Call

মিয়ানমার ।

Talk Doctor Online in Bissoy App

ইসলামে বাসর রাতের কিছু বিধানের উল্লেখ আছে। যেগুলো একজন ঈমানদার নারী ও একজন মুমিন পুরুষের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বিধানগুলো সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো- 

(১) বিয়ের নিয়ত করা: নারী এবং পুরুষের উভয়েরই উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজেকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখার নিয়ত করা। বিয়ের মাধ্যমে উভয়েই সদকার ছাওয়াব লাভ করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সকলের স্ত্রীর সঙ্গমপথে রয়েছে ছাদকার সওয়াব। সাহাবায়ে কেরামগন রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন যে হে রাসূলুল্লাহ জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য সে কি নেকী লাভ হবে? রাসূল (সা.) সাহাবীদের জবাবে বললেন, ‘যদি কেউ সেই জৈবিক চাহিদা হারাম উপায়ে মেটায় তাহলে কি তার জন্য কোনো গুনাহ লেখা হত না? (অবশ্যই হতো) তেমনি সে চাহিদা হালাল উপায়ে মেটানোয়, তার জন্য নেকী লেখা হয়।’

 (২) একসঙ্গে সালাত আদায় করা: আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) কতৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন যে, ‘স্ত্রী যখন স্বামীর কাছে যাবে, তখন স্বামী সামনে দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকা‌‌ত সালাত আদায় করবে এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করবে- ‘হে আল্লাহ পাক আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দান করুন আর আমার ভেতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। আপনি তাহাদের থেকে আমাকে রিজিক দান করুন আর আমার থেকে উনাদেরও রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সঙ্গে একত্রে রাখুন আর বিচ্ছেদ হলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটাবেন।’ 

(৩) স্ত্রীর মাথায় ডানহাত রেখে দোয়া পড়া: রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বিষয়ে বলেন- তোমাদের কেউ যখন কোনো নারী (স্ত্রী), ভৃত্য বা বাহন থেকে উপকৃত হয় তবে তার মাথার অগ্রভাগে হাত রেখে বিসমিল্লাহ পড়ে দোয়া কর। ‘হে আল্লাহ পাক আপনার কাছে আমার স্ত্রীর এবং তার স্বভাবের কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং তার ও তার স্বভাবের অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’

 (৪) নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকা: আবূ হুরায়রা (রা.) কতৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে- ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতী নারীর সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে অথবা গনকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস করে, সে যেন আমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করলো।’ এর থেকে বোঝা যায় যে, মেয়েদের (স্ত্রীর) ঋতু চলাকালীন সময়ে তাদের সঙ্গে সঙ্গম থেকে দূরে থাকতে হবে।

 (৫) ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে যা কিছুর অনুমতি রয়েছে: স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমপথ ও নিষিদ্ধ পথ ব্যবহার ছাড়া অন্য সব আচরণের অনুমতি রয়েছে। স্ত্রী পবিত্র হবার পর তার সঙ্গে সবকিছুই বৈধ। এসময় তার পাশে থাকা বা তার সঙ্গে সময় কাটানোতে কোনো সমস্যা নাই।

 (৬) সঙ্গমের সময় দোয়া পড়া: স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসকালে উল্লেখিত দোয়া পড়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি স্ত্রীর সহিত সঙ্গমকালে বলে, (আল্লাহ পাকের নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করুন আর আমাদের যা দান করেন তা থেকে দূরে রাখুন শয়তানকে) তবে সে মিলনের ফলে কোনো সন্তান হলে শয়তান ঐ সন্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ এছাড়াও বীর্যপাতের সময় বীর্যপাতের দোয়া পড়া উচিত।

 (৭) সঙ্গমের পর অযূ বা গোসল করা: সহবাসের পর সুন্নাত হলো অযূ বা গোসল করে ঘুমানো। অবশ্যই গোসল করা উত্তম। আম্মার বিন ইয়াসার (রা.) রাসূলের একটি হাদিস বর্ণনা করেন যে, ‘তিন ধরনের ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা যায় না আর তারা হলো: কাফির ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র শরীর বিশিষ্ট ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে অযূ করে।’ 

(৮) স্ত্রী সঙ্গে কাটানো সময়ের গোপন তথ্য প্রকাশ না করা: বিবাহিত ব্যক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো স্ত্রীর সঙ্গে কাটানো সময়ের গোপন তথ্য কারো কাছে প্রকাশ না করা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার মতো গোপন বিষয় প্রচার করে।’ 

(৯) বিবস্ত্র হয়ে সঙ্গম না করা: সহবাস করার সময় একদম বিবস্ত্র হওয়া উচিত না কারণ এতে সন্তান নির্লজ্জ হয়ে জন্মগ্রহণ করে। সহবাসের সময় অবশ্যই গায়ের ওপর কোনো পাতলা চাদর বা অন্য কোনো বস্ত্র ব্যবহার করা উচিত। পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামে সকল বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করার মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। সুতরাং, প্রত্যেক নব-বিবাহিত দম্পতির উচিত, বাসর রাতের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে আনন্দ-উৎসবের নামে অবহেলায় ও অনর্থক কাজে নষ্ট না করে নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নিকট কল্যাণ কামনা করা। 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই উত্তম আমল করার তওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন

Talk Doctor Online in Bissoy App