শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Emranhasmi

Call
১৮৭২ সাল থেকে শুরু করে ১৪২ বছর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সর্ববৃহত্ অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থলে সম্প্রতি আইএমএফ-এর মতে চীন পৃথিবীর এক নম্বর অর্থনীতির শক্তি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। অর্থনীতির যে মানদণ্ডে আইএমএফ চীনকে এক নম্বর হিসাবে বিবেচনা করেছে তাতে চীনের অর্থনীতির পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ১৭.৬ ট্রিলিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ১৭.৪ ট্রিলিয়ন। আইএমএফ-এর মতে বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হিসাবে চীনের ১৬.৪৮% এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হচ্ছে ১৬.২৮%। আইএমএফ-এর এই হিসাব জীবনমানের খরচের ভিত্তিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সামর্থ্যকে নির্দেশ করে থাকে। প্রশ্ন থেকে যায়, কেবল ক্রয়ক্ষমতা দ্বারা অর্থনৈতিক উন্নতির সামগ্রিক অবস্থান পরস্ফুিট হওয়া সম্ভব কি? কেননা অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেবল মোট দেশজ উত্পাদনের প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে না বরং মৌলিক অধিকারসমূহের উন্নতি, সামাজিক কল্যাণ ও ন্যায়পরায়ণতা এবং সর্বোপরি মানুষের সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে থাকে। উপরন্তু চীন দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য যে রপ্তানি ও বিনিয়োগ নীতির উপর জোর দিয়েছে তা কতখানি স্থিতিশীল? ২০০৫ সালেও চীনের অর্থনীতির পরিধি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অর্ধেক। আইএমএফ প্রাক্কলন  করেছে যে, চীনের অর্থনীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ২০% বেশি হবে ২০১৯ সাল নাগাদ। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের সর্ববৃহত্ অংশীদার, কেননা তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১.২৭ ট্রিলিয়ন ডলার ট্রেজারি বন্ড ধরে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের দাম কমানোর অভিযোগ করেছে এই বলে যে তারা সবসময়ে তাদের মুদ্রা ইউওয়ান রেনমিনবিকে ব্যবহার করেছে। আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রাতে চীন এবং রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বদলে স্ব স্ব মুদ্রা ব্যবহার চলতি বত্সরের প্রথমদিকে শুরু করে। তারপরও চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতখানি স্থায়িত্ব লাভ করতে পারে?
চীনের বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ১.৮৬ ট্রিলিয়ন যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ২.৪৫ ট্রিলিয়ন। চীনের রপ্তানি লব্ধ আয়ের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ১.৯৭ ট্রিলিয়ন যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ১.৫৬ ট্রিলিয়ন। চীনের মাথাপিছু মোট দেশজ সম্পদের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন ডলার ৯,১০০ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ৫১,৭০০। চীনের জিডিপি-র প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ৭.৭% যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি-র প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে ২.৮%। চীনে ১৩.৮% লোক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫.১% লোক দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে থাকে। চীনে সরকারি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে জিডিপি-র ৩১.৭% যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি-র ৭০%। চীনে বেকারত্বের হার হচ্ছে ৬.৫% এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৮.১%। (উত্সঃ আইএমএফ)। পর্যালোচনা করলে উপাত্তগুলোর অধিকাংশ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, চীন ধীরে ধীরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলোর অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ভাল অবস্থানে রয়েছে। এখন বিতর্ক হতে পারে চীনের অর্থনীতির যে অগ্রযাত্রা তা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল হবে কি না? এই বিতর্কটি আরো উস্কে যাচ্ছে এই কারণে যে, আশির দশকে জাপান পৃথিবীর এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে পরিগণিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ই তার অর্থনৈতিক অবস্থান সুসংহত করতে পেরেছিল। চীনকে এক নাম্বার অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বীকৃতি পেতে হবে।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ