কার্ডিওলজি চিকিৎসা বিজ্ঞানের মেডিসিন বিভাগের একটি শাখার নাম যেখানে হৃদরোগের প্রতিরোধ, কার্যকরী পরামর্শ ও নানাবিধ জটিল শল্য চিকিৎসা সহ নানা উপায়ে চিকিৎসা করা হয়।
আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত ধারনা হলো যে হৃদরোগ বয়স্ক মানুষের রোগ। কিন্তু সাম্পতিক কালে দেখা গিয়েছে যে স্বল্প বয়স্ক ছেলে মেয়েদেরও হৃদরোগ হচ্ছে। এর কারন হৃদরোগ জেনেটিক বা বংশগতও হতে পারে। বিশেষজ্ঞগন বলছেন, যে কোন শিশু হৃদরোগ নিয়েই জন্ম নিতে পারে যাকে বলা হয় কনজেনিয়াল হার্টের অসুখ অর্থাৎ জন্মগত হার্টের ত্রুটি। এটিও এক ধরনের হৃদরোগ।
অল্প কথায় হৃৎপিন্ড এবং শরীরের রক্তবাহক ধমনী, শিরা উপ শিরা, মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন ইত্যাদি সম্পর্কিত নানাবিধ জটিলতা বা রোগকে প্রধানত হৃদরোগ বলে।
হৃদরোগে আক্রান্ত হলে লক্ষণ সমূহঃ
করনারি আর্টারি যেহেতু হার্টের রক্ত সরবরাহ করে, সুতরাং এই রক্তনালিগুলো যখন বন্ধ হয় বা নানা কারনে সরু হয়ে যায় বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তখন হার্টের কিছু সমস্যা দেখা দেয় যার মধ্যে নিম্নোক্তগুলো অন্যতমঃ


  • হাঁটার সময় বা সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় কষ্ট বোধ হওয়া
  • মাঝে মধ্যে বা একটানা এক ধরনের বুকে ব্যথা অনুভব হওয়া বা অস্বস্তি লাগা।
  • কাজ করতে গেলে অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ করা
  • মুখের নীচের চোয়াল বা গলা ধরে আসা
  • হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ওঠানামা করে। অনেক সময় রোগী ঘামতে থাকে। এমনটা প্রবল শীতেও হতে পারে।
  • দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়া ইত্যাদি সহ আরো অনেক লক্ষন রয়েছে।
  • বুকে বা বাহুতে ব্যথা হৃদরোগের অন্যতম লক্ষণ। তবে শুধু বুকে ব্যথা হলেই হৃদরোগ বলা যায় না। বাহু, চোয়ালের পিছন দিক এবং গলায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে।
  • বদহজম, বমিবমি ভাব, অনিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস হৃদরোগের উপসর্গ হতে পারে।


হৃদরোগ অনেক রকমের হতে পারে যেমনঃ


  • করোনারি হৃদ রোগ বা হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী সংক্রান্ত হৃদরোগ
  • কার্ডিও-মায়োপ্যাথি বা হার্টের মাংশপেশীর সমস্যাকে বুঝায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ জনিত হৃদ রোগ
  • হার্ট ফেইলর
  • কোর পালমোনাল বা হৃৎপিণ্ডের ডান পাশ অচল হয়ে যাওয়া, শ্বাস -প্রশ্বাস ব্যহত
  • কার্ডিয়াক ডিসরিদ্মিয়াস বা অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন বা অনিয়মিত হার্ট বিট
  • ভালভুলার হৃদ রোগ বা হৃদপিন্ডের বাল্ভের রোগ।
  • সেরেব্রোভাস্কুলার রোগ-মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহকারী রক্তবাহিকার অসুখ, যেমন স্ট্রোক
  • প্রান্তিক ধমনীর রোগ
  • জন্মগত হৃদ রোগ
  • রিউম্যাটিক হৃদ রোগ-বাতজ্বরের কারণে হৃদপেশি ও ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া


রোগ নির্নয় ও চিকিৎসায় কার্ডিওলজিষ্ট ও কার্ডিয়াক সার্জনঃ
রোগ নির্ণয়ের প্রেক্ষাপটে একজন কার্ডিওলজিস্টের প্রয়োজনীয়তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও সব ধরনের সমস্যার সমাধান একজন কার্ডিওলজিস্ট দিতে পারেন না। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানের জন্য সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে কার্ডিয়াক সার্জন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।


  • হৃদযন্ত্রে ও এর আশেপাশে সমস্যা এবং ব্যথা থাকলে সমস্যা ও ব্যথার কারণ নির্ণয় করে দেন কার্ডিওলজিস্ট। তিনি নানাবিধ ঔষধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের মাধ্যমে রোগের চিকিৎসা করে থাকেন।
  • কনজেনিটাল বা জন্মগত হৃদরোগের চিকিৎসা, হৃদযন্ত্রে ফুটো বা ফাটল, হৃদযন্ত্রের ভালভ নষ্ট নিয়ে জন্ম নেয়া বা ভাল্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়া,হৃদযন্ত্রে ব্লক বা রক্তপ্রবাহে বাধা,সার্জারির বা অপারেশনের মাধ্যমে বাইপাস বা নতুন পথের সৃষ্টি করা ইত্যাদি একজন কার্ডিয়াক সার্জনের কাজ।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে