ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন
বন্ধুৱাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মৈবাত্মনা জিতঃ। না শত্রুত্বে বর্ততাদ্যুৈত্ব শক্রবৎ।
(ভ। শী: ৬/৬) যিনি তার মনকে জয় করেছেন, তার মন তার পরম বন্ধু। কিন্তু ঘিনি তা করতে অক্ষম, মনই তার পরম শত্রু।
ক্লান্তত চেনা- তৃতীয় খণ্ড ঐ ব্যাক্তি জড়-অস্তিত্বের দ্বন্দ্বভাবের (যেমন সুখ,দুঃখ বা শীত, শ্ৰীষ্ম ইত্যাদি) দ্বারা বিচলিত হন না। সর্বদা পরমেশ্বরের চিন্তায় নিমগ্ন খান।
ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অনিয়ন্ত্রিত মনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ও বর্ণনা করেছেন।ঐ প্রকার মন সবসময়ই বিভিন্ন প্রকার ইন্দ্রিয় তৃপ্তির পরিকল্পনা করে। ভগবান শ্রীক বলেন – “ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহ সম্বন্ধে চিন্তা করতে করতে মানুষের হাতে আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কাম উৎপন্ন হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। ক্রোধ থেকে সম্মােহ, সম্মােহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম। স্মৃতিবিভ্রম থেকে বুদ্ধিাশ এবং বুদ্ধিাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। অর্থাৎ মানুষ পুনরায় জড়জগতের 'অন্ধকূপে অধঃপত্রিত হয়।"
এইভাবে সংযত মনই আমাদের এই জড় জুগতে থাকাকালীন যাবতীয় দুর্দশার কারন। যদি মন সংযত হয় তাহলে ইন্দ্রিয়গুলি আর আমাদের বিপদে ফেলতে পারে না। বুদ্ধির দ্বারা মনকে পরিচালিত করতে হবে, এখন স্বাভাবিকভাবেই ইন্দ্রিয়গুলি তাকে অনুসরন করবে। রথের সারথীকে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে চিৎকার করে, শক্তি প্রয়োগ করে লাগামকে ধরে রাখতে হবে, যাতে ঘােড়াগুলি নিয়ন্ত্রনে থাকে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ নিয়মিত ভাবে শ্রবন করে বুদ্ধিকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
এইভাবে মনের প্রবৃত্তি সুখ বা পু:খের কারন হয়। মনকে একটা ধারালো ছুরির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঐ ছুরির দ্বারা তাকে হত্যা করা যায় বার সুদক্ষ চিকিৎসক ঐ একই চুরির সাহায্যে কারাে প্রাণ রক্ষা করেন। সেক্ষেত্রে ছুরিটির কোনাে দায় নেই। কারো মন যখন নিয়ন্ত্রিত থাকে তখন তার সাহায্যে জীবনের সর্বোত্তম পূর্ণতা লাভ করা যায়। তিনি স্বেচ্ছায় পরমেশ্বর ভগবানের যিনি হৃদয়ে পরমালরূপে অবস্থান করেন) নির্দেশনুসারে চলেন।
জাগ্রত চেতনা— তৃতীয় খণ্ড ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেন
তবিদ্ধিপ্রনিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া। উপদেক্ষ্যান্ট্রি তে ম্লানং জ্ঞানিনব্রদর্শিন।
(ভ: গী: ৪/৩৪) - সদগুরুর শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্রচিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারাকে সন্তুষ্ট কর। তা হলে সেই তদ্রষ্টা পুরুষ তােমাকে ম্লান উপদেশ দান শখেন।
এই পদ্ধতি অনুসরন করলে বুদ্ধি আরাে শক্তিশালী হবে এবং অসংযত মন অচিরেই শান্ত হবে। পারমার্থিক শাস্ত্র নির্দেশ সমুহ বুদ্ধি খাদ্য স্বরূপ। ঐ সকল বুদ্ধি বৃত্তিকে বিকশিত করে এবং মনকে পবিত্র করে তােলে। যখন বুদ্ধি(চালক) দক্ষ, শক্তিশালী হয়, তখন সে মৰ্শকে লাগাম দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ফলে আত্মা (অাৱােহী) শান্তিপূর্ণ ভাবে ভ্রমন করতে পারঝে। কিস্তু যতক্ষন বুদ্ধি মনের থেকে দুর্বল থাকে, ততক্ষন আমাদের জীবনে সুখ বা শান্তি কোনােটাই সম্ভব নয়।
জাগ্রত চেতনা— তৃতীয় খণ্ড যদা সংহরতে চায়ং মেহিঙ্গানীবসর্বশঃ।।
ইন্দ্রিয়ানীন্দ্রিয়াৰ্থেভসা প্রজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত। কূর্মকচ্ছপ) যেমন তার অঙ্গ সমূহ তার কঠিন বহিরাবরনের মধ্যে সঙ্কুচিত করে, তেমনই যে ব্যক্তি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন, তার চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।
ইন্দ্রিয়লিকে বিষধর সর্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তারা কোনাে নিয়ন্ত্রন ছাড়াই থাকতে চায়। কিন্তু আমাদের দক্ষ সাপুড়ের মতো যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া দরকার যাতে ঐ মলি (ইন্দ্রিয় সমূহ) ছােবল মারতে না পারে। শাস্ত্রে আনেক শিলেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কতগুলি বিধি (করণীয়) এবং কতকগুলি নিষেধ
অকল্পনীয়। ভগবান শ্রীকৃ প্রন্তু কচ্ছপের দৃষ্টান্ত্রটি এক্ষেত্রে খুবই টুম্প। দুল যে কোনাে সময় নিজের ইন্দ্রিয় জুলিকে খােলসেল মধ্যে গুটিয়ে নিতে পারে আবার পুনরায় প্রয়ােজনে বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রকাশ করে।
মন্ত্রখানের মাধ্যমে মনসংযম কচ্ছপের কৌশল। সনাবলীর বিকাশ এবং জীবনে প্রকৃতই সুখী হতে হলে মনকে অবশ্যই সংযত্র করতে হবে। এবিষয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন –
জীবনে বিধিনিয়ম পালনই-প্রকৃত স্বাধীনতা আমাদের অবশ্যই এই প্রকার কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা উচিত যা মনকে এবং চেতনাকে কলুষিত করে তােলে। প্রাথমিক ভাবে সেগুলি হল - মিম্বাহার, জুয়াখেলা, মাদকগ্রহণ বা নেশী ও
জাগ্রত চলা— জীম গ অবৈধ যৌনক্রিয়া। এই কার্যকলাপগুলি অবশ্যই কঠোরভাবে বর্জন করা উচিত। বেশির ভাগ লােকই বলে, “নে আমি যা চাই তা থেকে মাকে বিরত্র হতে বলছে ? আমি স্বাধীন থাকতে চাই যেভাবে আমি পছন্দ করি। প্রকৃতপক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেসীমার কার্যকলাপের কথা বলেছেন তা প্রকৃত স্বাধীনতায় বিধিনিয়ম। কেউ প্রশ্ন করতে পারে, “কি ধরনের স্বাধীনতা এটা? সীমাবব্ধতা মানে স্বাধীন নয়।”
তারা বােঝেন না খারাপ অভ্যাসগুলি অনুশীলন করলে তাদের ইন্দ্রিয়ের অধীন হয়ে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ একন ধূমপায়ী বলতে পারে, “আমি ধূমপান করি, কারন আমি এটা পছন্দ করি, যা আমাকে আমার কাজে মনসংযােগ করতে সাহায্য করে, খুশীর আমেজ প্রদান করে। যখন দেখব, খারাপ লাগছে ছেড়ে দেশ।" তারা এটা বলে শুধুমাত্র অহল্লাৱেীত হয়ে। প্রতপক্ষে এইধরনের লোকেরা ত্রালের অভ্যাসের দাস হয়ে পরে এবং জীবনে তা ভুতে পারে না। পাশ্চত্যিদাশের লোকেরা স্বাধীনত্রীর নামে, বাধ যৌীব, অলাগান ইত্যাদিতে লিপ্ত হয় এবং ঐসব কার্যকলাপে এধি ত্যাস হয়ে পড়ে তাদের মা ঐ সব কালে আরো বেশী। স্থির, উৎপীড়িত করে তােলে। পাশাপাশি তারা ছয়ঙ্কর সব রােগে যেমন এইডস, ক্যান্সার ইত্যাদিতে ম্লান্ত হয়। অবশেষে এই সমস্ত পাপ কর্মের ফলে ত্রালের নরকের পথ প্রশস্ত্র হয় ।
জীৱাত চেনা— তৃতীয় খণ্ড ( অলস মন শয়তানের কারখানা কে প্রশ্ন করতে পারে, আপনি আমাকে কতকিছু কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে বলছেন, তাহলে আমার কি করা উচিত ? আমি অলস নিস্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারি না। আমাকে অবশ্যই কিছু না কিছু করতে হবে।' এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ইন্দ্রিয়গুলিকে শ্রেষ্ঠ পারমার্থিক কার্যকলাপে নিয়ােজিত করা।
ইন্দ্রিয়সমূহ এতই বলবান এবং ক্ষোভকারী যে, তারা অতি শীল বিবেকসম্পন্ন পুরুষের মনকে বলপূর্বক বিষয়াভিমুখে আকর্ষন করে। ভ: গী: ২৬০) তাই মন এবং ইন্দ্রিয় সমূহকে যদি কুস্রাবলাম আদর্শ কার্যকলাপে নিয়ােজিত করা না হয়, তাহলে তারা সহজেই ড় ইন্দ্রিয় তৃপ্তির দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অন্য কষি, মুনি, দার্শনিক অধ্যাত্মবাদী আছেন, যারা ইন্দ্রিয়গুলােকে দমন করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ঐকান্তিক চেষ্টা সত্বেও এঁদের সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং তারা ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে পড়েন। মহর্ষি বিশ্বামিত্র মতো যােগী, যিনি তার মন ও ইন্দ্রিয়কে সংম্মত করবার
না] গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কঠোর তপস্যায় রত ছিলেন, তিনিও স্বার্গের অপ্সরা মেনকার রূপে মুগ্ধ হয়ে কামান্ধ হয়ে অধঃপতিত হল পৃথিবীর ইতিহাসে এইম অনেক ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় । এর থেকে বােঝা যায়, কৃষ্ণভক্তি ছাড়া মন ও ইন্দ্রিয়কে সংযত করা তাক্ত কঠিন। মনকে শ্রীকৃষ্ণে নিয়ােহিত না করে, কেউই জাগতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত হতে পারে না।