শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
NayemSR

Call

তেলাপিয়া মাছের আদি নিবাস আফ্রিকায়। এই মাছের প্রায় ১০০টি প্রজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে নাইলোটিকা ও লাল তেলাপিয়াসহ আরো ক’টি প্রজাতি চাষের উপযোগী মাছ বলে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। কারণ এরা কম সময়ে স্বল্প গভীরতায় বেশী উৎপাদন দিতে সম। গিফট তেলাপিয়ার জাতটি বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত তেলাপিয়া নাইলোটিকার ৮টি জার্মপ্লাজমের মধ্যে পুঞ্জীভূত নির্বাচন (mass selection) পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে WorldFish Centre কর্তৃক ফিলিপাইনে প্রথম উদ্ভাবন করা হয়েছে। পরীামূলক গবেষণায় গিফট জাত ফিলিপাইনের স্থানীয় জাতের তেলাপিয়ার চেয়ে ৬০% অধিক বৃদ্ধি এবং ৫০% বেশি বাঁচার হার প্রদর্শন করেছে। ১৯৯৪-৯৬ সালে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন-চীন, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে এই জাতটির মূল্যায়ন গবেষণার জন্য ডড়ৎষফঋরংয ঈবহঃবৎ এর সার্বিক তত্বাবধানে DEGITA (Dissemination and Evaluation of Genetically Improved Tilapia in Asia) প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে। বাংলাদেশে মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং মাঠ পর্যায়ে গিফট জাতের সাথে স্থানীয় জাতের তুলনামূলক মূল্যায়ন গবেষণা ইতিমধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এই নিরীায় গবেষণা কেন্দ্রের পরিবেশে গিফট জাত স্থানীয় জাতের চেয়ে ৫৭% এবং মাঠ পর্যায়ে গিফট জাত স্থানীয় জাতের চেয়ে ৫২% অধিক উৎপাদনশীল বলে প্রমাণিত হয়েছে। DEGITA প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য দেশসমূহে বিশেষ করে চীন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামেও গিফট জাত ঐসব দেশের স্থানীয় তেলাপিয়া নাইলোটিকা জাতের চেয়ে অধিক উৎপাদনশীলতার বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করেছে। গিফট জাত বাংলাদেশে আমদানি করার পর থেকেই বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এই মাছটির জার্মপ্লাজম সংরণ এবং জেনেটিক সিলেকশন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আরো উন্নত জাত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ১৯৯৬ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৫ এ যথাক্রমে ফিলিপাইন এবং মালয়েশিয়া থেকে আরো দুটি উন্নত জার্মপ্লাজম সংগ্রহের মাধ্যমে এই গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গিফট জাতের তেলাপিয়া দেশে বিদ্যমান অন্যান্য তেলাপিয়ার চেয়ে ইতোমধ্যে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ বেশী উৎপাদনশীল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি নি:সন্দেহে পোনা উৎপাদন ও চাষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জাতের তেলাপিয়া মাছ। বর্তমানে বিজ্ঞানীগণ একে সুপার তেলাপিয়া বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশে ১৯৫৪ সালে থাইল্যান্ড থেকে মোজাম্বিক তেলাপিয়া প্রথম আমদানী করা হয়। এই প্রজাতির তেলাপিয়া দ্রুত প্রজননে সম, ঘন ঘন পোনা উৎপাদন, ছাই বর্ণের এবং কম উৎপাদনশীল হওয়ার কারণে চাষীদের কাছে খুব গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ১৯৭০ সালের দিকে এশিয়ার কতিপয় দেশে তেলাপিয়া নাইলোটিকা স্বল্প সময়ে অধিক বর্ধণের মত আরো কিছু গুণাগুণের কারণে চাষের জন্য দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। ফলে ১৯৭৪ সালে UNICEF প্রথম থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে তেলাপিয়া নাইলোটিকার চিত্রলাদা জাত আমদানি করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ১৯৮৭ সালে দ্বিতীয় বারের মত থাইল্যান্ড থেকে তেলাপিয়া নাইলোটিকার জাত আমদানি করা হয়। লাল তেলাপিয়ার হাইব্রিড জাত ১৯৮৮ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককস্থ Asian Institute of Technology (AIT) হতে আমদানি করা হয়। ১৯৯৪ সালে WorldFish Centre (আগের ICLARM) একটি প্রকল্পের মাধ্যমে গিফট জাতের তেলাপিয়া জেনেটিক জাত উন্নয়ন গবেষণার জন্য আমদানি করে। ২০০৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে লাল তেলাপিয়ার আরেকটি জাত গবেষণার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে। গিফট তেলাপিয়া চাষের সুবিধা এটি উচ্চ ফলনশীল । পুকুরে ১ মিটার গভীরতায় ৩-৪ মাসেই বিপনণযোগ্য হয় । চার মাস পর পর বছরে কমপে তিনটি ফলন চক্র তোলা সম্ভব । যে কোন খাবার এরা পছন্দ করে । সহজে রোগাক্রান্ত হয় না । সহজে পোনা উৎপাদন সম্ভব । অল্প পুঁজিতে চাষ করা যায় । খেতে সুস্বাদু এবং বাজারে চাহিদা বেশী ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ