Sintuorang

Call

আমরা এটা অনেকেই জানি যে মুসলিম বিয়ে একটি দেওয়ানি চুক্তি। এই চুক্তির ফলে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস ও সংসার পালন করেন। বিয়ের ফলে কিছু আইনগত অধিকার যেমন যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি কিছু দায়িত্বও সৃষ্টি হয়। এই দায়িত্বগুলোর মাঝে ভরণপোষণ অন্যতম । ভরণপোষণ হচ্ছে স্বামীর জন্য দায়িত্ব এবং স্ত্রীর জন্য অধিকার। বৈবাহিক সম্পর্কের জন্য থাকা-খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদ, চিকিৎসা ও জীবনধারণের জন্য অন্যান্য যে যে উপকরন লাগবে স্ত্রী তা স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার অধিকারী হন। এই অধিকার স্ত্রী যখন স্বামীর সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে তখন তো থাকবেই, তেমনি কোনো কারনে যদি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরেও তা বলবত থাকবে। তবে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে এটি একটি সীমিত অধিকার এবং সীমাবদ্ধ সময় পর্যন্ত বহাল থাকে। মুসলিম আইনে স্ত্রীর উপর স্বামীর ব্যাপারে কিন্তু একই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়নি। কারণ ধরেই নেয়া হয় যে, বেশিরভাগ মেয়েরা বাবা বা স্বামীর ওপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল। যদিও বতর্মানে বাস্তবতা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সে কারণেই স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাবেন কিন্তু স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো ভরণপোষণ পাবেন না। বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে ভরণপোষণ: যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেই যায় তাহলে বিবাহ- বিচ্ছেদের পরও স্ত্রী কিছুদিন ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। যেদিন থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় সেদিন থেকে ৯০ দিন। বর্তমানে মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমাদের দেশের আদালতগুলো বিশেষ করে উচ্চ আদালত উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেছে। হিফজুর রহমান বনাম সামসুন নাহার বেগম এবং অন্যান্য (৪৭ ডি এল আর ১৯৯৫ পৃষ্ঠা ৫৪) মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয় যে, “স্বামীর অবশ্যই তার তালাক প্রদানকারী স্ত্রীকে এমনভাবে ভরণপোষণ দিতে হবে যা তার জন্য প্রয়োজন, এমনকি ইদ্দতকালিন সময় পার হওয়ার পরেও এই যথাযোগ্য ভরণপোষণ দিতে হবে একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য যতদিন পর্যন্ত সেই তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর অন্য কোনো বিয়ে না হয়”। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই রায়কে দেশের সবোর্চ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দ্বারা রহিত করা হয়। এই একই মামলায় আপিল বিভাগ শেষ পর্যন্ত বিবাহ-বিচ্ছেদের পর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে কেবল তিন মাস (৯০ দিন) অর্থাৎ ইদ্দতকালিন সময় পর্যন্ত ভরণপোষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভরণপোষণ আদায়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীর আইনগত যে অধিকার রয়েছেঃ প্রথমত, ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভরণপোষণের জন্য স্ত্রীর মামলা করার অধিকার আছে। এটি একটি দেওয়ানি প্রতিকার। এই অধ্যাদেশে ভরণপোষণ, দেনমোহর, বিবাহ-বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করার কথা বলা হয়েছে। পূর্বে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৮ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভরণপোষণের মামলা দায়ের করা যেত। ২০০৯ সালে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে এই ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে। (সুত্রঃ বাংলাদেশ গেজেট, ৮ এপ্রিল ২০০৯)। দ্বিতীয়ত, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৯ ধারায় বলা আছে, স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে স্ত্রী স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে এই বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। চেয়ারম্যান সালিশি পরিষদ গঠন করে ভরণপোষণের পরিমান ঠিক করবেন এবং সার্টিফিকেট ইস্যু করবেন। স্বামী এরপরেও নির্ধারিত ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী বকেয়া ভুমি রাজস্বের আকারে তা আদায় করতে পারবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

জ্বী হ্যা, যদি কোন স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হয়, তাহলে সে তার ইদ্দত পালনরত অবস্থায় তালাকদাতা স্বামী হতে প্রয়োজনীয় ভরণ-পোষণ ও সাময়িক বসবাসের জন্য বাসস্থান প্রাপ্ত হবে। এটা স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার। যদি তালাকদাতা স্বামী এ অধিকার পুরা না করে, আর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দত পালনরত অবস্থায় কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় অথবা কোন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যায়, তাহলে এর জন্য উক্ত স্বামী গুনাহগার হবে। আল্লাহ্‌ তায়ালা সর্বজ্ঞানী। 

প্রমাণ এর জন্য সুরা তালাক এর প্রথম কয়েক আয়াতের তাফসির দেখে নিতে পারেন। আরও দেখুনঃ জামে তিরমিযী (ইদ্দত অধ্যায়) আলবাহরুর রায়েক (ইদ্দত অধ্যায়) আদ্দুররুল মুখতার (ইদ্দত অধ্যায়)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ