রমজানে রোযা রাখার তাৎপর্য ও ফযিলত
ব্যাখ্যা করুন, এবং রোযা কবুল হওয়ার
শর্তগুলো উল্লেখ করুন???

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন, আর এ রমজানেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল। এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল, মূর্তি এবং পৌত্তলিকতার পতাকা অবনমিত হয়েছিল। এ মাসে মুসলমানদের অনেক যুদ্ধ জিহাদ এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে। রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য ও দানের মাস বলা হয়। রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্যের বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে মিলে না। পূর্বেকার মুসলমানেরা রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান আসলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত। তার সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নীরব থাকতেন। তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই। সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায়, এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
AbdulHalim

Call
রোজার তাৎপর্য এবং ফজিলতঃ 

রোজা শুধু আল্লাহর জন্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজের সঙ্গে রোজার সম্পর্ক ঘোষণা করেছেন। এমনিভাবে তিনি সব ইবাদত-বন্দেগি থেকে রোজাকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। যেমন তিনি এক হাদিসে কুদসিতে বলেন, 'মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম, তা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।' (মুসলিম -২৭৬০) এ হাদিস দ্বারা আমরা অনুধাবন করতে পারি, নেক আমলের মাঝে রোজা রাখার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কত বেশি। তাই সাহাবি আবু হুরাইরা (রা.) যখন বলেছিলেন, 'ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই।' (নাসায়ি-২৫৩৪) রোজার এত মর্যাদার কারণ কী, তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন। তবে আমরা যা দেখি তা হলো, রোজা এমন একটি আমল, যাতে লোকদেখানো ভাব থাকে না। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার একটি অতি গোপন বিষয়। নামাজ, হজ, জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি কে সম্পাদন করল তা দেখা যায়। পরিত্যাগ করলেও বোঝা যায়। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে লোকদেখানো বা শোনানোর সুযোগ থাকে না। ফলে রোজার মধ্যে ইখলাস, আন্তরিকতা বা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা নির্ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'রোজাদার আমার জন্যই পানাহার ও সহবাস পরিহার করে।' (মুসলিম-২৭৬৩) 


* রোজাদার বিনা হিসাবে প্রতিদান লাভ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি ও সৎকর্মের প্রতিদান বিনা হিসাবে দেওয়া হয় না। বরং প্রতিটি নেক আমলের পরিবর্তে আমলকারীকে ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রতিদান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।' (মুসলিম-১৫৫১)




 *রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল হাদিসে এসেছে, 'রোজা হলো ঢাল ও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ।' (মুসনাদে আহমদ-৯২১৪) বুখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (৭০ বছরের) দূরত্বে সরিয়ে দেবেন।' (মুসলিম-২৭৬৯) 




*রোজা হলো জান্নাত লাভের পথ হাদিসে এসেছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 'আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসুল, আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন, যার দ্বারা আমি লাভবান হতে পারি। তিনি বললেন, 'তুমি রোজা রাখো। কেননা, এর সমকক্ষ আর কোনো ইবাদত নেই।' (নাসায়ি-২২২০) রসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, 'জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।' (বুখারি-১৭৯৭) 




*রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম নবী করিম (সা.) বলেন, 'যার হাতে মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন, সে সত্তার শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহতায়ালার কাছে মেশকের ঘ্রাণ থেকেও প্রিয়।' (বুখারি-১৭৯০) রোজা ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের মাধ্যম যেমন হাদিসে এসেছে, 'রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ : একটি হলো ইফতারের সময়, অন্যটি তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।' (মুসলিম-১১৫১)




 *রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কোরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, 'এরপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।' (মুসনাদে আহমদ-৬৬২৬)



 *রোজা গুনাহ মাফের কারণ ও কাফফারা হাদিসে এসেছে, 'মানুষ যখন পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে, তখন নামাজ, রোজা, সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়।' (বুখারি-১৭৯৫) আর রমজান তো গুনাহ মাফ ও মিটিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ দিয়েছে। হাদিসে এসেছে, 'যে রমজান মাসে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রোজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।' (বুখারি-২০১৪) 



##রোজা কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্তঃ 



১. রোজা পালন করতে হবে ইমানের সঙ্গে। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর প্রতি ইমান রাখা এবং রোজা একটি ফরজ ইবাদত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস রাখা। রোজা পালনকারীকে আল্লাহ যেসব পুরস্কার দেবেন এর প্রতি বিশ্বাস রাখা।

 ২. রোজা পালন করতে হবে সওয়াবের নিয়তে। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব ও পুরস্কারের আশা করা, আল্লাহর রেজামন্দির জন্যই রোজা পালন করা এবং রোজাকে বোঝা মনে না করা। 

৩. কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। যেমন, শিরক করা, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, ব্যভিচার করা, জাদু-টোনা করা, অন্যায় হত্যা করা, মাতা-পিতার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছেদ করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, মিথ্যা মামলা করা, মাদক সেবন ইত্যাদি।






মুফতি শাহেদ রহমানী
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

❑ মহান আল্লাহ তাআলার বাণী- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মত তোমাদের উপরও রোযা ফরজ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার।” (সুরা বাকারা-১৮৩
❑ রাসুল (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যাক্তি রমজান মাস পেল অথচ নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারলো না, সেই ব্যাক্তি ধ্বংস হোক।
❑ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেনঃ বিনা ওযরে রামাযানের সিয়াম ত্যাগকারী কাফির। [আবূ ইয়ালা, দায়লামী,ফিকহুস সুন্নাহ]
❑ যে ব্যক্তি শরীয়তের ওযর ছাড়া এ মাসের একটি রোযাও ছেড়ে দিবে সে যদি সারা বছর সিয়াম পালন করে তবুও তার পাপের খেসারত হবে না।[বুখারি শরীফ]
❑ আবূ হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সঃ) ইশরাদ করেছেন, (গুনাহ হতে বাঁচার জন্য) রোযা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং রোযাদার অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহেলী আচরণ করবে না। কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে অথবা গালমন্দ করলে সে তাকে দুই বার বলবে, আমি রোযাদার। তিনি আরো বলেন, যার হাতে আমার জীবন সেই সত্তার শপথ! রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট কস্তুরীর সুগন্ধ হতেও অতি উৎকৃষ্ট। আল্লাহ বলেন, রোযাদার খাদ্য ,পানীয়,ও কামভাব পরিত্যাগ করে আমার উদ্দেশেই রোযা রাখে। সুতরাং আমি তাকে বিশেষভাবে রোযার পুরস্কার দান করবো। আর নেক কাজের পুরস্কার দশ গুণ পর্যন্ত দেয়া হবে। (ছহীহ বোখারী,প্রথম খন্ড,পৃষ্টা ৩৩৩)
যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় রমজানের রোযা রাখে।
❑ ৯৩৮ হাদীস : আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) ইশরাদ করেছেন, যে ঈমান ও বিশ্বাস সহকারে সওয়াবের আশায় শবে কদরে নামায পড়ে এবং রমজানের রোযা রাখবে,তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বোখারী,১/৩৩৪)
ঈদের দু’টি মাসই ঊনত্রিশ দিন হয় না।
❑ ৯৪০ হাদীস : আবু বাকরা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে রেওয়ায়াত করেন,নবী করীম (সঃ) ইশরাদ করেছেন,এমন দু’টি মাস আছে যার উভয়টি (পর পর) ঘাটতি অর্থাৎ ঊনত্রিশ দিন হয় না।আর তা হল ঈদের দু’টি মাস রমজান এবং যিলহজ্ব। (বোখারী,১/৩৩৪)
রমজানের একদিন বা দু’দিন পূর্বে রোযা রাখা যাবে না।
❑ ৯৪১ হাদীস : আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) ইশরাদ করেছেন, তোমাদের কেউ রমজানের একদিন বা দু’দিন পূর্বে নফল রোযা রাখা যাবে না। তবে কেউ যদি প্রতিমাসে এ রোযা রাখতে অভ্যস্ত ,তাহলে রাখতে পার। (বোখারী,১/৩৩৪)
সেহরী ও ফজরের নামাজের মাঝখানে সময়ের ব্যবধান।
❑ ৯৪৩ হাদীস: যায়েদ বিন সাবেত (রা বলের, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সা এর সাথে সেহরী খেয়েছি। তার পর নামায পড়তে দাড়িঁয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি যায়দ ইবনে সাবেত (রাঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম,সেহরী ও আযানের মাঝখানে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন,পঞ্চাশ আয়াত পাঠ করার মত সময়ের ব্যবধান ছিল। (বোখারী,১/৩৩৫)
সেহরী খাওয়ার কল্যাণ বরকত লাভ হয়।
❑ ৯৪৪ হাদীস : হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, তোমরা সেহরী খাও। কেননা সেহরী খাওয়ায় বরকত লাভ হয়। (বোখারী,১/৩৩৫)
রোযাদার ভূলবশতঃ পানাহার করলে,তার হুকুম।
❑ ৯৪৮ হাদীস ; আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, রোযাদার যদি ভুল করে কিছু খায় বা পান করে, তা হলে সে (ইফতার না করে) রোযা পূর্ণ করবে।কেননা আল্লাহ তায়ালা তাকে পানাহার করিয়েছেন। (বোখারী, ১/৩৩৫)
সফরে রোযা রাখা না রাখা উভয়ের অনুমতি আছে।
❑ ৯৫০ হাদীস : হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হামযা ইবনে আমরুল আসলামী (রাঃ) অধিক মাত্রায় রোযা রাখতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নবী করীম (সঃ) – কে বললেন, হে রাসুল (সঃ)! আমি সফরেও রোযা রেখে থাকি। নবী করীম (সঃ) বললেন, সফর অবস্থায় তুমি ইচ্ছা করলে রোযা নাও রাখতে পার। (বেখারী , ১/৩৩৫)
মৃত ব্যক্তির ফরয রোযার কাজা থাকলে করণীয়।
❑ ৯৫৩ হাদীস : হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, মৃত ব্যক্তির উপর রোযার কাজা থাকলে অভিভাবক তার পক্ষ থেকে তা আদায় করবে। (বোখারী,১/৩৩৬)
সূর্যাস্তের সাথে সাথে অনতিবিলম্বে ইফতার করা।
❑ ৯৫৫ হাদীস : সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইশরাদ করেছেন, যতদিন লোকেরা তাড়াতাড়ি (সূর্যাস্তের সাথে সাথে) ইফতার করবে , ততদিন কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না। (ছহীহ বোখারী শরীফ,১/ ৩৩৬)
প্রতি মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোযা রাখা।
❑ ৯৫৮ হাদীস : হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমার পরম বন্ধু নবী করীম (সঃ) আমাকে তিনটি বিষয়ের অসিয়ত করে গেছেন, (১) আমি যেন প্রতি মাসের (১৩,১৪,১৫,তারিখে) তিনটি রোযা রাখি, (২) চাশতের সময় দু’রাকাত নামায পড়ি, (৩) রাত্রে নিদ্রা যাওয়ার আগেই বেতেরের নামায আদায় করি। (বোখারী, ১/৩৩৭)
জুমআর দিন রোযা রাখা।
❑ ৯৫৯ হাদীস : আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি নবী করীম (সঃ) -কে বলতে শুনেছি ,তোমাদের কেউ যেন কখনো শুধু জুমআর দিনে রোযা না রাখে। (যদি রাখতে হয়) তবে জুমআর আগের কিংবা পরের দিনও যেন রোযা রাখে। (বোখারী, ১/৩৩৭)
তারাবীহ নামাযের ফযীলত
❑ ৯৬৬ হাদীস : আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-বলতে শুনেছি,যে ব্যক্তি রমযানের রাতে ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় তারাবীহর নামাযে দাঁড়ায় (নামায আদায় করে), তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বোখারী, ১/৩৩৮)
লাইলাতুল কদরের ফযীলত।
❑ ৯৬৭ হাদীস : হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) ইশরাদ করেছেন,যে ব্যক্তি ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমযানের রোযা রাখে , শবে কদরের রাত্রে দাঁড়ায়, তার আগেকার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বোখারী,১/৩৩৮)
রোজার ঐতিহাসিক তাৎপর্য়।
রোযা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আদি কাল থেকেই রোযা মানুষের আত্মসুদ্ধির পথ হিসেবে প্রচলন আছে।যেমন মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন-”হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববরতীদের ওপর,যাতে তোমরা তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।” এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,রোযা পূর্ববর্তী যুগেও ফরজ ছিল। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুসারে রোযার ইতিকথা নিম্নে তুলে ধরা হলো - * হযরত আদম (আঃ)-এর যুগে রোযা পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম কে রোযা রেখেছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত খিযির ইবনে হুবাইশ (রহঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- আইয়্যামে বীজ কি? উত্তরে তিনি বললেন-আল্লাহ পাকের নিষিদ্ধ ফল খেয়ে হযরত আদম (আঃ) জান্নাত থেকে দুনিয়ায় প্রেরিত হন এবং তাঁর দেহের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তাঁর এই দুর্দশায় ফেরেশতাগণ আল্লাহর সমীপে কান্নাকাটি করে হযরত আদম (আঃ)-এর মুক্তি কামনা করেন। ফলে আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট এই মর্মে ওহী পাঠালেন যে, আপনি চন্দ্রমাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোযা রাখুন। হযরত আদম (আঃ) তা-ই করলেন। ফলে তাঁর দেহের রং আবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল। একারনে এই তিনটি আইয়্যামে বীজ বা উজ্জ্বল দিন বলা হয়। * হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে রোযা হাদিস শরীফে হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে রোযার প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত রাসুল (সাঃ) ইশরাদ করেন- “ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ছাড়া হযরত নূহ (আঃ) সারা বছর রোযা রাখতেন।” (ইবনে মাজাহ্ ) তাফসীরে ইবনে কাসীরে উল্লেখ আছে, হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগে প্রতিমাসে তিনদিন রোযা রাখার হুকুম ছিল। হযরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগ পর্যন্ত বহাল ছিল। শুরুতে মুসলমানগণও মাসে তিন দিন রোযা রাখতেন।মাহে রমজানের একমাস রোযা পালনের হুকুম সম্বলিত আয়াত নাযিল হলে, তা রহিত হয়ে যায়।(তাফসীরে ইবনে কাসীর) * হযরত মুসা (আঃ)-এর যুগে রোযা * হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিজরত করে মদীনায় আগমণ করার পর দেখলেন যে, ইয়াহুদীরা আশুরার দিন রোযা পালন করছে। তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- এটি কি ধরনের রোযা ? জবাবে তারা বলল, এটি আমাদের জন্য একটি পবিত্র দিন। এদিনে আল্লাহ তা’আলা তাঁর দুশমন ফির’আউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে হত্যা করে বনী ইসরাঈলকে নাজাত দিয়েছেন। তাই এ দিনে শুকরিয়াস্বরূপ হযরত মুসা (আঃ) রোযা রাখতেন।(বোখারী শরীফ) এ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, হযরত মুসা (আঃ)-এর যুগেও রোযা ছিল এবং সে ধারা বনি ইসরাইল ও ইয়াহুদীদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর যুগ পর্যন্ত বজায় ছিল। * হযরত দাউদ (আঃ)-এর যুগে রোযা ইমাম বোখারী (রহঃ) একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) কে নবী করীম (সাঃ) বললেন-”তুমি হযরত দাউদ (আঃ)-এর অনুরূপ রোযা রাখ। তিনি [হযরত দাউদ (আঃ)] একদিন রোযা রাখতেন এবং একদিন বিরতি দিতেন।” (বোখারী শরীফ) * হযরত দাউদ (আঃ)-এর যুগে রোযা * হযরত দাউদ (আঃ)-এর জন্মের সময় কৌতুহলী জনতা তাঁর মাতা মারইয়ামকে তাঁর জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে থাকলে, উত্তরে তিনি বললেন -”আমি দয়াময় আল্লাহর উদ্দেশ্যে মান্নত করে রোযা রেখেছি। সুতরাং আমি কোন কিছুতেই কোন মানুষের সঙ্গে বাক্যলাপ করবো না। “ (সুরাহ্ মারইয়াম,২৬) জাহেলী যুগে কুরাইশ ও মুশরিকদের রোযা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-’জাহেলী যুগে কুরাইশরা আশূরার দিনে রোযা রাখত।’ (বোখারী শরীফ) সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে,রামাজানের একমাস সিয়াম সাধনা নির্দিষ্ট হবার পূর্বে বিশ্বের সকল জাতিই কম-বেশি রোযার সাথে পরিচিত। ** ইসলামের রোযা ইসলামী শরীযতে রামাজানের রোযা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরী সনের শা’বান মাসের মাঝামাঝি সময়ে। এর পূর্বে মুসলমানদের ওপর রোযা ফরজ ছিল কি-না, এব্যাপারে মতভেদ আছে । কারো কারো মতে, রামাজানের পূর্বে কোন রোযা ফরজ ছিল না। আবার কারো কারো মতে, আশুরার রোযা ফরজ ছিল। আবার কারো কারো মতে,আইয়্যামে বীজের রোজা ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রামাজানের বিধান অবতীর্নের পর তা রহিত হয়ে যায়। ইসলামের সেই প্রাথমিক রোযার সময়ে নিয়ম ছিল যে, সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার করার সময় থেকে নিয়ে ঘুমাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্বামী-স্ত্রী সহবাস করা যাবে। কিন্তু রাতে একবার ঘুমিয়ে পড়লে, তার জন্য সবকিছু নিষিদ্ধ হয়ে যেত। এতে অনেক সাহাবী (রাঃ) নানা রকম অসুধিবার সম্মুখীন হন। সাহাবায়ে কেরামের এসব সমস্যার সমাধানকল্পে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেন-”তোমাদের জন্য রামাজানের রাতে স্ত্রী সহবাস বৈধ করা হয়েছে—————- আর খাও এবং পান কর, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা (সুবেহ সাদিক) তোমাদের নিকট পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।” (সুরাহ্ বাকারা, আয়াত ১৮৭) আবার শুরু যামানায় রোযা না রেখে ফিদইয়া দেয়ার অনুমতিও ছিল। পরে তা রহিত হয়ে যায়। তবে অতি বৃদ্ধ (যারা রোযা রাখতে অক্ষম) এবং চিররুগ্ন ব্যক্তির জন্য এ বিধান এখনো বহাল আছে। তারা প্রতিটি রোযার জন্য একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে দু’বেলা পেট ভরে তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াবেন অথবা সদকায়ে ফিতর পরিমান খাদ্যদ্রব্য বা টাকা দান করবেন। উপরোক্ত আলোচনা হতে প্রতীয়মান হয় যে,রোযার তাৎপর্য বা গুরুত্ব অনেক। আমাদের সৌভাগ্য যে,আমাদের জন্যই একমাস ব্যাপী রোযা ফরজ করা হয়েছে। মাহে রমজান মাসের প্রতিটি ফরজ অন্য যে কোন মাসের ৭০টি ফরজের সমান। রোজা আমাদের জন্য রহমত,মাগফেরাত, এবং নাজাত’রে সুসংবাদ নিয়ে হাজির। আমরা যেন,রোজার হক যথাযথ ভাবে আদায় করতে পারি এই কামনাই করি। আল্লাহ আমাদের রামাজানের পুরস্কারে পুরস্কৃত করুন, আমিন।
রোযার ফজিলত।
রোযার ফজিলত আমরা নিন্মের কয়েকটি হদিস থেকে আমরা জেনে নেই।
১. হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন,রাসুল সা. বলেছেন : যে লোক রমযান মাসে রোযা রাখবে ঈমান ও চেতনা সহকারে তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।(বুখারী ও মুসলিম)
২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: হতে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি, যে লোক একটি দিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডল জাহান্নাম হতে সত্তর বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। (বুখারী ও মুসলিম)
৩. হযরত সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সা. বলেন, জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে। সে দরজা দিয়ে শুধুই রোযাদাররাই প্রবেশ করবে।
৪. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন : তোমাদের নিকট রমযান মাস সমুপস্থিত । তা এক অত্যান্ত রবকতময় মাস । আল্লাহ এ মাসে তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজসুমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় শয়তানগুলো আকট করে রাখা হয়। এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে লোক এ মাসে তার মহা মহাকল্যাণ লাভ হত বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই হতভাগা। (নাসাঈ ও বায়হাকী)
তাকওয়া অর্জন, আল্লাহ কাছে নিজেকে তাঁর প্রিয় এক বান্দা হিসেবে উপস্থাপন, নিজের গুনাহসমূহ মাফ করানো,বেশী বেশী ইবাদাত করা, নফল নামাজ আদায় করা, আল্লাহর রাস্তায় দান খয়রাত ইত্যাদি কাজ করে আল্লহার নৈকট্য হাসিল করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

image

সুত্র

http://www.somewhereinblog.net/

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ