আনন্দবিহার এলাকার সর্ববৃহৎ পুকুরসহ সমগ্র আনন্দবিহার কমপ্লেক্সটি সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকের কোন এক সময়ে নির্মিত হয়। ধারণা করা হয় দেব রাজবংশের তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দ দেব এটি নির্মাণ করেন।

আনন্দবিহার বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ ও প্রাচীন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি কুমিল্লা জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এই অঞ্চলটি প্রসিদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ময়নামতীর অন্তর্ভুক্ত। আসলে ময়নামতীতে আবিষ্কৃত প্রাচীন সৌধমালার মধ্যে আনন্দবিহার বৃহত্তম।

আবিষ্কারের ইতিহাস

ঠিকাদার এবং ইট ব্যবসায়িদের দ্বারা এই অঞ্চলটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো যদি না ১৯৪৪ - ৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটি কর্তৃপক্ষের নজরে আসতো। অবশ্য এর পরও ময়নামতী সেনানিবাস তৈরির সময় বিহারটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর থেকে নিয়মিত খনন কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক খননকাজের পর খননকাজ আর তেমন এগোয়নি। আনন্দবিহারের খননকাজ এখনও সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। উত্তর সারির কয়েকটি কক্ষ এবং মাঝখানে অবস্থিত মন্দিরটির দক্ষিণ দিকের অংশবিশেষের খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনেক অংশেই খনন করা হয়নি।

কাঠামো

এখন পর্যন্ত যতটুকু খননকাজ হয়েছে সে অনুসারে দেখা যায় এই বিহারের অভ্যন্তরেশালবণ বিহারের মত একটি সুবিশাল বিহারের কাঠামো রয়েছে। এই বিহারটি বর্গাকৃতির যার প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৯৮ মিটা করে। এরকম মোট চারটি বাহু রয়েছে। প্রতিটি বাহুতে সুবিন্যস্ত সন্ন্যাসীদের কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলো একটি বিরাট ক্রুশ আকৃতির জাঁকালো মন্দিরের চারপাশ ঘিরে অবস্থান করছে। মন্দিরটি বিহারের খোলা আঙিনার মধ্যস্থলে অবস্থিত। এর উত্তরদিকের ঠিক মধ্যভাগে একটি প্রবেশদ্বার লক্ষ্য করা যায়, এটি বিহারের একমাত্র প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারটির বাইরের অংশ বৃহৎ পরিসরে গঠিত এবং বাইরের দিকে সম্প্রসারিত। সব মিলিয়ে বিহারটি শালবণ বিহারের চেয়ে বড় ও বিস্তৃত।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

বিহারের বহিঃপ্রাচীরটি বেশ পুরু এবং দেখতে খুব সুন্দর। কারণ এর দেয়ালেঅফসেট ও ছাঁচের তৈরি নকশা রয়েছে। ভেতরের বারান্দার দেয়ালও ছাঁচ দ্বারা অলংকৃত। ভেতরের এই দেয়ালটি নকশা করা ইট দ্বারা সুসজ্জিত। খননকাজে যে অংশগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, এগুলো দীর্ঘ কাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। বিশাল আকৃতির এই বিহারে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে:

  • একটি তাম্রশাসন
  • ৬৩ টি রৌপ্য মুদ্রা
  • অনেক গুলো ব্রোঞ্জ মূর্তি
  • পোড়ামাটির ভাস্কর্য ফলক
  • মঠের বাইরে মৃৎপাত্র পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত একটি ভাঁটির অস্তিত্ব

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে