিলাদের মাথার বেনী খুলতে হবে না। মাথায় কেবল তিন আজলা পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভেজালেই চলবে। তবে মহিলাদের ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসলের সময় বেনী খোলা মুস্তাহাব বা উত্তম। ৮. সবশেষে সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। প্রথমে শরীরের ডান দিকে, পরে বাঁ দিকে। এটাই হচ্ছে গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি। উল্লেখ্য, এইভাবে গোসল করলে এর পরে নামায পড়তে চাইলে আলাদা করে ওযু করতে হবেনা, যদিনা গোসল করার সময় ওযু ভংগের কোনো কারণ ঘটে থাকে। ওযু ভংগের কারণ যদি ঘটে তাহলে গোসল শেষ করে শুধু ওযু করবে, আবার গোসল করে গায়ে পানি ঢালতে হবেনা। আর খেয়াল রাখতে হবে, গোসলের জন্য ওযু করার পরে কোনো কিছুর আড়াল ব্যতীত লজ্জাস্থান স্পর্শ করা যাবেনা। কারণ কামনা সহকারে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভেঙ্গে যায়। আর কামনা ব্যাতীত, এমনিতে স্পর্শ করলে ওযু ভাংবেনা। কিন্তু তার জন্য মুস্তাহাব বা উত্তম হচ্ছে আবার ওযু করে নেওয়া। গোসলের পরে কাপড় চেঞ্জ করলে বা হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভাংবেনা, এটা ওযু ভংগের কারণ না। যেই হাদীসগুলো থেকে দলীল নেওয়া হয়েছেঃ বুখারীঃ ১, ১৬৮, ২৪৩, ২৪৮, ২৪৯, ২৫৭, ২৬৬, ২৮০, ২৮১। মুসলিমঃ ৬২৫, ৬২৮, ৬৩১, ৬৫০, ৬৫৬, ৬৭০, ৬৭৩। নাসায়ীঃ ৪২২, ইবনে মাজাহঃ ৬৩৭, আবু দাউদঃ ২৪৩।