কেউ নওজোয়ান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার ক্ষেত্রে বলা হয় ‘লোকটির অকাল মৃত্যু' হল। অনেকে তো আবার ভালোবাসার আতিশয্যে আবেগতাড়িত হয়ে বলেই ফেলে ‘তার এহেন অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না'।
প্রথমত, ‘অকাল মৃত্যু' শব্দটির ব্যবহারই ঠিক নয়। কারণ, অকাল বলতে বোঝায় অসময়কে। অর্থাৎ এ বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়, সে তার সময়ে মারা যায়নি। অথচ প্রত্যক বস্তু বা প্রাণী তার জন্য নির্ধারিত একটি সময়ে মৃত্যুবরণ করে। কেননা আল্লাহ তাআলা মায়ের গর্ভে থাকতেই প্রত্যেকের জীবনকাল নির্ধারণ করে দেন। সে কতদিন পৃথিবীতে বাঁচবে তা তখনই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। অতএব, কেউ যদি মায়ের গর্ভেই মারা যায় বা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পরই মারা যায়, তবে সেটুকুই তার নির্ধারিত জীবন ছিল।
কেউ যদি কিশোর বয়সে মারা যায়, সে-কিশোর বয়স অব্দিই তার জীবনকাল ছিল। অনুরূপ কেউ যদি যৌবনকালে দুনিয়ার আলো-বাতাস ছেড়ে চলে যায়, ততটুকুই তার জীবনের সীমা ছিল; সে-সীমার সামান্য আগে বা পরেও সে চলে যাবে না। আর কেউ যদি একশ বছরের বেশি জীবন পায়, তার জীবন ততটুকুই নির্ধারিত।
এমন নয় যে, তার জন্য নির্ধারিত সময় অতিক্রম করার পরও তার মৃত্যু হয়নি। কারো নির্ধারিত সময় চলে আসলে সামান্য এদিক-সেদিকও করা হয় না।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِمْ مَا تَرَكَ عَلَيْهَا مِنْ دَابَّةٍ وَلَكِنْ يُؤَخِّرُهُمْ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ (١٦)
আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠের কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরান্বিত করতে পারে না।১
তিনি আরও বলেন,
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُؤَجَّلًا
আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কারো মৃত্যু হতে পারে না। কেননা, তা সুনির্ধারিত।২
তাই কমবয়সে কেউ মারা গেলে অকাল মৃত্যু শব্দটি প্রয়োগ করা খাঁটি গলদ। ‘তার অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না' আরও গুরুতর ভুল। কেননা, এ কথাটি তাকদীরের প্রতি বিশ্বাসের পরিপন্থি বিষয়। যাদের তাকদীরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আছে তারা কখনোই এমন কথা বলতে পারে না।
তবে আমরা বলতে পারি, 'ছেলেটার জন্য ভীষণ মায়া লাগছে! কিন্তু সবই আল্লাহর ইচ্ছা। সে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা রেখে গেল। সব আবেগ ত্যাগ করে আমরা তার পরিবারকে সমবেদনা জানাব; তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করব।
১. সূরা আন নাহল, আয়াত : ৬১
২. সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১৪৫