গোপাল ভাঁড় আদেও কেও ছিলেন নাকি শুধু গল্প হাসির রাজা জ্ঞানের রাজা রসিক রাজা গোপাল ভাঁড় আমরা সবাই ছোট বেলায় গোপাল ভাঁড় এর কার্টুন এর ভক্ত ছিলাম।কি মজাদার মানুষ বুদ্ধির জোরে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের সব সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছেন। আদেও কখনো ভেবে দেখছি আদেও গোপাল ভাঁড় কোনো ব্যক্তি নাকি পুরোটাই কাল্পনিক।চলুন দেখে নিই গোপাল ভাঁড় কতটা কাল্পনিক কতটা বাস্তবিক।  প্রচলিত আছে, অল্প বয়সেই তার বাবা মারা যান। গরীব বলে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। গোপালরা জাতিতে নাপিত ছিলেন, আর নাপিতরা হয় ধূর্ত। গোপাল অসম্ভব ধূর্ত ছিলেন, কিন্তু তাকে কখনোই নাপিত বলা চলে না। কেননা, তার নাপিতগিরির কোনো ঘটনা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তার অসম্ভব বুদ্ধিমত্তা তাকে শ্রেষ্ঠ ভাঁড় রূপে পরিচিতি দিয়েছে। বুদ্ধি ও প্রতিভার গুণেই তিনি আজো বাচ্চা-বুড়ো সকলের মনে রয়ে গেছেন। তবে,গোপাল ভাঁড়ের গল্প মুখে মুখে, লোককথায় বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে অনেকদিন থেকে চলে এলেও গোপালের নাম জনপ্রিয় হয় প্রধানত উনিশ শতকের প্রথম দিকে। সে সময় কলকাতার বটতলায় গোপালের প্রথম বই প্রকাশিত হয়। নদীয়ার স্বনামধ্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়-এর সভার ভাঁড় নানা সময় নানা সমস্যার সমাধান গল্পে গল্পে করে দিতেন। এ জন্য তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন। তবে এই ইতিহাস নিয়েও সন্দেহ আছে। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় গোপাল নামক কারো উপস্থিতির প্রমাণ কোনো দলিলে পাওয়া যায়নি।  তো, গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্বের সন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা নানা প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। গোপালের জন্ম কত বঙ্গাব্দে তা কোথাও লেখা নেই। তার জন্মস্থানের পক্ষেও কোনো নথি নেই। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা হিসেবে তার সম্পত্তির কিংবা জায়গা-জমির কোনো নথি পাওয়া যায় না। নগেন্দ্রনাথ দাস বিরচিত নবদ্বীপ কাহিনি দাবি করে, গোপালের বাবার নাম জানা গেলেও তার মা ও স্ত্রী সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। গোপালের ছবি কেউ কখনো দেখেনি। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পঞ্চরত্নসভার রাজকবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর মহারাজ, তার রাজত্ব ও সভাসদদের নিয়ে যে কাব্যগ্রন্থ লিখে গেছেন সেখানেও তিনি গোপাল ভাঁড়ের কোনো নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির মহাফেজখানায় গোপালের অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ কোনো দলিল দস্তাবেজ নেই। তবে শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে গোপালের ছবি বলে একটি অয়েল পেইন্টিং ঝোলানো রয়েছে, যেখানে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রও রয়েছেন। সেটি নিয়েও ঐতিহাসিক মহলে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার সময়ের কোনো বই-পুস্তক ইত্যাদিতেও গোপাল ভাঁড়ের কোনো নাম পাওয়া যায় না, এমনকি তার নিজের লেখাও কোনো বই নেই। তবে গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষকরা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সন্দেহই প্রকাশ করেছেন। তিনি ছিলেন কী ছিলেন না—এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারেননি।  নবদ্বীপ কাহিনি বা ‘মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়’ বইটির লেখক নগেন্দ্রনাথ দাস গোপাল ভাঁড়ের একটি বংশ-লতা প্রকাশ করেছিলেন। সেই তালিকায় গোপাল ভাঁড়ের পিতামহ, পিতা ও বড় ভাইয়ের নাম পাওয়া যায়। আর গোপাল ভাঁড়ের গল্পগুলোতে তার মা, স্ত্রী ও কন্যার প্রসঙ্গ রয়েছে নানাভাবে। নগেন্দ্রনাথ দাস বলছেন, গোপাল ভাঁড় আসলে ছিলেন গোপালচন্দ্র নাই। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে রাজভাণ্ডারি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গোপালচন্দ্র ভাণ্ডারি হাস্যার্ণব উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ওই ভাণ্ডারি শব্দটিরই অপভ্রংশ থেকে ভাঁড় হয়ে গেছে। তো, গোপালের পদবী ছিল ‘নাই’। ‘নাই’ শব্দের অর্থ নাপিত। হতেই পারে গোপাল ছিল নাপিত বংশজাত। ঐতিহাসিক ও ভাষাবিদ সুকুমার সেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘গোপাল ভাঁড় সম্পর্কে আধুনিক বাঙালির কৌতুহল থাকার ফলে বাস্তব অথবা কল্পিত ব্যক্তিটির সম্পর্কে যে জনশ্রুতি জাতীয় ঐতিহ্য গজিয়ে উঠেছে ও উঠছে তার বীজ হচ্ছে ভাঁড় নামের অংশটি। গোপাল ভাঁড়ের ভাঁড়টুকু সংস্কৃত শব্দ ভাণ্ডারের ‘ভাণ্ড’-জাত মনে করে অনেক গোপালের জাতি নির্ণয় করেছেন। নাপিতের জাতি ব্যবসায় ভাঁড়-ক্ষুর নিয়ে। সুতরাং গোপাল ভাঁড় নাপিত।’  তবে কিছু গবেষক ‘নবদ্বীপ কাহিনি’ বইটিকে গোপাল ভাঁড়ের প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ বলে মেনে নিতে রাজি নন। এমনকি গ্রন্থটিতে প্রকাশিত বংশ- লতাও সঠিক বলে মেনে নেন না তারা। কেননা, নবদ্বীপ কাহিনির যিনি লেখক তিনি গোপালের আপন বড় ভাই কল্যাণচন্দ্র নাইয়ের সরাসরি বংশধর হিসেবে নিজেকে দাবি করেন এবং নগেন্দ্রনাথ নিজেকে দাস বলে পরিচয় দিয়েছেন। নাই থেকে তারা দাস-এ পরিবর্তিত হলেন কবে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য নগেন্দ্রনাথ দাস জানাননি। তবে তার বংশধরদের দাবি, নগেন্দ্রনাথ বাবু নিজেই নিজের পদবী পরিবর্তন করে নাই থেকে দাস হয়েছিলেন। পরে তার বংশধররা দাস হিসেবেই পরিচিত হয়।  ঐতিহাসিক দীনেশচন্দ্র সেন তার ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ (৮ম সংস্করণ) বইটিতে লিখেছেন, হাস্যার্ণব উপাধিটি কাহার তাহা বলা শক্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ভাঁড় শব্দটি কদর্থে না ধরিয়া বিদূষক বলা যাইতে পারে।’ তো, যতদূর জানা যায়, গোপালচন্দ্রের অসামান্য বুদ্ধি গুণে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র অনেকবার নবাব সরকারের কাছে ঘোর বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন। তার বাক্য প্রয়োগে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ভগবত ও পুরাণে তার যথেষ্ট দখল ছিল, রামায়ণ-মহাভারত আদ্যপান্ত ছিল তার মুখস্থ। এমনকি রাজনীতি ও সমাজনীতিতেও তিনি ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। মহারাজের কৃপায় কৃষ্ণনগরের ধনী ব্যক্তি হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া ও ইত্তাকাফ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ