বর্তমান অধিকাংশ পারফিউম ও স্প্রেতে এ্যালকোহল থাকে। তাবে এ্যালকোহলমুক্ত পারফিউমও পাওয়া যায়। তাই পারফিউম বা স্প্রে ব্যবহার করতে চাইলে এ্যালকোহলমুক্তগুলোই খরিদ করবেন। এ্যালকোহলযুক্ত স্প্রে ব্যবহার করা অনুত্তম। নাজায়েয বা নাপাক নয়। তাই কাপড় বা শরীরে স্প্রে লাগিয়ে নামায পড়লে নামায সহীহ হয়ে যাবে। [মাবসূতে সারাখসী ২৪/৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৩০; তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম ১/৫৫১, ৩/৬০০; মাজমুআতুল ফাতাওয়া শারইয়্যাহ ১/১৮৪, ৪/৪৫]
✦ প্রশ্নঃ বাজারে প্রচলিত পারফিউম, বডি স্প্রে ব্যাবহার করা কি জায়েজ?
.-----------------------------------------------------------------------
✦ উত্তরঃ যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
.
পারফিউম তথা সুগন্ধি ব্যবহার করা আসলে সুন্নত। Alcohol দেয়া পারফিউম ব্যবহার করায় সমস্যা আছে কিনা বিষয়টা নিয়ে কিছুটা দ্বিমত থাকলেও এ ব্যাপারে বেশিরভাগ একমত যে, Alcoholic Perfume জায়েজ। কেউ এটাকে সরাসরি হারাম বলতে পারেন না। তবে, অ্যালকোহল বেশি হলে সেটা ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হয়।
.
মেইন পয়েন্ট হল, নেশা দ্রব্য হারাম, ইথানল পান করলে আমাদের নেশা হবে তাই ইথানল হারাম। মদ হারাম। কিন্তু, না পান করলে তো নেশা হবে না! এজন্য এটাকে হারাম বলা যায় না।
.
এ ব্যাপারে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল উসাইমিনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ
❝মুলত যে জিনিসটা খেয়াল করতে হবে সেটা হল, জিনিস পবিত্র কিনা। অপবিত্র প্রমাণ না হলে সেটা পবিত্রই। কিন্তু কোন জিনিস পবিত্র/বিশুদ্ধ হলেও সেটা হারাম হতে পারে খাওয়া। যেমন বিষ অবিশুদ্ধ দ্রব্য না, কিন্তু হারাম। (তেমনই অ্যালকোহল); সকল অপবিত্র জিনিস হারাম, কিন্তু সকল পবিত্র জিনিসই হালাল নয়।❞
.
এ ব্যাপারে বলতে হয়, অ্যালকোহল কিন্তু ল্যাবে উত্তম বিশোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবং অ্যালকোহল একটা বিশুদ্ধ দ্রব্য। আর as long as এটা আপনি পান করছেন না অথবা এর সংস্পর্শে মাতাল হচ্ছেন না, ততক্ষণ এর ব্যবহার হালাল। নয়তো কি যারা স্পিরিট নিয়ে কাজ করে, অর্থাৎ রঙ এর কাজ করে, তাদের কাজ কি হারাম? ওদের কাজও তো অ্যালকোহল নিয়ে।
.
একটি হাদিস বলা যায় এক্ষেত্রে, সনদ নিশ্চিত না।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যে রাতে রাসুল (ﷺ) জিনদের সাথে দেখা করেন, সে রাতে আমি সাথে ছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার কাছে পানি আছে কিনা। আমি বললাম আমার কাছে নবীয (খেজুর ডুবিয়ে রাখা একটু আঠালো পানি) আছে পাত্রে। মুহাম্মাদ (ﷺ) বললেনঃ ❝আমাকে দাও, ওযু করব।❞ তিনি তাই করলেন।
রাসুল (ﷺ) বললেনঃ ❝হে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ! এটা একটা পানীয় আর উত্তম বিশোধক (Purifier)❞
(মুসনাদ আহমাদ ৩৫৯৪)
.
আরও ফাতওয়াঃ
এতে যে সামান্য এলকোহল মিশ্রিত করা হয়, সেটা খেজুর বা আঙ্গুর থেকে বানানো হয় না। বরং গবেষণা অনুযায়ী এগুলোর উপাদান হচ্ছেঃ গম, ভাত, মধু বা অন্য কিছু। যা পরিমাণে সামান্য। এজন্যে মুহাক্কিক আলেমদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এই জাতীয় পারফিউম ব্যবহার করা বৈধ। তবে অনুত্তম।
(মুসনাদে আহমদঃ ৩৫৯৪। নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালিঃ ৮/১২। ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াঃ ৫/৪১০। মাজমাউল আনহুরঃ ৪/২৫১। ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়াঃ ২৭/২১৯। ফাতহুল কাদীরঃ ৮/১৬০। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীঃ ৫/৪১২। আল বাহরুর রায়েকঃ ৮/২১৭-২১৮। মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া শাইখ সালেহ আল উসাইমিনঃ ১১/২৫২)
.
তাই অধিকাংশ মত হল, অ্যালকোহলিক পারফিউম জায়েজ। আর এটা দেয়ার পর নামাজ পড়া জায়েজ। কারণ, আপনি নাপাক কিছু ব্যবহার করছেন না।
.
আশা করি উত্তর পেয়েছেন।
আল্লাহ ভাল জানেন।
.
সুত্রঃ https://islamqa.info/en/164448