হজ্জ-এর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ:
হজ্ব আরবি শব্দ। অর্থ নিয়ত করা, দর্শন করা, সঙ্কল্প করা, এরাদা করা, গমন করা, ইচ্ছা করা, প্রতিজ্ঞা করাসহ, কোনো মহৎ কাজে ইচ্ছা করা। আর শরিয়তের পরিভাষায় নির্দিষ্ট দিনে নিয়তসহ ইহরামরত অবস্থায় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা এবং বায়তুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা।
আবার কেউ বলেন,  জিলহজ্বের ৯ তারিখ ইহরাম বেঁধে আরাফাতের মাঠে অবস্থানসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত কয়েকটি আমল যথাযথভাবে আদায় করে কাবা গৃহ তাওয়াফ করাকে হজ্ব বলে।
আল-ফিকাউল ইসলামী গ্রন্থে বলা হয়েছে, “নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থান যিয়ারত করা হল হাজ্জ”।
শরহুল বিকায়া গ্রন্থাগার বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট স্থান যিয়ারত করার নাম হল হাজ্জ”।
আল-কামসুল ফিকহ গ্রন্থে আছে, “আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটা নির্ধারিত সময়ে মক্কা মুয়াযযামার বায়তুল হারামে গমনের নিয়ত পোষণ করাই হল হাজ্জ”।
হজ্জের ফরজ ৩টি:
১· ইহরাম বাঁধা
২· জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজরের পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত্ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।
৩· তাওয়াফে জিয়ারাত অর্থাৎ মক্কা শরীফ পৌঁছার পর সর্বপ্রথম কাজটি হলো চারবার কাবাগৃহটি প্রদক্ষিণ করা আবার হজ্বের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরার সময় সর্বশেষ কাজ হলো তিনবার কাবাগৃহ প্রদক্ষিণ করে রওনা হওয়া।
হজ্জের ওয়াজিব হল ৭টি:
১· সাফা ও মারওয়া উভয় পাহাড় সাতবার প্রদড়্গিণ করা।
২· মুজদালিফায় রাত যাপন করা।
৩· মিনায় তিনটি জামরাতে তিনদিনে প্রত্যেক জামরাতে ৭টি করে ৭*৭=৪৯টি পাথর শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপ করা,
৪· মিনার ময়দানে কোরবানি করা,
৫· মাথা মুণ্ড করা,
৬· ফরজ তাওয়াফ শেষে ৩ চক্কর দেয়া,
৭· বিদায়ী তাওয়াফ করা
হজ্জের সুন্নত:
হজ্জের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
১।  মিকাতের বাইরে থেকে আগত ইফরাদ ও কেরান হজ্জ্ব পালনকারীর জনু তাওয়াফে কুদুম করা। (ইফরাদ হজ্জ্ব পালনকারী মক্কা পৌছে এবং কেরা হজ্জ্ব পালনকারী ওমরার কার্য সসম্পাদন করে মাথার চুল না কেটেই তাওয়াফে কুদুম করবে।
২।  তাওয়াফে কুদূমের পর যদি হজ্জ্বের সায়ী করার ইচ্ছা থাকে, তবে তাতে রমল ও ইযতিবা করা (আর তাওয়াফে কুদুমের পরে হজ্জ্বের সায়ী করার ইচ্ছা না থাকলে তাতে রমল ও ইযতিবা করতে হবে না।)
৩।  সাফা মারওইয়ায় সায়ীর সময় সবুজ দুপিলারের মধ্যবর্তী স্থান পুরুষের জন্য দৌড়ে অতিক্রম করা এবং অবশিষ্ট স্থান হেঁটে চলা।
৪।  ৮ই জিলহজ্জ বাদ ফজর মিনার উদ্দেশ্যে রওয়া হওয়া এবং তথায় পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামায) আদায় করা। (ভিড় এড়াবার লক্ষ্যে বা অন্য কোনো কারণে ফজরের পূর্বে ও রাতে রওনা দেয়াও জায়েজ।)
৫।  ৯ই জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা হতে আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া। পূর্বে ও রাতে যাওয়াও  দিবাগত রাত্রে মুযদালিফায় থাকা।(কোনো অসুবিধার কারণে বা  ভিড় এড়াবার লক্ষ্যে বা অন্য কোনো কারণে ফজরের পূর্বে ও রাতে রওনা যাওয়াও জায়েজ।)
৬।  আরাফা থেকে সুর্যাস্তের পর ধীরস্থীরভাবে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।
৭।  ৯ই যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুযদালিফায় এসে রাতযাপন করা। (উল্লেখ্য, মুযদালিফায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই কিছুক্ষণ উকুফ বা অবস্থান করা ওয়াজিব, সুবহে সাদিকের পূর্বে অবস্থান করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।)
৮।  আরাফার ময়দানে গোসল করা।(তবে পানির পরিমাণ বুঝে গোসল করা উচিত। সামান্য পানি দিয়ে গোসল করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। কেউ কেউ আরাফায় পৌছে প্রচুর পানি অপচয় করে গোসল করে ও কাপড় ধুয়ে পানি শেষ করে ফেলে। ফলে কোনো কোনো ক্যাম্পে অযু, এস্তেঞ্জা ও খাবার পানি নিয়ে সকলকে সংকটে পড়তে হয়।)
৯।  ৮ই যিলহজ্জ দিনগত রাতসহ মিনায় অবস্থানের দিনগুলোয়তে রাতযাপনও মিনাতে করা। উক্ত সুন্নতসমূহ থেকে কোনো সুন্নত স্বেচ্চায় ছেড়ে দেয়া ঠিক নয়। অবশ্য ছেড়ে দেয়ার দ্বারা সদকা ইত্যাদিও ওয়াজিব হবে না, তবে সাওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন আমলের মাঝে আরো অনেক সুন্নত রয়েছে, তার উল্লেখ যথাস্থানে রয়েছে।


সূত্র: নূরুল ইজাহ, ১/৭৪-৭৫

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ