শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

শের-এ-বাংলা একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাঙালি কুটনীতিক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের নিকট ‘শের-এ-বাংলা’ এবং ‘হক সাহেব’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের গণমানুষের অবিসংবাদিত মহানায়ক জাতীয় নেতা বাংলার বাঘ খ্যাত আবুল কাশেম ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর তৎকালীন বাকেরগঞ্জ মহকুমার বর্তমানে ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে তার নানার ভিটা সাতুরিয়ার মিয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। শের-এ-বাংলা নামেই তিনি বহুল পরিচিত। তিনি রাজনৈতিক অনেক পদে অধিষ্ঠান করেছেন কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫), পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৬-৫৮) পদ অলঙ্কৃত করেন তিনি। যুক্তফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন তিনি। কাজী মৌলভী ওয়াজেদ আলী এবং সাইদুন্নেসা খাতুন ছিলেন তার বাবা-মা। শের-এ-বাংলার প্রাথমিক পড়াশোনা বাড়িতেই। গৃহশিক্ষকদের কাছে আরবি, ফার্সি, বাংলায় শিক্ষালাভ করেন। ১৮৮১ সালে বরিশাল জিলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। ১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং স্কলারশীপ লাভ করেন। ১৮৯৩ সালে তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে বিএ পাস করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এম.এ ভর্তি হয়ে ১৮৯৬ সালে ইংরেজী ও অংক বিষয়ে এমএ পাশ করেন। ১৮৯৭ সালে ডিষ্টিংশনসহ বি.এল পাস করে মনীষী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অধীনে কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন। একই বছর একাডেমিক শিক্ষার সমাপ্তি টেনে তিনি কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। শিক্ষনবীশ আইনজীবী হিসাবে কিছুকাল অতিবাহিত করে ১৯০০ সালে তিনি এককভাবে কাজ শুরু করে একবছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯০১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী তার পিতা বিশিষ্ট আইনজীবী মৌলভী কাজী ওয়াজেদ আলী মারা যান। পিতৃবিয়োগের পরে তিনি কলকাতা ছেড়ে ফিরে এলেন তার নিবাস বরিশালে। এখানে এসে তিনি নতুন ভাবে আইন ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ১৮৯৬ সালে নবাব আবদুল লতিফ সিআইই’র পৌত্রী খুরশিদ তালাত বেগকে বিয়ে করেন। সেখানে তার দুই কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করলে তার স্ত্রীর অকাল মুত্যু হয়। খুরশিদের মৃত্যুর পর হুগলি জেলার অধিবাসি ও কলকাতায় বসবাসকারী জনাব ইবনে আহমদের মেয়ে জনাবা জিন্নাতুন্নেসা বেগমকে বিয়ে করেন। নিঃসন্তান জিন্নাতুন্নেসা মারা গেলে অবশেষে ১৯৪২ সালে ভারতের মিরাটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের বিদুষী মেয়ে খাদিজা খাতুনকে বিয়ে করেন। ১৯৪৪ সালে খাদিজার গর্ভে একমাত্র পুত্র সন্তান এ.কে ফাইজুল হকের জন্ম হয়। ১৯১৩ সালে শের-এ-বাংলা বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৪ সালে তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেস দলে যোগ দেন। খেলাফত আন্দোলনেও তিনি অংশ নেন। জমিদার মহাজনদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র কৃষকদের বাঁচানোর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন তার বিখ্যাত ঋণ সালিশি বোর্ড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেন। ১৯৩৭ সনে ১৫ অক্টোবর লখনৌ শহরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মহাকালের এই মহান নেতা এ অনুষ্ঠানে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ.কে ফজলুল হক উর্দু ভাষায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে লখনৌবাসীর হৃদয় জয় করেন। তারা ফজলুল হকের অনলবর্ষী ও বীরত্বব্যঞ্জক বক্তৃতায় আকৃষ্ট হয়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে তাকে শেরে-এ-বাংলা উপাধি দেন। সেদিন থেকেই তিনি শেরে বাংলা নামে অভিহিত হন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ