রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমাদ্বান। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রমাদ্বান পেয়েছি আমরা, আলহামদুলিল্লাহ।
অনেক দিন ধরেই ভাবছি রমাদ্বান নিয়ে কিছু লিখি। কিন্তু সময় করে আর বসা হচ্ছিল না। অবশেষে সামান্য লেখার তৌফিক এনায়েত করায় আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
সিয়াম ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিধানের একটি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন সিয়াম ফরজ হওয়ার ব্যাপারে তাঁর পবিত্র মহাগ্রন্থ আল কুরআনের দ্বিতীয় সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পার।”
সিয়াম মূলত আরবি শব্দ। এর অর্থ বিরত থাকা৷ অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও পাপাচার থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম।
এবার আয়াতের আলোচনায় ফেরা যাক। একটা জিনিস খেয়াল করুন। আয়াতের শুরুতেই আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করেছেন। তার মানে হচ্ছে, এই সিয়ামের বিধান কেবল তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আনীত বিষয়াবলির প্রতি বিশ্বাসী।
এই বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলছেন, তোমাদের জন্য আমি সিয়াম পালনকে আবশ্যক করে দিলাম। এটা এমন কোনো বিধান না যা শুধু তোমাদেরকেই দেওয়া হচ্ছে বরং তোমাদের পূর্বে যারা আমার উপর বিশ্বাসী ছিল তাদেরকেউ সিয়ামের বিধান দিয়েছিলাম।
আর এমনটা ভেবো না যে, এমনি এমনি তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছি। বিধানটি তোমাদের জন্য আবশ্যক করছি যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।
তাকওয়া মানে হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা। আর যে আল্লাহকে ভয় করে সেই মুত্তাকী।
উপরের আলোচনা থেকে এটুকু পরিষ্কার যে, আল্লাহ আমাদেরকে সিয়াম পালনের বিধান দিয়েছেন যাতে আমরা মুত্তাকী হতে পারি।
এখন কথা হচ্ছে, আমরাতো মাশাআল্লাহ্ অনেকেই পুরো মাস সিয়াম পালন করি। কিন্তু আমরা কি আদতে মুত্তাকী হচ্ছি?
“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার সামনে আমার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না। ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যে রমাদ্বান মাস পেল কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি, যার পিতামাতা উভয়কে অথবা একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল অথচ তাদের খিদমত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করতে পারল না। (তিরমিযি)
বিষয়টা কতো মারাত্মক! আমরা রমাদ্বান পেলাম পাপী অবস্থায় আর রমাদ্বান শেষেও যদি সেই পাপগুলোর দায় থেকে মুক্ত হতে না পারি তবে রহমাতুল্লিল আলামিন আমাদের ধ্বংসের জন্য বদদোয়া করে গেছেন। তাঁর দোয়া এবং বদদোয়া কবুলের ব্যাপারে আপনার কী ধারণা?
আমরা কিভাবে বুঝব আমাদের রমাদ্বান কবুল হয়েছে কি না?
এক লোক ক্বাবা শরিফের এক ঈমামকে জিজ্ঞেস করল, আমি কিভাবে বুঝব আমার রমাদ্বান কবুল হয়েছে কি না? অথবা আমার রমাদ্বান কবুল হয়েছে কি না- তা বুঝার কোনো উপায় বা পদ্ধতি আছে কি? উত্তরে ঈমাম সাহেব বললেন, যদি রমাদ্বানের শেষে নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাও তবে বুঝবে তোমার রমাদ্বান কবুল হয়েছে।
গত রমাদ্বানগুলোর কথা চিন্তা করলে দেখব আমার নিজের মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই। আমি রমাদ্বানের আগে যেমন পাপাচারী ছিলাম এখনো তেমন আছি, হয়তো এ রমাদ্বানের পরেও পরিবর্তনহীনই থাকব।
আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন, আমাদের তাকওয়াবান হওয়ার সুযোগ হিসেবে রমাদ্বান দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তাকওয়াবান হলাম কই!
তাকওয়াবান হলে তো আগে যে পাপগুলো করতাম তা পরে আর করতে পারতাম না।
আল্লাহ আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের তৌফিক দান করুন।
©Zakir Hossain