কার্ল অর্নস্ট লুডুভিগ মার্কস প্ল্যানক।তার ( জন্ম ২৩শে এপ্রিল ১৮৫৮ - মৃত্যু ৪ই অক্টবর ১৯৪৭)। জার্মান তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। তার শক্তির কোয়ান্টা অবিষ্কার তাকে জিতিয়ে ছিল।তিনি ১৯০৮ সালে পদার্থে নোবল পুরুষ্কার।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান বিশ্বাস করতো কোনো উষ্ণ বস্তু থেকে শক্তির বিকিরণ অবিচ্ছিন্নভাবে হয়। এই বিশ্বাস থেকে বিজ্ঞানকে বের করে আনেন এক মহান বিজ্ঞানী। তিনিই হচ্ছেন ম্যাক্স কার্ল আর্নেস্ট লুডভিগ প্ল্যাঙ্ক। ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানকে এবং বিশ্বকে বোঝার ও জানার ক্ষেত্রটি চিরতরে বদলে যায় যখন তিনি আবিষ্কার করলেন কোনো উষ্ণ বস্তু থেকে শক্তির বিকিরণই অবিচ্ছিন্নভাবে হয় না বরং নির্দিষ্ট পরিমাণে বিচ্ছিন্নভাবে নির্গত হয়। তিনি সূচিত করলেন পদার্থবিজ্ঞানের এক নতুন বিস্ময়কর ধারা যার নাম ‘কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান’। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব যেমন স্থান, কাল, মহাকর্ষ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আমাদের ধারণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে, প্ল্যাঙ্ক এর কোয়ান্টাম তত্ত্বও তেমনি পারমাণবিক, অতিপারমাণবিক ব্যাপারগুলো বোঝার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ২৩ এপ্রিল ১৮৫৮ সালে জার্মানিতে জোনাথন প্ল্যাঙ্ক এবং এমা পেটজিগ-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। জোনাথন ছিলেন একজন আইনের প্রফেসর। এমাও স্বশিক্ষিত ছিলেন। নয় বছর বয়সী ম্যাক্স জার্মানীর কিয়েল শহরে একটি এলিমেন্টারি স্কুলে ভর্তি হন এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে প্রবেশ করেন। তার প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতেও বেশি সময় নেয়নি। স্কুলের গণিত শিক্ষক হারমান মুলার বুঝতে ভুল করেননি যে ম্যাক্স আর যাই হোক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো নয়। ম্যাক্সের গণিতের প্রতিভা ছিল অন্য সকলের চেয়ে অনেক বেশি। হারমান তাই ম্যাক্সকে বাড়তি করে জোতির্বিজ্ঞান ও বলবিদ্যা পড়াতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মেধাবী ম্যাক্স অত্যন্ত উৎসাহের সাথেই লুফে নেন এই প্রস্তাব। আর হারমানের কাছেই তিনি লাভ করেন পদার্থবিজ্ঞানের সাধারণ ও মৌলিক কিছু বিষয়ের ধারণা। ম্যাক্সের প্রতিভা যে কেবল গণিতে আটকে ছিল তা কিন্তু নয়। সঙ্গীত চর্চায়ও তিনি ছিলেন অনবদ্য। ক্লাসিক্যাল গানগুলো তিনি তার চমৎকার কণ্ঠে গাইতেন যা মন্ত্রমুগ্ধের মতোই শুনতো তার শ্রোতারা। অন্যদিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পিয়ানো বাজানোও শিখে নেন তিনি। মাধ্যমিক স্কুলে নিজের সঙ্গীত দক্ষতা তাকে বেশ সুনামও এনে দেয়। অনেকে গায়ক হবার পরামর্শও দেন তাকে। কিন্তু স্কুল ছাড়ার আগে তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানই হবে তার জীবনের আসল সঙ্গী। গান থাকবে কেবলই শখ হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্স জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়; ছবিসূত্রঃ applysquare ১৮৭৪ সালে সতেরো বছর বয়সে ম্যাক্স পাড়ি জমান জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে গেলে সে বিভাগে প্রফেসর ফিলিপ ভন জলি তাকে বলেন, “পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক সবকিছুই আবিষ্কৃত। যা বাকি আছে তা হচ্ছে কেবল তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভুলগুলো শুধরানো।” শুধু এ কথাই নয়, ফিলিপ ম্যাক্সের মধ্যে নতুন কিছু করার প্রবণতা দেখে তাকে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে পড়ার পরামর্শও দেন! ফিলিপ যা-ই বলুক না কেন, ম্যাক্স ভর্তি হলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগেই। পদার্থবিজ্ঞান পড়া শুরু করেই তিনি মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন পদার্থবিদের উপর বিরক্ত হন। তার নিকট যার চিন্তা-চেতনা সবচেয়ে বেশি হাস্যকর মনে হতো তিনি আর কেউ নন, সেই ফিলিপই। ফিলিপ ধারণা করতেন ততদিনে পদার্থবিজ্ঞানের সকল আবিষ্কার হয়ে গেছে এবং মহাবিশ্বের যা কিছু বোঝার মানুষ বুঝে ফেলেছে! আর মজার ব্যাপার হলো ফিলিপের এই ধারণা সমকালীন আরও অনেক পদার্থবিদই সমর্থন করতেন! উত্তর ইতালির কোমো লেক; ছবিসূত্রঃ mysnowglobes ১৮৭৭ সালে বসন্তের ছুটিতে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক কার্ল রাঞ্জ-এর তত্ত্বাবধানে বন্ধুদের সাথে ইতালির উত্তরাঞ্চলে হাইকিংয়ে যান। রাঞ্জ সেখানে ছাত্রদের সামনে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেন। তিনি জানতে চান খ্রিষ্টধর্ম কি পৃথিবীতে ভালোর চেয়ে মন্দ কাজই অধিক করেনি? লুথারান মতবাদে বিশ্বাসী ম্যাক্সের মনে এই প্রশ্ন বেশ জোরেশোরেই আঘাত করে। তিনি আমৃত্যু লুথারান ছিলেন। নাস্তিকতাকে তিনি অস্বীকার করতেন। তবে ভিন্নমত ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাপগতিবিদ্যা এবং প্রথম চাকরি ১৮৭৭ সালে ২০ বছর বয়সী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক বার্লিনের ফ্রেডরিখ উইলহেলম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য বদলি হন। সেখানে তিনি হেলমহল্টজ নামক এক পদার্থবিদের সাহচর্যে আসেন যার সাথে পরবর্তী সময়ে তার বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। হেলমহল্টজের তাপগতিবিদ্যার প্রতি ছিল ভীষণ ঝোঁক যা অল্প সময়ের মধ্যেই ম্যাক্সের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। শুরু হয় তাপগতিবিদ্যা বিষয়ক পড়াশোনা। ক্লসিয়াসের গবেষণাপত্রে তার যতটা ঝোঁক সৃষ্টি হয়, তার অর্ধেকও ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস লেকচারে! ১৮৭৮ সালের শেষ দিকে বার্লিন থেকে ম্যাক্স মিউনিখে ফিরে আসেন। এসেই একটি মাধ্যমিক স্কুলে পদার্থের শিক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ