মুমিনের প্রকৃত অভিভাবক ও পথপ্রদর্শক কে? 


আল্লাহ্ পৃথিবীতে মানুষ পাঠিয়েছেন ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টির অর্জন করতে। তাই প্রতিটি মানুষেরই প্রধান কাজ হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। যার প্রথম পদক্ষেপ হলো ঈমান আনা। আর মুমিনরা ঈমান আনার পর সঠিক রাস্তায় চলতে হলে প্রয়োজন একজন প্রকৃত পথপ্রদর্শকের। যে মুমিনকে আল্লাহর সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করবে। এখন আমরা কুরআনের আলোকে জানার চেষ্টা করবো একজন মুমিনের প্রকৃত পথপ্রদর্শক কে? অর্থাৎ একজন মুমিনকে কে সর্বাবস্থায় সঠিক পথ দেখিয়ে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। পথপ্রদর্শকের অর্থ কী? পথপ্রদর্শকের অর্থ হলো যে বা যিনি কাউকে কোনো গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। অর্থাৎ কেউ তার গন্তব্যের পথ না চিনলে তাকে গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছাতে যিনি সাহায্য করেন তিনি ই হচ্ছেন পথপ্রদর্শক। ইসলামী পরিভাষায় একজন মুমিনকে যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পথ দেখান তিনি হচ্ছেন মুমিনের পথপ্রদর্শক। একজন মুমিন দুনিয়ায় হাজারো পথ দেখতে পায়। কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে, কোন পথটি সঠিক ও নির্ভুল। বা কোন পথে চললে আল্লাহ্‌র সঠিক রাস্তায় যাওয়া যাবে। তাই সর্বাবস্থায় মুমিনের একজন প্রকৃত পথপ্রদর্শক দিক নিদর্শনকারী প্রয়োজন। সুতরাং যে তাকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে সে ই হচ্ছেন প্রকৃত পথপ্রদর্শক। পথপ্রদর্শকের প্রকারভেদঃ পথপ্রদর্শক দুই প্রকারের। একজন পথপ্রদর্শক হচ্ছেন, যিনি রাস্তা দেখিয়ে দেন। আরেকজন পথপ্রদর্শক হচ্ছেন, যিনি নিজেই সঠিক রাস্তায় একজন মুমিনকে নিয়ে যান। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিষ্কার বুঝা যাবে। ধরুন কেউ একজন একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে চায়। কিন্তু সে জানে না গন্তব্যটি কোথায় অবস্থিত এবং এর যাওয়ার রাস্তা কী। তখন সে জানাশোনা কাউকে জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে ঐ গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বলে দেয় যে, কীভাবে কোন রাস্তায় গেলে সে ঐ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। তাহলে সে ব্যক্তি হচ্ছেন একজন পথপ্রদর্শক। যেহেতু তিনি পথ বাতলে দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে কেউ যখন কোনো গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চায় এবং কোনো জানাশোনা লোক ঐ ব্যক্তিকে বলে যে, আমিও সেই গন্তব্যে যাবো এবং আমি তা চিনি, চলুন আমার সঙ্গে। আমিই আপনাকে সেই গন্তব্যে পৌঁছে দিবো। তাহলে এই জানাশোনা ব্যক্তিটিও একজন পথপ্রদর্শক। যিনি নিজ হাতে নিজ দায়িত্বে একজনকে তার সঠিক গন্তব্যে সঠিক রাস্তায় সঠিক উপায়ে পৌঁছে দেন। এবং ইনিই হচ্ছেন প্রকৃত পথপ্রদর্শক। কেননা তিনি নিজেই সঠিক গন্তব্য সম্পর্কে অবগত। সেইসাথে অচেনা ব্যক্তিকে নিজ হাতে সঠিক ঠিকানায় পৌঁছাতে সাহায্য করছেন। সুতরাং পথপ্রদর্শক দুই ধরনের। একঃ যিনি দূর থেকে গন্তব্যের রাস্তা দেখিয়ে দেন। দুইঃ যিনি নিজ হাতে গন্তব্যে পৌঁছে দেন। মুমিনের প্রকৃত পথপ্রদর্শক কে? আমরা দুই ধরনের পথপ্রদর্শকের কথা জানতে পারলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকৃত পথপ্রদর্শক কে? অবশ্যই তিনিই প্রকৃত পথপ্রদর্শক, যিনি নিজ হাতে সঠিক রাস্তায় মুমিনকে পৌঁছে দিবেন। আল্লাহ্ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে নবী রাসুলদের আঃ পাঠিয়েছেন আল্লাহর রাস্তায় ঐসব জাতি গোষ্ঠী সম্প্রদায়কে পরিচালিত করতে। এইসব নবী রাসুলগণ তাদের জাতি গোষ্ঠীদের বিভিন্ন নসিহত ও প্রমাণের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তার ঠিকানা বাতলে দিয়েছেন। যাতে তারা ঈমানদার হয়ে সঠিক গন্তব্য তথা জান্নাতে পৌঁছাতে পারে। এইসব জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে কেবলমাত্র তারাই ঈমান আনতে সক্ষম হয়েছেন যাদের আল্লাহ্ নিজেই পথ দেখিয়ে হিদায়াত দিয়েছেন। সুতরাং নবী রাসুল আঃগণ হচ্ছেন পথপ্রদর্শক। যারা মানুষদের সঠিক রাস্তা দেখায়। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ঐ পথপ্রদর্শক, যিনি নিজেই কাউকে হিদায়াত দিয়ে সঠিক রাস্তায় চলতে সাহায্য করেন। কেননা হিদায়াত একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনিই যাকে পথ দেখাবেন একমাত্র সে ই পথ প্রাপ্ত হবে। তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করবেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারবে না। সুতরাং প্রকৃত পথপ্রদর্শক কোনো ব্যক্তি নয়। প্রকৃত পথপ্রদর্শক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। যিনি বান্দাদের হিদায়াত দিয়ে তাঁর রাস্তায় নিয়োজিত রাখেন। পথপ্রদর্শক নিয়ে ভ্রান্তিঃ সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা হচ্ছে নবী রাসুল পীর অলি আউলিয়ারাই হচ্ছেন প্রকৃত পথপ্রদর্শক। তাদের বিশ্বাস নবী রাসুলের পরবর্তীতে পীরেরা মুরিদদের পথপ্রদর্শক। পীরেরা মুরিদদের যে রাস্তায় চলতে বলে তারা সেই রাস্তায় চললে আল্লাহর সঠিক দিশা পেয়ে যাবে। এই বিশ্বাসের কারণে সুফিবাদী মুসলিমরা তাদের আকিদায় শরীয়ত বিরোধী নানান কর্মকান্ডে জড়িত হয়। যা সরাসরি ইসলামের শরীয়তের মানদন্ড বিরোধী। সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ কেননা পবিত্র কুরআন হাদিসে কোথাও ব্যক্তি অনুসরণ কথা বলা হয়নি। শুধুমাত্র রাসুলের অনুসরণ কথাই বারংবার বলা হয়েছে। ব্যক্তি অনুসরণ ততক্ষণ পর্যন্ত করা যাবে যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কুরআন হাদিসের আলোকে চলবে। তাছাড়া ব্যক্তি শুধুমাত্র রাস্তা দেখানোর মালিক। তিনি কখনোই ঐ বান্দার সাথে সার্বক্ষণিক বিচরণশীল নন। বান্দা যেকোনো সময় যেকোনো মুহূর্তে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যেতে পারে। ঐসময় কোনো ব্যক্তিই তাকে উদ্ধার করতে পারবে না একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া। আল্লাহ্ চাইলে তবেই ঐ বান্দা শয়তানের মোকাবেলায় শক্তি সামর্থ্য ও জ্ঞান অর্জন করে তাকে প্রতিহত করতে পারবে। এছাড়াও ব্যক্তি কখনোই নির্ভুল নয়। কেননা পৃথিবীতে মানুষ শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে ইসলামে অসংখ্য ধ্যানধারণার সৃষ্টি করেছে। যার কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী। কেউ বলতে পারে না কোন পথ ও কোন ব্যক্তি সঠিক। তাই এইক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ্ যাকে জ্ঞান ও হিম্মত দিয়ে সৎপথে পরিচালনা করেন, কেবল তিনিই হচ্ছেন সঠিক পথপ্রাপ্ত। অতএব ব্যক্তি নয়, সঠিক পথপ্রদর্শক হচ্ছেন আল্লাহ্। যিনি বান্দাকে সঠিক জ্ঞান ও পথ দেখিয়ে তাঁর রাস্তায় নিয়োজিত রাখেন। এখন আমরা কুরআনের আলোকে জানার চেষ্টা করবো কীভাবে একমাত্র "আল্লাহ্ই" হচ্ছেন মুমিনের প্রকৃত পথপ্রদর্শক। মুমিনের অভিভাবক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্ঃ মুমিনদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্। আল্লাহ্ বলেন, "যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে।" (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৫৭) "আর অভিভাবক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সাহায্যকারী হিসাবেও আল্লাহই যথেষ্ট। "(সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৫) উপরোক্ত আয়াতসহ অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ্ ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রতিটি মুমিন ঈমানদারের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন। তিনিই মুমিনের অভিভাবক এবং সাহায্যকারী। আর অভিভাবক তাকেই বালা হয়, যিনি কারো দায়িত্ব নিয়ে নেন। যেমন পিতা মাতা তার সন্তানের অভিভাবক। এই সন্তানের সকল ভালো মন্দ এবং ভবিষ্যৎ সবকিছুর দায়িত্ব হয় পিতামাতার উপর। পিতামাতারাই তাদের সন্তানদের জন্য আজীবন দায়িত্ব পালন করে যায়। ঠিক তেমনি আল্লাহ্ বান্দার জন্য তার পিতামাতার চাইতে অধিক ও সর্বাধিক যত্নশীল এবং দায়িত্ববান। সুতরাং যে মুমিন আল্লাহ্কে নিজের অভিভাবক করতে পেরেছে, সে ই হচ্ছে সফল এবং সঠিক পথপ্রাপ্ত। অতএব আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী মুমিনের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। যিনি তাঁর প্রকৃত বান্দাদের হিদায়াত দানের মাধ্যমে অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। ব্যক্তি কখনোই বান্দার অভিভাবক নয়ঃ আল্লাহর সাহায্য ও অভিভাবকত্ব ছাড়া কোনো মুমিনের জন্য কোনো ব্যক্তি কখনোই অভিভাবক হতে পারে না। আল্লাহ্ বলেন, "কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি"। (সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১০২) উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহর পরিবর্তে কোনো ব্যক্তি বা আল্লাহর কোনো বান্দাদের অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করাকে তিরস্কার করা হয়েছে। যারা আল্লাহর পরিবর্তে বান্দাদের অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করবে তাদের অবস্থান হবে জাহান্নাম। সুতরাং বান্দার প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্। অপর আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, "তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অপরকে অভিভাবক স্থির করেছে? পরন্তু আল্লাহই তো একমাত্র অভিভাবক। "(সূরাঃ আশ-শুরা, আয়াতঃ ৯) এই আয়াতেও আল্লাহ্ আশ্চর্য হচ্ছেন যে, তাঁকে ব্যতীত কীভাবে অন্যকে তাঁর বান্দারা অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করছে। সুতরাং কুরআন সুন্নাহর বাইরে গিয়ে সুফিবাদী পীর অলি আউলিয়াদের কখনোই অভিভাবক মানা যাবে। কেননা তাদের আকিদা সরাসরি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। অতএব আল্লাহ্ ব্যতীত কখনোই অন্য কেউ প্রকৃত অভিভাবক হতে পারেন না। আল্লাহ্ ব্যতীত অভিভাবক নেইঃ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, "(একমাত্র আল্লাহ্) তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না? (সূরাঃ সেজদাহ, আয়াতঃ ৪) উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ হচ্ছেন বান্দার একমাত্র অভিভাবক। তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই। যদি কেউ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে অভিভাবক মেনে নেয়, তার প্রতি আল্লাহর বিশেষ নজরদারি থাকে। আল্লাহ্ তাদের কর্মকান্ড লক্ষ্য রাখেন। আল্লাহ্ বলেন, "যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখেন। আপনার উপর নয় তাদের দায়-দায়িত্ব"। (সূরাঃ আশ-শুরা, আয়াতঃ ৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে তাদের অনুযায়ী আমল করবে, তাদের আমল গুলো আল্লাহ্ লক্ষ্য করেন। যাতে তাদের আমল গুলোর প্রতিদান তিনি দিতে পারেন। আর সেই প্রতিদান কখনোই শুভ হবেনা। সুতরাং আল্লাহ্ ছাড়া বান্দার জন্য কখনোই কোনো ব্যক্তি অভিভাবক হতে পারে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন, "বলুন! কে তোমাদেরকে আল্লাহ থেকে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তোমাদের প্রতি অনুকম্পার ইচ্ছা? তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না। (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ১৭) কুরআনের আলোকে উপরোক্ত আয়াত গুলো থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ই হচ্ছেন মুমিনের একমাত্র অভিভাবক। সুতরাং একমাত্র আল্লাহ্কেই আমাদের অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। মুমিনের পথপ্রদর্শক একমাত্র আল্লাহ্ঃ প্রতিটি মুমিনের একমাত্র পথপ্রদর্শক হচ্ছেন আল্লাহ্। আল্লাহ্ বলেন, "আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না"। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৯৭) উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ যাকে পথ দেখাবেন একমাত্র সেই ব্যক্তিই সঠিক পথ পাবে। আর যাকে পথভ্রষ্ট করবেন তার জন্যও আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো সাহায্যকারী নেই। সুতরাং বান্দার জন্য শুধুমাত্র আল্লাহ্ই হচ্ছেন প্রকৃত পথপ্রদর্শক। যিনি তাঁর পছন্দের বান্দাদের নিজ দায়িত্ব সঠিক পথে পরিচালিত করেন। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ আরও বলেন, "আর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেই।" (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৩৭) অর্থাৎ আল্লাহ্ নিজে যাকে পথ দেখাবেন তাকে কোনো ব্যক্তি বা অন্যান্য কোনো মাধ্যম পথভ্রষ্ট করতে পারে না। সুতরাং প্রকৃত পথপ্রদর্শক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। পথভ্রষ্ট ব্যক্তির পথপ্রদর্শক নেইঃ আল্লাহ্ নিজেই যাকে পথভ্রষ্ট করে দেন, তাকে উদ্ধারের জন্য কোনো পথপ্রদর্শনকারী নেই। আল্লাহ্ বলেন, "আর আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।" (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ২৩) "আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।"(সূরাঃ আল-মু'মিন, আয়াতঃ ৩৩) সুতরাং আল্লাহ্ যাকে নিজে গোমরাহ করবে, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই। কেননা আল্লাহ্ই বান্দাদের একমাত্র পথপ্রদর্শক। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ যাদের পথভ্রষ্ট করেন তাদের তিনি বিভিন্নভাবে তাদের আল্লাহ্ বিরোধী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখেন। আল্লাহ্ বলেন, "আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ১৮৬) পথভ্রষ্টদের জন্য শয়তান নিয়োগঃ যারা কুরআন সুন্নাহর বাইরে গিয়ে অন্য কাউকে তাদের অভিভাবক বানায় এবং আল্লাহ্ থেকে দূরে সরে যায়। তাদের জন্য আল্লাহ্ নিজেই শয়তান নিয়োগ করে দেন। আল্লাহ্ বলেন, "যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী"। (সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৩৬) অর্থাৎ যারা প্রকৃত ইসলামের পরিবর্তে সুফিবাদ গ্রহণ করে, তাদের জন্য আল্লাহ্ নিজেই একটি শয়তান নিয়োগ করেন। আর তারা মনে করে তারা যা আমল করছে তা আসলেই সঠিক। আল্লাহ্ বলেন, "শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে"। (সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৩৭) "তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে"।(সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১০৪) অতএব, পথভ্রষ্ট ব্যক্তির কোনো পথপ্রদর্শক নেই। যারা সঠিক ইসলাম ছেড়ে সুফিবাদ গ্রহণ করেছে, তারা মনে করছে এটাই আসল ইসলাম। কিন্তু না, এটা ভুল। কেননা শয়তানই তাদের চোখে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে তুলেছে। আর তারা মনে করছে তারা যা করছে তা ই সঠিক। সুতরাং পীর অলি আউলিয়ারা কখনোই প্রকৃত পথপ্রদর্শক নয়। নবী রাসুলদের পথপ্রদর্শকও আল্লাহ্ঃ প্রতিটি নবী রাসুলদের আল্লাহ্ নিজেই পথপ্রদর্শন করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাঃকে লক্ষ্য করে আল্লাহ্ বলেন, " তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন"। (সূরাঃ আদ্ব-দ্বোহা, আয়াতঃ ৭) উপরোক্ত আয়াতে রাসুলুল্লাহর নবুওয়াত প্রাপ্তির আগে এবং পরের কথা বলা হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ ছাড়াও হযরত ইব্রাহীম আঃ এর কথাও কুরআনে এসেছে এভাবে, "যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করেন" (সূরাঃ আশ-শো'আরা, আয়াতঃ ৭৮) "সে (ইব্রাহীম আঃ) বললঃ আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন"। (সূরাঃ আস-সাফফাত, আয়াতঃ ৯৯) সুতরাং প্রকৃত পথপ্রদর্শক একমাত্র আল্লাহ্। একটি দ্বন্দ্বের নিরসনঃ কুরআন বলছে একমাত্র আল্লাহ্ই বান্দার পথপ্রদর্শক। আর সুফিবাদীরা দাবি করে তাদের পীর অলি আউলিয়ারাও হিদায়েতের মালিক ও বান্দার পথপ্রদর্শক।তাহলে এখানে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। কারণ পীর অলি আউলিয়ারা কোনো ব্যক্তির প্রকৃত পথপ্রদর্শক হতে পারে না। তারা শুধু মুরিদদের রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে মাত্র। যেমন নবী রাসুলগণ তাদের বিভিন্ন উম্মতদের আল্লাহর রাস্তা দেখিয়ে গেছেন। আর তাদের পীরদের দেখানো রাস্তা যে সঠিক ও নির্ভুল তা কিন্তু কেউ কখনোই নিশ্চয়তা দিতে পারে না। কেননা সুফিবাদের যেসব আকিদা রয়েছে তা সরাসরি ইসলামী বিরোধী আকিদা। সুতরাং যাদের ঈমান আকিদায় ইসলামের সংস্পর্শ নেই বরং শির্ক বিদআতে ভরপুর; তারা কীভাবে ভক্ত মুরিদদের হিদায়েত দিতে পথপ্রদর্শক হতে পারে? সুফি সুন্নীরা কুরআনের একটি আয়াত থেকে দলিল দেওয়ার চেষ্টা করে যে, পীরেরাই বান্দার পথপ্রদর্শক। আল্লাহ্ বলেন, "আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।" (সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১৭) উপরোক্ত আয়াত দিয়ে সুফিরা দাবি করে যে, আল্লাহ্ যাকে সৎ পথে চালান তাকে তিনি পীর ধরার তৌফিক দেন। যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য তিনি কোনো পীরের ব্যবস্থা করেন না। অর্থাৎ আল্লাহ্ পথপ্রদর্শন করেন পীর ধরার মাধ্যমে। তাদের দাবির পক্ষে কুরআন থেকে সরাসরি কোনো আয়াত তারা দলিল দিতে পারে না। তারা যে আয়াত দ্বারা পীর অলি আউলিয়ার দলিল দেওয়ার চেষ্টা করে, সেই আয়াতও তাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেয়। তাদের দলিলকৃত আয়াতটি হলো:- আল্লাহ্ বলেন, "হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম"। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৫৯) উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন যে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ এবং রাসুলের আদেশ নির্দেশই মানতে হবে। সেইসাথে মানতে হবে যারা দ্বীন ইসলামের নেতৃবৃন্দ তাদের। অর্থাৎ কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামী আইনকানুন মানার পাশাপাশি সমাজের মুসলিম নেতৃবৃন্দদেরও আনুগত্য করতে হবে। সুফি সুন্নীরা মুসলিম নেতৃবৃন্দের আনুগত্যের কথা বলে পীর মুরিদী জায়েজ করে। এই আয়াতে আল্লাহ্ এবং রাসুলের সাঃ আনুগত্য করাকে নিঃশর্ত করা হয়েছে। অথচ আল্লাহ্ একই আয়াতে মুসলিম নেতৃবৃন্দের আনুগত্যের জন্য শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ যদি মুসলিম নেতৃত্ব কোনো কারণে কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে চলে যায়। তাহলে সেই নেতৃত্ব আর মানা যাবে না। এখন কথা হচ্ছে সুফিরা যেসব আকিদায় বিশ্বাসী, সেইসব আকিদা সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহর বিরোধী। সুতরাং উপরোক্ত আয়াত দ্বারা যারা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী তাদের আনুগত্য কখনোই করা যাবে না। সেই হিসাবে সুফি সুফিবাদ এবং পীর মুরিদীও মানা যাবে না। অতএব পীর অলি আউলিয়ারা কখনোই কারো প্রকৃত পথপ্রদর্শক হতে পারে না। তবে হ্যাঁ, কুরআন সুন্নাহর অনুসারী যেকোনো হাক্কানী আলেম ওলেমা, উস্তাদ, শায়খ ইত্যাদির অনুসরণ করা যাবে। অর্থাৎ যারাই কুরআন সুন্নাহর অনুসারী হবে শুধুমাত্র তাদেরকেই অনুসরণ করা যাবে। তবে তা সুফিদের একক কোনো পীর নয়। সুফিবাদে বান্দা যেকোনো একজন পীরের কাছেই জ্ঞানার্জন করতে পারবে। যা শরীয়ত সম্মত নয়। তাই একক পীর অলি আউলিয়ারা কখনোই বান্দার প্রকৃত পথপ্রদর্শক নয়। ব্যক্তি হিদায়েতের মালিক নয়ঃ ইসলামে একমাত্র আল্লাহ্ই হিদায়েতের মালিক এবং পথপ্রদর্শক। ব্যক্তি কখনোই হিদায়েতের মালিক নয়। অথচ সুফি সুন্নীরা দাবি করে পীর অলি আউলিয়ারা তাদের মুরিদদের হিদায়াতের মালিক। এই পীর আউলিয়ারাই কিয়ামতের দিন তাদের আল্লাহর হাত থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে। সুতরাং পীর আউলিয়াদেরই অনুসরণ করতে হবে এটাই সুফিদের আকিদা। যা সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। কেননা হিদায়েত ও পথপ্রদর্শকের মালিক একমাত্র আল্লাহ্। এমনকি রাসুল সাঃও কাউকে হিদায়াত দিতে পারেন না। আল্লাহ্ বলেন, " (হে রাসুল) আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন"। (সূরাঃ আল কাসাস, আয়াতঃ ৫৬) উপরোক্ত আয়াত যা রাসুলের প্রাণপ্রিয় চাচা আবু তালেবের মৃত্যুর সময় নাযিল হয়েছিল। এই আয়াতে রাসুল সাঃকে সম্বোধন করে আল্লাহ্ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্ ব্যতীত কারো হাতেই হিদায়াত ও সঠিক পথপ্রদর্শনের ক্ষমতা নেই। আল্লাহ্ই যাকে চান তাকে সৎপথ দিয়ে থাকেন। সুতরাং যেখানে রাসুল দ্বারা কারো হিদায়াত নিশ্চিত নয় সেখানে কীভাবে কথিত পীর অলি আউলিয়ারা বান্দাদের হিদায়েতের ও পথপ্রদর্শকের মালিক হতে পারে? কুরআনের আলোকে পথপ্রদর্শকঃ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে এসেছে প্রথমত আল্লাহ্ই মুমিনের পথপ্রদর্শক। কিন্তু আল্লাহ্ তো সরাসরি দুনিয়ায় এসে কাউকে হিদায়াত তথা পথপ্রদর্শন করেন না । তাই তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন নবী রাসুল পাঠিয়েছেন মানুষদের সৎপথে চলে আল্লাহ্কে ডাকার জন্য। কিন্তু নবী রাসুলগণ চিরস্থায়ী নন। রাসুল পরবর্তীতে কীভাবে আল্লাহ্ বান্দাকে পথপ্রদর্শন করবেন? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানার চেষ্টা করবো পবিত্র কুরআন থেকে। আল্লাহ্ বলেন, " আর আমি (হে মুহাম্মদ) তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।’ (সূরা আন-নাহল- ৮৯) " হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী (অর্থাৎ কুরআন) এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য"। (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৫৭) " "এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন"।(সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ১৬) " "এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৭) "এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য "(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২) "আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ২৩) " আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না? " (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০) "আর এটাই আপনার পালনকর্তার সরল পথ। আমি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে আয়াতসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। " (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১২৬) উপরোক্ত আয়াত গুলো থেকে এটা খুবই সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ্ মানুষকে হিদায়াত দেন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ইসলামের আদেশ উপদেশসহ সমূহ মূলনীতিগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্নণা করেছেন। যেকেউ পবিত্র কুরআন অনুধাবনের সাথে সাথে যার হিদায়াত লেখা আছে সে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হবে। কেননা একমাত্র পবিত্র কুরআনই হচ্ছে হিদায়েতের মাধ্যম। আল্লাহ্ কুরআনের মাধ্যমেই মানুষকে হিদায়াত দান করেন। যার সঠিকভাবে কুরআন অনুধাবন করার তৌফিক হবে, সে ই শুধুমাত্র হিদায়াত প্রাপ্ত হবে। পবিত্র কুরআনের এমন একটি ক্ষমতা আছে, যার দ্বারা যেকোনো কেউ সহজে হিদায়াত তথা সৎপথ লাভ করতে পারে। ইসলামের মূল হলো আকিদা। আর এই নির্ভেজাল আকিদা সম্পর্কে জানা যাবে শুধুমাত্র কুরআনে। আর রাসুলে সুন্নাহ হচ্ছে আমল। যেকোনো পীর বা উস্তাদ বা শিক্ষক একজন মানুষকে আমলের পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে। কিন্তু আকিদার শিক্ষা কুরআন থেকেই নিতে হবে। কুরআন বহির্ভূত কোনো আকিদা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। যে ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞান আহরণ করতে পারবে, সে খুব সহজেই হক এবং বাতিলের পার্থক্য নিরুপণ করতে পারবে। যাকে আল্লাহ্ কুরআনের জ্ঞান দিবেন, সে তার জ্ঞানের সাহায্য এটা বুঝতে সমর্থ হবে যে, কোন পথ সঠিক এবং কোন পথ ভুল। সেইসাথে এটাও বুঝতে পারবে কোন আলেম ওলামা সঠিক পথে আছে কোন আলেম ওলামে ভুল পথে আছে। এখানেই হচ্ছে আল্লাহর হিদায়াত এবং সঠিক পথপ্রদর্শন। সুতরাং আল্লাহ্ যাকে পথপ্রদর্শন করবেন তাকে কুরআনের সঠিক জ্ঞান জানার তৌফিক দিবেন। আল্লাহ্ নি‌জেই ঐ ব্যক্তিকে কুরআনের সঠিক জ্ঞানার্জনের দ্বারা হিদায়াত দিবেন। যে আল্লাহ্কে প্রকৃত অভিভাবক এবং পথপ্রদর্শক হিসাবে পাবে, সে অবশ্যই হিদায়েতের পথে থাকবে। এখন এই কুরআনের জ্ঞান আহরণের জন্য যেকোনো ব্যক্তি কুরআন জানা যেকোনো কারো কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে তারা কুরআন সুন্নাহর অনুসারী হতে হবে। কুরআন সুন্নাহ বিমুখ কারো কাছ থেকে কুরআনের জ্ঞানার্জন করা যাবে না। তাই সুফিবাদী সুন্নী পীর অলি আউলিয়াদের কাছ থেকে কখনোই কুরআনের জ্ঞানার্জন করা যাবে না। কারণ তারা তাদের নিজস্ব সুফী আকিদাকেই প্রকৃত ইসলাম বলে দাবি করে। এবং এই পীরদের দ্বারাই হিদায়াত পাওয়া যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করে ও তাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করে। যা সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। সুফিবাদের শরীয়তের উৎস ও যৌক্তিকতা অতএব, কুরআন ব্যতীত কখনোই কোনো ব্যক্তি পীর অলি আউলিয়ারা হিদায়েতের মাধ্যম বা পথপ্রদর্শক হতে পারে না। কেননা হিদায়াত এবং পথপ্রদর্শন একমাত্র আল্লাহর হাতে। সেইসাথে এই হিদায়াত এবং পথপ্রদর্শন আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন দিয়েই করে থাকেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার যে, কোনো ব্যক্তি পীর অলি আউলিয়ারা কারো হিদায়েতের মাধ্যম হিসাবে প্রকৃত পথপ্রদর্শক হতে পারে না। অতএব প্রকৃত পথপ্রদর্শক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। তিনিই যাকে কুরআনের জ্ঞান দ্বারা সৎপথে নিয়ে এসে হিদায়াত দান করেন। একমাত্র সে ই সৎপথ প্রাপ্ত তথা হিদায়াত লাভ করতে পারে। সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ অলংকার, চট্টগ্রাম।



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে