ময়নাতদন্তের গল্প...........


আরিয়ান খান রমজান

চা'য়ে চিনি কমিয়ে দিয়েন মামা। হালকা পাতি মেরে দিয়েন। বললো সা'দ।
নিজে চিনি কম খাবে তা হয়? না! সবাইকেই চিনি কম খাওয়াবে।
বিকেলের কুয়াকাটায় চা চক্রে আড্ডারত, মুশফিক, সা'দ, তাহমিদ।

বিকেলের কুয়াকাটায় সূয্যিমামার কৃষাণী বধুর রূপ বই খাতায় সব জায়গায় লিখা। সারাদিনের সক্রিয় প্রখরতা  ম্লানে বিকেলে লালিমাভাব নিয়ে নব বধুর সাজ নেয় সূয্যিমামা। কী অসাধারণ দ্যাখতে। চোখ ফিরাতে সায় দেয়না।। যেন কৃষাণী বধুর সৌন্দর্য পর্যটকদের চম্বুকাকার্ষণের মত কাবু করে ফেলে। কুয়াটাকার এই সূয্যিমামার এই কৃষাণী বধুর রূপ, মাল্লা-মাঝির আনাগেনা,কাঁধে জাল নিয়ে জেলেদের নীড়ে ফিরা, নদীস্নান, বালিতে আঙ্গুল টেনে নিজের ও প্রিয় মানুশগুলোর নাম আঁকা যেন পরিযায়ীদের দেয় বারতি আনন্দ, ভালোলাগা।
সন্ধ্যা ফুঁড়ে সূয্যিমামার বিদায়ক্ষণে অন্যদের মত আমিও কিছু ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
একবার আকাশের সূর্যের দিকে তাকায় আরেক সমুদ্রের সূর্যের দিকে তাকায়। এই, এই কি করে সম্ভব
সূর্য কি দুটো হয়ে গেলো নাকি।
আরে আরে হুবহু দুনটাই ত্য একি রকম। কোন পার্থক্য নেই। উভয়টার লালিমাভাবেও কোন রকম তফাত নেয়।
সন্দেহের ঘোর কাটাতে! আচ্ছা দেখি কোনটা আগে অস্ত যায়!
কথাগুলো বিরামহীন বলে যাচ্ছিলো সা'দ।
সহপাঠী মুশফিক  তাহমিদ চাতকপাখির মত কান খাড়া করে শুনছিলো!
এখনও একটি বিষয় নিয়ে খুব ভাবছি!
বললো সা'দ
আপনি একগুয়েমি ক্যান? কিছুই আমাদেরকে শেয়ার করতে চান না! বললো মুশফিক।

ঐযে ঐযে কৃষাণী বধুর তীব্রতা হ্রাসের সময়টা একাকী ভাবতে আমার ভারী'ই ভালো লাগে।

জিজ্ঞাসু স্বরে আচ্ছা বলত্য দ্যাখি, ময়নাদতদন্ত মানে কী?
একে অপরের দিকে বিড়বিড় করে তাকাচ্ছে মুশফিক ও তাহমিদ। অবাকত্বতায় দু'জনই!
মেলা সময় ঠোঁটের নাড়াচড়া অফ রেখে ঝট করেই বললো হাস্যকর সা'দ হাস্যকর।
ময়নাতদন্ত মানে কী তাও বুঝিস না! এটা ভাবার কী আছে? বললো তাহমিদ।
যাব্বাহ! ঠিকি বলছিস তাহমিদ। এটাই ত্য ময়নাতদন্ত।
ঐযে, গত কয়েকদিন আগে মেজর সিনহাকে ময়নাতদন্ত করলো। সিনহার ময়নাতদন্ত করে অতিরিক্ত দুটি বুলেটের রিপোর্ট প্রকাশ করলো!
যা প্রতক্ষ্যদর্শীদের বর্ণানানুযায়ী অতিরিক্ত। এরপরেই রকমারী প্রশ্ন বাঁধলো, অতিরিক্ত বুলেট দু'টি কে মারলো!
যাকগে ঐ আলোচনায় না যায়। মোদ্দাকথা ময়নাতদন্ত মানে গোপনীয়তা প্রকাশ করা। যা বাহ্যিকতার আড়ালে থেকে যায়। এক্টু বিশ্লেষক ভঙ্গিতে বললো মুশফিক।

আচ্ছা ময়নাতদন্ত কী কেবল মার্ডারকৃত মানুশের সাথেই সম্পৃক্ত?  নাকি এর ব্যাপকতা, বিশালতা,গভীরতা আরও অনেকদূরে এগিয়ে?

ঐ ব্যাটা সা'দ তোর অদ্ভুত সব প্রশ্নের উত্তরে পরে যাচ্ছি!  চা ,খাবিনা ? দোকানী ঐ যে কবে চা দিয়ে গেলো! ততক্ষণে চা প্রায় ঠান্ডা!
সব সময় ত্য চা প্রকট গরম করেই গিলছ আজ এক্টু ঠান্ডা করে গিলে দ্যাখ। অবশ্য এর টেস্ট অন্যরকম হবে।

হইছে তোর তাবিল করা লাগবেনা, বলেই চায়ের কাপে চুমুক দিলো তাহমিদ।
তক্ষণে সূর্যিমামা দিনের উজ্জলতা ফুঁড়ে স্বীয় কক্ষের দিতে পথযাত্রী হতে চলেছে। মাল্লা,মাঝিরা নদী ত্যাগে আপন নীড়ে ফিরছে। জেলেরাও অনেকে জাল কাঁধে নিয়ে গ্রামে উঠছে, অনেকে রাতের আঁধারে সমুদ্রে মাছের তালাশে সন্ধ্যালগ্নে ডেঙি ভাসাচ্ছে। বাহারী রঙয়ের পাখির আনাগোনার মাঝে শাদা শাদা বকের নীড়ে ফেরা যেন চোখ চিনিয়ে নিচ্ছে। চরে ভেসে আসা ঢেউয়ের ভেলার কলকল গুঞ্জন,সাথে হিমেল হাওয়ার হিল্লোল মুগ্ধতায় ডুবিয়ে নিচ্ছে। ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেসে আসা শামুক, ফেনা, না কুড়িয়ে দূরে থাক যায়?

সমদ্রের নীরবতায়, পানির কলকলতানে পা ভিজিয়ে
নীড়ান্বেষী শাদা শাদা বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙাদের ঝাকে ঝাকে উড়াওড়ি, হিমেল হাওয়ার হিল্লোলে চুল উড়িয়ে সূর্যিমামা বধু সাজা দেখার মুগ্ধতা, ভালোলাগা অন্যরকম হত যদি প্রিয়সী পাশে থাকতো! 
বললো মুশফিক।

এ্যা এ্যা এ্যা ,বাব্বাহ!
বিয়ের শখ হইছে বুঝি। আগামীতে বউ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দিব নে। চিন্তা করিছ না ।
এই এই না, না, না, বিয়ের শখ হইনি, এমনি কেবল বলছি। আপনার ত্য অনেক ইচ্ছে হচ্ছে বিয়ের।।তাই ত্য
পর্যটক স্পটে এসেও একাকী হেতিরে নিয়ে ভাবনার ঘোরে হারিয়ে যান।

তবে রে........ দাড়া!

টেবিল থেকে ওঠেই দৌড় কাটলো ঢেউয়ের দিকে।
পিছনে তাহমিদও গতিবিধি ভুলে দৌড়াচ্ছে।

কিরে ,কিরে ঐ ঐ বউ পাগলের দল চায়ের বিল দিয়ে যা! ধূর্তরা আমার কাধেই বিলের রেখা টেনে দিলো!
নারী আমি সৌভাগ্য রাণী বুবু বিলটা দিয়ে যাইয়েন।
বেশি না কেবল তিনটে চা, তিনটে বনরুটি!
যাগকে বিল দিয়ে আমিও ছুটলোম ওদের পিছু পিছু
ততক্ষণে ওরা শামুকের খোঁজে এদিক সেদিক ঘুরেফিরছে।

আচ্ছা তোদের কী স্বরণ আছে আমার সেই প্রশ্নের কথা নাকি পাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে খেয়ে ফেলছিস?

ধীর কন্ঠে সমস্বরে বলে ওঠলো সা'দ ভাই কি জানি প্রশ্ন করছিলেন? আসলে পাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে গেছি! বললো তাহমিদ ও মুশফিক।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই হারিয়ে ফেলছিস, সাথে বউ থাকলে ত্য আমাকেই ভুলে যেতি!

বিড়বিড় করে হা হা হা  তাহমিদ। মুশফিকও কম কিসে বউয়ের কথা শুনে লজ্জায় মাাথা নুয়ে ফিকফিক করছে।

যাকগে

ঐ যে বলেছিলাম না ময়নাতদন্তের বিশালতা, ব্যাপকতা কেবল মার্ডারকৃত মানুষের সাথেই সম্পৃক্ত কী না?

হাস্যকর সা'দ ভাই, আপনার উদ্ভট,অদ্ভুত কথা শুনে না হেসে পারিনা। ময়নাতদন্তের ব্যাপকতা ,বিশালতা আবার কিসের? আমরা ত্য দেখি কেবল মানুষের ক্ষেত্রই এর প্রয়োগ হয়। বললো মুুশফিক।

জিজ্ঞাসু স্বরে তাহমিদ বললো, আমিও এতটুকুই জানি। এর আরও গভীরতা থাকলে আপনিই শেয়ার করুন।

আচ্ছা শোন, ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃতব্যক্তির শরীরে বিদ্ধ হওয়া গোপনীয়তা প্রকাশ পায়। কিভাবে মারা হয়েছে তাও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বেড়িয়ে আসে।
ঠিক তদ্রুপ ভাবে যদি আমাদের দেশের প্রতিটি সমাজ, পরিবারকে ময়নাতদন্ত করা হতো তাহলেও বেড়িয়ে আসতো জানা, অজানা সহস্র আহাজারী, অজস্র নির্যাতনের চিত্র! 
সা'দের কথা শুনে মুশফিক ও তাহমিদ যেনেন চাড়কগাছ।

আরেক্টু বিশ্লেষণ করি তাহলে আরও সহজে বুঝতে সক্ষম হবি। দ্যাখ ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ব্যক্তির শরীরে কয়টা বুলেট বিদ্ধ হয়েছে! কিভাবে আঘাত করা হয়েছে, কিছু খাওয়ানো হয়েছে কী না সব পরোক্ষতা প্রকাশ পায়।
তেমনি যদি সমাজকে ময়নাতদন্ত করা হয় তাহালেও বেড়িয়ে আসবে অযাচিত হাজারও বর্ণনা।
প্রকাশ পাবে হাজারো জালিমের চেহারা। উন্মোচন হবে অজস্র ধর্ষকের মুখোশ। যারা দিনবদিন সমাজের অসহায় দুর্বল মানুশদের উপর দিব্যি নির্যাতন করে আসছে। হনন করছে ঘামছেড়া অর্জিত সম্পদ, টাকা পয়সা, চিনিয়ে নিচ্ছে পবিত্র মাা-বোনদের সতিত্ব নামক মহান দৌলত। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ভুক্তভোগিরা নির্দ্বিধায় সব সয়ে যাচ্ছে গোপনে। প্রকাশ করার সাহসিকতা হারিয়ে ফেলেছে।

সা'দের কথাথাগুলো শুনে চোখের কোণে জল জমে গেলো তাহমিদের! গলা খাঁকারি দিয়ে আকাশের দিকে চুপ করে তাকিয়ে ভাবনার গ্রহে হারিয়ে গেলো সে।

কপালে ভাঁজ পড়লো মুশফিকের, চেহারাও বেশ সুর্যিমামার রঙে রঙিত বর্ণ ধারণ করছে। কেমন যেন চিন্তার ঘোরে নিমজ্জিত মনেহচ্ছে!
আসলে এভাবে ত্য ভাবিনি কোনদিন! বললো মুশফিক।

এতক্ষণে পুরোপুরি ময়নাতদন্তের ব্যাপকতা বুঝে আসছে, মুশফিক ও তাহমিদের।

আপনার সাথে ভ্রমণে না আসলে আমাদের অজানার ঘোর কাটতোই না! বললো তাহমিদ।

এক্টু ভাবা উচিত, মাঝমাঝে একাকী ভাবনার জগতে ডুবে গেলে বেড়িয়ে আসে নানান লোমহর্ষক তথ্য!
সুতরাং পরিবার,সমাজ ও দেশকে নিয়ে ভাবা উচিত।

                                সমাপ্ত


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে