বার্নার্ড স্যান্ডার্স (জন্ম ৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪১) একজন মার্কিন রাজনীতিবিদ ও বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের একজন সদস্য (সিনেটর)। তিনি গণমাধ্যমে সাধারণভাবে বার্নি স্যান্ডার্স নামেই বেশি পরিচিত। তিনি ২০০৬ সালে ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যের একজন সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন এবং এরপর আরও দুইবার (২০১২ ও ২০১৬ সালে) পুনর্নির্বাচিত হন।

স্যান্ডার্স নিউ ইয়র্ক শহরের ব্রুকলিন এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চশিক্ষার্থে তিনি প্রথমে ব্রুকলিন কলেজে পড়াশোনা করেন ও পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক উপাধি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি মার্কিন নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ভার্মন্ট অঙ্গরাজ্যে বাস করা শুরু করেন এবং সেখানে ১৯৭০-এর দশকে বেশ কয়েকবার তৃতীয় দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, যদিও সফল হননি। ১৯৮১ সালে তিনি ভার্মন্টের বৃহত্তম শহর বার্লিংটনের নগরপাল বা মেয়র নির্বাচিত হন এবং এরপর একই পদে আরও তিনবার নির্বাচিত হন (১৯৮৯ সাল পর্যন্ত)। এরপর তিনি ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা হাউস অফ রেপ্রেজেন্টেটিভ্‌সের একজন সদস্য বা রেপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন।

দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বার্নি স্যান্ডার্স একজন নির্দলীয়, স্বাধীন সাংসদ ও কোনও দলের অনুগত নন। তিনি মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা নির্দলীয় সাংসদ। তবে কর্মক্ষেত্রে তিনি প্রায়শই সিনেটের ডেমোক্র্যটিক পার্টির সংসদীয় দলের সাথে একত্রে কাজ করেন। এমনকি ২০১৫-২০১৬ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন সদস্যও ছিলেন। ২০১৬ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন পর্বে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে নিজেকে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী মনোনয়নের অভ্যন্তরীণ "প্রাইমারি" নির্বাচনে তিনি আশাতীত সাফল্য অর্জন করেন। বিশেষ করে তরুণ ভোটার শ্রেণী ও শ্রমিক শ্রেণীর ভোটারদের কাছে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রায় ৪৩% ডেলিগেট বা প্রতিনিধির ভোট অর্জন করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়নের দৌড়ে হিলারি ক্লিনটনের কাছে হার স্বীকার করেন; হিলারি ৫৫% ডেলিগেটের ভোট অর্জন করেছিলেন।

২০১৬ সালে বার্নি স্যান্ডার্সের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড বেশ কয়েকটি কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি তার নির্বাচনী তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তথা কর্পোরেশন, আর্থিক সংগঠন যেমন ব্যাংক, এবং যেকোন ধরনের “সুপার প্যাক” (অতিরিক্ত নির্বাচনী তহবিল গঠনকারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডমূলক সমিতি)-এর কাছ থেকে সব ধরনের বড় অঙ্কের টাকার অনুদান প্রত্যাখান করেন। তিনি দাবী করেন যে তার নির্বাচনী প্রচারণা কর্মকাণ্ড একটি “রাজনৈতিক বিপ্লব” শুরু করেছে, যেখানে বিশাল অঙ্কের অনুদানের টাকা উপঢৌকন দিয়ে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায় করার স্থান নেই।

বার্নি স্যান্ডার্স নিজেকে একজন প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। শ্রমিকের অধিকার বৃদ্ধি এবং মার্কিন সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ তার লক্ষ্য। তিনি জনগণের করের টাকায় চালিত ও সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটিমাত্র সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, সন্তান জন্মদানজনিত কারণে মাতাপিতার বেতনসহ ছুটিভোগের ব্যবস্থা এবং সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা প্রণয়নের পক্ষে একজন সরব প্রবক্তা। বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে স্যান্ডার্স সামরিক খরচ কমানো, কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তিগুলি আলোচনার সময় শ্রমিকদের অধিকার ও পরিবেশের উপর বাণিজ্যের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নেওয়ার পক্ষপাতী।

২০১৯ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি তারিখে বার্নি স্যান্ডার্স ২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য আবারও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবার লক্ষ্যে দলের অভ্যন্তরীণ “প্রাইমারি” নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে