গোড়ালি ব্যথা কী?

আমাদের শরীরের সমস্ত ভার গোড়ালির মাধ্যমে মাটিতে চলে যায় এবং আমরা হাঁটা চলাফেরা করতে পারি। আমাদের মধ্যে অনেকেই পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ভুগছেন। কেউ কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটিতে পা ফেললে গোড়ালিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। আস্তে আস্তে কয়েক কদম পা ফেললে ব্যথা কিছুটা কমে যায়। আবার কারও কারও মনে হয় পায়ের গোড়ালিতে সুচ ফুঁড়ে আছে এই রকম ব্যথা। তবে যে ধরনের ব্যথাই হোক না কেন গোড়ালি ব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

পায়ের গোড়ালির ব্যথার অন্যতম কারণ প্লান্টার ফ্যাসাইটিস। এতে পায়ের তলায় বিশেষ করে হিল বা গোড়ালিতে খোঁচা দেওয়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেললে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ব্যথা কমে আসে।

পায়ের সামনের দিকে ছোট ছোট হাড় পেছনের দিকে গোড়ালির হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে যে ব্যান্ডের মতো লিগামেন্ট দিয়ে, তাকে বলে প্লান্টার ফাসা। শরীরের ওজন যেন সরাসরি পায়ের হাড়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারে, সে জন্য এই ব্যান্ড কাজ করে। এই ব্যান্ডে প্রদাহ হলে গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।

পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ

পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ জেনে নেয়ার আগে এর গঠন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। আমাদের পায়ের সামনের দিকে কিছু ছোট ছোট হাড় পেছনের দিকে গোড়ালি বা হিলের একটি হার এবং মাঝে কিছু হাড় নিয়ে গঠিত। এই হাড়গুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে লিগামেন্টস। সামনের এবং পেছনের হারের সঙ্গে একটি ব্যান্ডের মতো জিনিস দিয়ে সংযুক্ত থাকে। যেটাকে বলে প্লান্টার ফাসা।

আমাদের শরীরের ওজন যেন সরাসরি আমাদের পায়ের হাড়ের ওপরে চাপ প্রয়োগ করতে না পারে এ জন্য এই ব্যান্ডটি আমাদের শক এবজরবারের মতো কাজ করে। এই ব্যান্ডে যদি কোনো ইনফ্লামেশন হয় তাহলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। আমাদের শরীরের ওজন বেশি হলে বা দীর্ঘ মেয়াদী কোনো চাপ থাকলে এই ব্যান্ড বা ফাসাতে ছোট্ট টিয়ার বা ইনজুরি হয়। প্রথমদিকে ব্যথা কম থাকায় এটা অনুভুত কম হয় এবং হাঁটাহাঁটি অব্যাহত থাকে। শুরুর ব্যথা আমলে না নিলে ইনজুরি গভীর হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথায় পরিণত হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফাসাইটিস।


গোড়ালি ব্যথার লক্ষণঃ

● পায়ের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হবে

● গোড়ালি ফুলে যায়

● গোড়ালি লাল এবং গরম অনুভব হয়

● হাঁটা বা দৌঁড়ানোর সময় ব্যথা বেড়ে যায়

● ঘুম থেকে উঠার পর পায়ের গোড়ালিতে সুঁচ ফোটার মত তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়



যাঁরা এই সমস্যার ঝুঁকিতে

৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এই সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। যেসব কাজে গোড়ালিতে চাপ পড়ে যেমন দৌড়, নৃত্য; পায়ের গঠনগত সমস্যা, যেমন ফ্লাট ফুট সমস্যা ঝুঁকির কারণ। আবার যাঁদের ওজন বেশি; যেসব পেশার লোকজনকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয় ও গর্ভবতী নারীদের শেষের দিকে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হতে পারে। যাঁরা আরথ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডেলাইটিসে ভুগছেন; যাঁরা দীর্ঘদিন শক্ত হিলের জুতা ব্যবহার করেন, তাঁরাও ঝুঁকিতে।গোড়ালিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। আস্তে আস্তে কয়েক কদম পা ফেললে ব্যথা কিছুটা কমে যায়। আবার কারও কারও মনে হয় পায়ের গোড়ালিতে সুচ ফুঁড়ে আছে এই রকম ব্যথা। তবে যে ধরনের ব্যথাই হোক না কেন গোড়ালি ব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।

গোড়ালি ব্যথায় করণীয় কী?

● যেহেতু এটা এক ধরনের ইনজুরি তাই যথাযথ বিশ্রাম দিতে হবে পা কে। পা কে উঁচু টুলের উপর রাখার চেষ্টা করতে হবে।

● পায়ের ব্যথাযুক্ত জায়গায় বরফ বা আইসপ্যাক রাখতে হবে ২০ মিনিট ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর পর।

● পা সকালে ও রাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজেয়ে রাখতে পারেন ২০ মিনিট করে।

● নিজের ওজন কমিয়ে রাখার চেষ্টা করা।

● প্রশস্ত আরামদায়ক নিচু হিল বিশিষ্ট নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে।

● জুতার ভেতরে ইনসোল বা হিলপ্যাড ব্যবহার করতে হবে।

● নিয়মিত আরামদায়ক স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। পায়ের উপর চাপ পরে না এমন এক্সারসাইজ যেমন সাঁতারকাটা যেতে পারে।

● প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।



গোড়ালির ওপর চাপ কমাতে কিছু নিয়মকানুনঃ

● ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পায়ের যেকোনো ব্যথা কমাতে এটি বেশ কার্যকর

● উঁচু হিলের ও শক্ত সোলের জুতা পরিহার করতে হবে

● নিচু বা মাঝারি হিলের জুতা ব্যবহার করতে হবে

● উপরে উল্লেখিত পায়ের সেল্ফ স্ট্রেচিং ব্যায়াম নিয়মিতভাবে করতে হবে

● এক পায়ে বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস পরিহার করুন



গোড়ালির ব্যথার চিকিৎসাঃ

নরম জুতা পরিধান করতে হবে। এমন জুতো ব্যবহার করতে হবে, যা গোড়ালিকে পায়ের আঙুলের থেকে কিছুটা উঁচুতে রাখবে।

ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

● গোড়ালির নিচে দিনে তিন/চারবার আইস প্যাক ব্যবহার করবেন অথবা কুসুম গরম পানি বালতিতে নিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে
● শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
● নরম ও আরামদায়ক ফ্ল্যাট স্যান্ডেল/ জুতো পরতে হবে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাঃ

Calcaneal Spur বা পায়ের গোড়ালি ব্যাথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। গৎবাঁধা ফিজিওথেরাপি নয়, সিরিয়্যাক্স/ মালিগান ট্রিটমেন্ট কনসেপ্ট অনুযায়ী আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে গোড়ালির ব্যথা উপশম করে।

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মধ্যে MWM(Mulligan Technique), MFR technique (Calf Muscle), Strengthening, Stretching ইত্যাদি খুবই কার্যকরী চিকিৎসা-পদ্ধতি।

নিজস্ব (সেল্ফ) থেরাপিউটিক এক্সারসাইজঃ

● একটি দেয়ালে দুই হাত দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যেন একটি পা সামনে সামান্য ভাঁজ হয়ে থাকে এবং আর একটি পা পেছনে সোজা করে থাকে। পিঠ সোজা রাখতে হবে এক্ষেত্রে। এরপর পেছনের পা টানটান করে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।

● সিঁড়িতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গোড়ালি সিড়ির বাইরের অংশে রাখতে হবে। এরপর শরীরের ভর পায়ের গোড়ালিতে রাখতে হবে। এভাবে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে দৈনিক ৮-১০ বার, দৈনিক ৩ বেলা।

● দিনে অন্তত দুই বার ২০/৩০ বার মিনিট করে ‘টিপ টো’ ব্যায়াম করতে হবে। অর্থাৎ পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোড়ালি উঁচু করে দাঁড়িয়ে আবার ফ্লোরের সাথে ফ্ল্যাট করে দাঁড়াতে হবে।


গোড়ালি ব্যাথা রোগে আকুপাংচার চিকিৎসা ও প্রতিকার


গোড়ালি ব্যাথার চিকিৎসার জন্য নতুন পদ্ধতি - আকুপাংচার। আকুপাংচার, গোড়ালি ব্যাথার রোগ সম্পূর্ণরূপে নিরাময়ে সাহায্য করে। ডাক্তাররা দেখেছেন যে আকুপাংচার গোড়ালি ব্যাথার চিকিৎসায় খুব সহায়ক হতে পারে। গবেষণা অনুসারে। আকুপাংচার সূঁচ শরীরের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপিত করে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। এটি ব্যথা উপশমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গোড়ালি ব্যাথা রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন আকুপাংচার চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


বাংলাদেশ তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান হল শশী হাসপাতাল। যেখানে প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা হল আকুপাংচার । আকুপাংচার এর গোড়ালি ব্যাথার চিকিৎসা দেওয়া হয় শশী হাসপাতালে। শশী হাসপাতাল দীর্ঘদিন ধরে আকুপাংচার সেবা দিয়ে আসছে। গোড়ালি ব্যাথা ছাড়াও, আকুপাংচার অন্যান্য অনেক ব্যথা-সম্পর্কিত অবস্থার চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আকুপাংচার হল একটি ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা যা শক্তি প্রবাহ এবং ভারসাম্যের নীতির উপর ভিত্তি করে

 
গোড়ালি ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আকুপাংচার একটি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আকুপাংচার হল ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করার এবং শরীরকে আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আকুপাংচার শরীরে উদ্দীপনা তৈরি করতে পারে যা স্বাস্থ্যের উন্নতিতে আবশ্যক । নতুন উদ্দীপনা শরীরের প্রভাবিত এলাকায় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, এবং এটি শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে কমে যায়।
আকুপাংচারের কোনো পরিচিত নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, যা বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আকুপাংচার হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যা শরীরের নির্দিষ্ট অংশকে লক্ষ্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি রোগীর নির্দিষ্ট চাহিদার উপর ভিত্তি করে। আকুপাংচার পদ্ধতি বিশেষভাবে রোগীর পৃথক কশেরুকার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।


স্বল্পমেয়াদী ব্যথা কমানোর বিভিন্ন উপায় আছে, যেমন ওষুধ সেবন, তবে এমন বিভিন্ন কৌশলও রয়েছে যা তাৎক্ষণিক ব্যথা উপশম করতে পারে। আকুপাংচার ছাড়াও, শশী হাসপাতাল ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, চাইনিজ ফুট থেরাপি এবং বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যথাজনিত রোগের সুচিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।


বাংলাদেশের অনেক আকুপাংচার ক্লিনিকের মধ্যে শশী হাসপাতাল তার উচ্চমানের যত্নের জন্য পরিচিত। শশী হাসপাতাল হল শান্তিনগর চৌরাস্তার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেখানে বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল রয়েছে। শশী হাসপাতাল আকুপাংচার চিকিৎসা সেবার জন্য বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি হাসপাতাল। যেখানে আপনি ব্যথাজনিত যেকোনো সমস্যা নিয়ে আসতে পারেন। এখানে ব্যথাজনিত সকল সমস্যার জন্য আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতি খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই অনুশীলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশিষ্ট আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডা. এস ,এম, শহীদুল ইসলাম।

 
আমাদের এই ভিন্নধর্মী চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত করার ক্ষেত্রে আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডা. এস ,এম, শহীদুল ইসলাম একজন সত্যিকারের অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব । দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আকুপাংচার বিশেষজ্ঞ ডা. এস ,এম, শহীদুল ইসলাম। তার নিপুণ হাত দিয়ে, আকুপাংচারের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। আকুপাংচার বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং এটি গত কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার দীর্ঘকালের আকুপাংচারের উপর দক্ষতা বেশ কয়েক বছর ধরে রোগীদের সফলভাবে চিকিৎসা প্রদান করে আসছে।


এখানে আকুপাংচারের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, চাইনিজ থেরাপি, ইত্যাদি ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকম ব্যথা জনিত রোগের উপশমে আকুপাংচার চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। শশী হাসপাতাল সবসময় আপনার সেবা করতে এবং আপনার প্রয়োজনের সময় আপনার পাশেই রয়েছে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে