সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা
মোঃ শাহাদৎ হোসেন


সরকারি চাকুরি একটি দেশের মানুষ যেমন অধিকার তেমনি কাংখিত। প্রতিটি মানুষ প্রত্যাশা থাকে এ ধরনের চাকুরি লাভের। তবে তা কেবলই বয়সের কারণে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর তবে মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক আর বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা ৩২ বছর। সরকারি ছাড়া আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে উল্লেখিত বয়সসীমা অনুসরণ করা হয়। আর চাকরি থেকে অবসরের সাধারণ বয়সসীমা ৫৯ বছরএবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে তা ৬০ বছর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বিভিন্ন রকম নজীর রয়েছে ৷ যেমন আমেরিকায় ৫৯ বছর সুইডেন ও কানাডা ৪৭ বছর , শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ায় ৪৫ বছর, ভারতে ৩৫ থেকে ৪৫ বছর,ফ্রান্সে ৪০ বছর, তাইওয়ান ও কাতার বয়স সর্বোচ্চ ৩৫ বছর, ইতালিতে ৩৫ বছর পাকিস্তানে প্রথম শ্রেনীর সরকারির বয়সসীমা ৩০ বছর কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃথীয় শ্রেণীর চাকরির বয়সসীমা রাখা হয়েছে ৪০ বছর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে মোট কর্মসংস্থানের ৩.৮ ভাগ সরকারি, ১৪.২ ভাগ বেসরকারি, ৬০.৯ ভাগ ব্যক্তিমালিকানাধীন, ২১.১ ভাগ অন্যান্য। বেশির ভাগ মানুষ ব্যক্তিমালিকানাধীন চাকুরির উৎসের উপর নির্ভরশীল। সরকারি কর্মসস্থানের জন্য অনেকে চেষ্টা করলেও সফল হতে পারে মাত্র ৩.৮ ভাগ । সুতরাং এ ক্ষেত্রে এত বাঁধা থাকলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের প্রতি আগ্রহ হারাবে, কেননা উচ্চ শিক্ষা শেষ করার পর তার আর চাকরির বয়স থাকবে না। অনেকের আবার পড়ালেখা শেষ করতে সময় বেশি লাগে। অনেকে বিভিন্ন বিড়ম্বনার কারনে পড়ালেখা থেমে থাকে এবং পড়ে আবার শুরু করে ফলে তারও বয়স চলে যায়। যাই হোক বিভিন্ন কারনে একজনের বয়স বেড়ে যায়।এতে তার একটি অধিকার হারানো একটি অমানবিক ব্যপার। সামরিক, আধা সমরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহীনি ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বয়স বাঁধা না হওয়াটাই উচিত। একই যোগ্যতার মাপকাঠিতে নির্বাচিত করলে অবসরের আগ পর্যন্ত সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ থাকাটা অনুচিত।আমেরিকায় যদি ৫৯ বছরেও চাকুরিতে প্রবেশ করা যায় বাংলাদেশে একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সকল ফি প্রদানপুর্বক অংশ গ্রহন করলে তো সমস্যা হবার কথা নয়। যোগ্যতা থাকলে সে তার স্থান দখল করে নিবে। সংবিধানের ২৮(১) ও ২৮(২) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের প্রতি সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে বয়স বেঁধেটা সমীচিন বলে মনে হয় না।
সরকারি চাকুরিতে প্রবেশসীমা থাকার জন্য অনিমের বীজটি সুকৌশলে কিছু কিছু অভিভাবক সন্তানের জন্মসনদে বয়স পরিবর্তন করে,এতে মিথ্যা দিয়ে শিশুর জীবন শুরু হচ্ছে। এতে যে কতবড় ক্ষতি হচ্ছে তা তারা অনুমানও করতে পারছেন না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি চাকুরিতে প্রবেশ এর নজীর ,বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ূ বৃদ্ধি ও সার্বিক দিক বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা তুলে দেওয়া অথাবা যৌক্তিক পর্যায় উন্নীত করা সমনের দাবী।
লেখকঃ শিক্ষক-দোসাইদ একে স্কুল এন্ড কলেজ,আশুলিয়া,সাভার,ঢাকা । ইমেল- [email protected]


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে