১)স্বপ্নে আপনজন মরিতে দেখা এর মানে হল স্ব্যাস্থ উন্নতির আলামত।
২)স্বপ্নে আপনজনকে দাফন করতে দেখা এর মানে হল অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়ার আলামত ।
৪৪. তারা (মিসরের রাজার পারিষদবর্গ) বলল, এটা অর্থহীন কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। এ ধরনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই।
(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪৪)
তাফসির :
আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মিসরের অধিপতি স্বপ্নে দেখেছেন সাতটি মোটাতাজা গাভিকে সাতটি দুর্বল শীর্ণকায় গাভি খেয়ে ফেলছে। এ স্বপ্ন দেখার পর রাজা এক অজানা ভয়ে শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও এর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পারিষদবর্গের প্রতি নির্দেশ জারি করেন। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, রাজদরবারের অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত সভাসদরা রাজার স্বপ্নকে কল্পনাপ্রসূত আখ্যা দিয়ে তা ব্যাখ্যার অযোগ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করে। এতে বোঝা যায়, সবাই সব স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারে না। স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা সবার কাজ নয়।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, স্বপ্নের বিভিন্ন ধরন আছে। কোনো কোনো স্বপ্ন ভবিষ্যতের বার্তা বহন করে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেয়ামতের কাছাকাছি সময়ে খুব কম স্বপ্নই অসত্য হবে।
এটা এ জন্যই হবে যে সে যুগটা নবুয়তের সময় ও প্রভাব থেকে অনেক দূরবর্তী হবে। ফলে ঈমানদারদের সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হবে। এটি তাদের কাছে সুসংবাদ বয়ে আনবে কিংবা তাদেরকে তাদের ঈমানের ওপর ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে। ’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৬৪৯৯; মুসলিম শরিফ, হাদিস : ৪২০০)
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরিন রহ. বলেন : যদি স্বপ্নে কেউ মৃত ব্যক্তিকে দেখে তাহলে তাকে যে অবস্থায় দেখবে সেটাই বাস্তব বলে ধরা হবে। তাকে যা বলতে শুনবে, সেটা সত্যি বলে ধরা হবে। কারণ, সে এমন জগতে অবস্থান করছে যেখানে সত্য ছাড়া আর কিছু নেই।
যদি কেউ মৃত ব্যক্তিকে ভাল পোশাক পরা অবস্থায় বা সুস্বাস্থের অধিকারী দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সে ভাল অবস্থায় আছে। আর যদি জীর্ণ, শীর্ণ স্বাস্থ্য বা খারাপ পোশাকে দেখে তাহলে বুঝতে হবে, ভাল নেই। তার জন্য তখন বেশি করে মাগফিরাত কামনা ও দোআ-প্রার্থনা করতে হবে।
কয়েকটি উদাহরণ :
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, বিদ্রোহীরা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু- এর বাসভবন ঘেরাও করল, তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি গত রাতে স্বপ্ন দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উসমান আমাদের সাথে তুমি ইফতার করবে।
আর ঐ দিনই উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হলেন।
(আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)
আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আবু মূসা আশ আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, আমি একটি পাহাড়ের কাছে গেলাম। দেখলাম, পাহাড়ের উপরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন ও পাশে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার হাত দিয়ে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর দিকে ইশারা করছেন।
আমি আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ স্বপ্নের কথা শুনে বললাম, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। আল্লাহর শপথ! ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তো মারা যাবেন! আচ্ছা আপনি কি বিষয়টি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লিখে জানাবেন? আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তার জীবদ্দশায তার নিজের মৃত্যু সংবাদ জানাব, এটা কি করে হয়?
এর কয়েকদিন পরই স্বপ্নটা সত্যে পরিণত হল। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হয়ে গেলেন।
কারণ, মৃত্যু পরবর্তী সত্য জগত থেকে যা আসে, তা মিথ্যা হতে পারে না। সেখানে অন্য কোনো ব্যাখ্যা দেয়ার সুযোগ নেই। (আল কাওয়ায়েদুল হুসনা ফী তাবীলির রুইয়া : শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আস সাদহান)