আন্তর্জাতিক রাজনীতি আন্তর্জাতিক বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। বর্তমান আন্তর্জাতিক ও বিশ্বায়নের যুগে মানুষের জীবনধারা জাতীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় হল রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিরাজমান বৈচিত্রতা। প্রত্যেক রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও সরকারের কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।তথাপি তাদের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট সাদৃশ্য। যেসব বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরিধির মধ্যে পড়ে সেই সকলবিষয়ের প্রকৃতি থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কতগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ দেওয়া হলঃ

নির্দিষ্ট সীমানা  ঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি নির্দিষ্ট সীমানা রয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাসমূহ কে নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকাভিত্তিক চিহ্নিত করা যায়। এ সমস্ত ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে সকল রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ঘটনা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকে সেগুলো কে চিহ্নিত করা যায়।

একক সমূহ চিহ্নিত করণ ঃ  রাষ্ট্র বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার ও প্রশাসন ও নাগরিকদের ভূমিকায় হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন একক। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এসব একক সমূহ চিহ্নিত করা যায়। কোন রাষ্ট্রে যোগাযোগ বা প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া পদ্ধতির মধ্যে সরকার, প্রশাসন ও নাগরিকদের ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশ্লেষণ করা যায়।

নির্দিষ্ট কাঠামো  ঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে। এ কাঠামোর অর্থ হল ক্ষমতা ও প্রভাবের বৈশিষ্ট্য মূলক বাতিক অবস্থান এবং অধীন সম্পর্ক। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতা কোন একটি রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকতে পারে  আবার একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে ও বঞ্চিত হতে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যখন ক্ষমতা বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বন্টিত থাকে তখন কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রের পক্ষে অন্য কোন রাষ্ট্রের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা সম্ভব হয় না।

পদ্ধতির মাধ্যমে চালিত  ঃ  আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাণিজ্যিক সহযোগিতা সংঘটিত হিংসাত্মক কার্যকলাপের অর্থাৎ যুদ্ধ ইত্যাদি হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পদ্ধতি। এসব পদ্ধতিসমূহকে ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি চালিত হচ্ছে।

বহুমুখী শক্তিসাম্য  ঃ  আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিসাম্য কখনো এক থাকেনা। কখনো মেরুকরণ, দ্বিমেরুকরণ আবার কখনো বা একমেরুকরণ বিশ্বব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিশ্ব ব্যবস্থা ছিল বহু মেরুকরণ আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থাৎ ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বিশ্ব ব্যবস্থা ছিল দ্বিমেরুকরণ ।ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ বর্তমান সময়ে একমেরুকরণ বিশ্বব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

যুদ্ধ ও শান্তি    ঃ  আন্তর্জাতিক রাজনীতি সবসময় সংঘর্ষময়। কেননা বিশ্বের প্রায় সব সময় কোন না কোন সংকট লেগেই আছে এবং এর চরম পর্যায়ে যুদ্ধ ও সংগঠিত হয়েছে। আবার এসব সংকট ও যুদ্ধ নিরসনে বিভিন্ন কৌশল পদ্ধতি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। যুদ্ধ ও শান্তি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এভাবে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে।
পরস্পরের বিরোধিতা যুদ্ধ গঠন অর্থনৈতিক অবরোধ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার প্রচেষ্টা এসবই সাম্প্রতিককালের আন্তর্জাতিক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে