“পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” [ সূরা আল-মুলক : ১ ]

·

“নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখে ভয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।” [ সূরা আল-মুলক : ১২ ]

·

হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। [ সূরা আল বাকারা : ১৫৩ ]

·

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আসমান সমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। [সূরা আরাফ, আয়াত ৫৪]

.

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হন। [সূরা ইউনুস, আয়াত ৩]

.

আল্লাহ যিনি আসমান সমূহ উপরে স্থাপন করেছেন খুঁটি ছাড়া, তোমরা তা দেখছো। অতঃপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। [সূরা রাদ, আয়াত ২]

.

উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা আরশে সমুন্নত আছেন। কিভাবে সমুন্নত আছেন, এ কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “কাইফিয়াত বা (সমুন্নত হওয়ার) পদ্ধতি অজ্ঞাত আর ইসতাওয়া বা সমুন্নত হওয়াটা জ্ঞাত। এর প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করা বিদআত”। [ইমাম বাইহাক্বীর আল আসমা ওয়াস সিফাত, পৃষ্ঠা ৪০৮ ।। তামহীদ ৭/১৫১]

.

আল্লাহ তায়ালা আসমানের উপর আছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশের উপর রয়েছেন তিনি তোমাদের সহ ভূমিকে ধসিয়ে দিবেন না? আর তখন ওটা আকস্মিকভাবে থরথর করে কাঁপতে থাকবে। অথবা তোমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, আকাশের উপর যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী ঝঞ্ঝা বায়ু প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী”। [সূরা মুলক, আয়াত ১৬-১৭]

.

মু’আবিয়া বিন আল হাকাম আস সুলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার এক দাসী ছিল। সে উহুদ ও জাওওয়ানিয়্যাহ এলাকায় আমার বকরীপাল চড়াতো। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম তার বকরীপাল থেকে বাঘে একটি বকরী নিয়ে গিয়েছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মত একজন মানুষ। তাদের মত আমিও ক্ষোভ ও চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলাম (এবং সব কথা বললাম) কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল, আমি কি তাকে মুক্ত করে দিবো? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে এনে রসূলুল্লাহর কাছে হাজির করলাম। তিনি তাকে (দাসীকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ কোথায়? সে বললঃ আকাশে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, সে একজন মুমিনাহ নারী। [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদঃ মসজিদ ও সালাতের স্থান সমূহ, হাদিস নং ১০৮৬]

.

আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ যয়নব (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্যান্য স্ত্রীগণের উপর গর্ব করে বলতেন যে, তাঁদের বিয়ে তাঁদের পরিবার দিয়েছে আর আমার বিয়ে আল্লাহ সপ্তম আসমানের উপর থেকে সম্পাদন করেছেন। [সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ তাওহীদ, হাদিস নং ৭৪২০]

.

আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যমীনে যারা আছে তাদের প্রতি দয়া করা, আকাশে যিনি আছেন (আল্লাহ) তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। [তিরমিযী, হাদিস নং ১৮৪৭ ।। আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২০৯]

.

ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহ আসমানে আছেন নাকি যমীনে আছেন আমি তা জানি না, সে কুফরী করবে। অনুরূপভাবে যে বলবে আল্লাহ আরশে আছেন কিন্তু তাঁর আরশ আসমানে নাকি যমীনে আমি তা জানি না, সেও কুফরী করবে। [আল ফিকহুল আবসাত, পৃষ্ঠা ৪৬ ।। মাজমুউ ফাতওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৫/৪৮ পৃষ্ঠা]

.

ইমাম আবু হানীফা রহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা উপর থেকে বান্দার আহ্বানে সাড়া দেন, নিচ থেকে নয়। কেননা নিচ রুবুবিয়্যাহ ও উলুহিয়্যাতের কোন গুণের মধ্যে পড়ে না। [আল ফিকহুল আবসাত, পৃষ্ঠা ৫১]

.

ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ আল্লাহ হচ্ছেন আসমানে আর তাঁর জ্ঞান সব জায়গায় বিরাজমান। [মাসায়িলি ইমাম আহমাদ, পৃষ্ঠা ২৬৩ ।। ইবনু আব্দিল বার বর্ণনা করেছেন আত তামহিদ, ৭/১৩৮]

.

ইমাম শাফেঈ বলেছেনঃ ঐ সুন্নাহ বা রীতির ব্যাপারে কথা হলো যে সুন্নাহ বা রীতির উপর আমি আছি এবং আমার সাথীদেরকে দেখেছি তার উপর। আর আহলে হাদিসদেরকে দেখেছি যাদের কাছ থেকে আমি ইলম গ্রহণ করেছি যেমন সুফইয়ান, মালিক এবং অন্যান্যরা তারা ঐ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। আর তা হল এ স্বীকৃতি দেয়াঃ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। এবং আল্লাহ তায়ালা আসমানে আরশের উপর রয়েছেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তার সৃষ্ট জীবের নিকটবর্তী হন এবং আল্লাহ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই দুনিয়ার আসমানে নামেন। [ইজতিমাউল জুউশিল ইসলামী, পৃষ্ঠা ১৬৫ ।। ইসবাতুল উলু, পৃষ্ঠা ১২৪]

.

ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা যেভাবে তিনি চান সেভাবেই তিনি আরশে রয়েছেন। আমরা এর প্রতি বিশ্বাস আনবো এর কোন সীমা বা সিফাত বর্ণনা করা ব্যতীত। কেননা আরশে সমাসীন হওয়া আল্লাহর একটি সিফাত। আর আল্লাহর সিফাত ঐ ভাবেই বর্ণনা করতে হবে যেভাবে তিনি নিজের জন্য বর্ণনা করেছেন। যেখানে কোন চোখের পৌছা সম্ভব নয়। [আদ দূরউ তায়ারুযিল আকলি ওয়ান নাকলি, ২/৩১]




শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে