শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
manik

Call

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 
"কোন মোমিন ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার একটি অভ্যাস মন্দ হলে, অপর আচরণে তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।"[৩৩] 
তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা তার কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে তোমার সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া, নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে অনুগত না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
"ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে পরিত্যাগ কর না।" এতে যদি সে শুধরে যায়, ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার থেকে বিছানা আলাদা কর। 
আল্লাহ তাআলা বলেন, 
"যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর, তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর, প্রহার কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না।"[৩৪]

"তাদের প্রহার কর" এর ব্যাখ্যায় ইবনে কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া ও তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও তারা নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন তোমাদের অধিকার রয়েছে তাদের হালকা প্রহার করা, যেন শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। 
জাবের রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন, 
"তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর, তারা তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তোমরা তাদের মালিক নও, আবার তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া, যাদের তোমরা অপছন্দ কর। যদি এর বিপরীত করে, এমনভাবে তাদের প্রহার কর, যাতে শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। তোমাদের কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক তাদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা।" 
প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার বলেছেন। হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ যে প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।"[৩৫] চেহারাতে প্রহার করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চেহারায় আঘাত করবে না।
 
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার :
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে, তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা। 
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত, 
হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি বললাম, "আল্লাহর রাসূল, আমাদের উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও খেতে দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার বিছানা আলাদা করে দেবে না।" অন্য বর্ণনায় আছে, "তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।"[৩৬]
বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের কিতাবে 
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম, তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ খবর কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল। তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা রাখ, রোজা ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ তোমার উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।"[৩৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, 
যার দু'জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে একজনের প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের দিন সে একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।"[৩৮]
সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। এখন আমরা আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম, মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না হয়ে যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে, স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়। আমাদের উদ্দেশ্য কারো অনিয়মকে সমর্থন না করা এবং এক পক্ষের অপরাধের ফলে অপর পক্ষের অপরাধকে বৈধতা না দেয়া। বরং আমাদের উদ্দেশ্য প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য সচেতন করা।
 
 
পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের কল্যাণকামী হোন। 
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
"তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ, তাদের পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি সবচে' বেশি বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও, ভেঙে ফেলবে। আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।"[৩৯]
নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া, হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া। আশা করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের সর্বশেষ কথা, "আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি দু-জাহানের পালনকর্তা।"
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ