শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Unknown

Call

যারা কোনো নির্দিষ্ট মাজহাবের অনুসারি নয় বরং সব মাজহাব থেকে ভালো ভালো দিক গুলো নিয়ে তা মেনে চলে তাদের ওহাবী বলা হয়। কেউ কেউ তাদের লা মাজহাবিও বলে থাকেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

ওহাবী’ : পরিচয় ও ইতিহাস



১. ‘ওহাবী’ শব্দটি মূলত শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী রাহ. (১১১৫ হি.- ১২০৬ হি.)-এর দিকে সম্বন্ধিত।


২. শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব-এর মতাদর্শের জন্য ‘ওয়াহহাবিয়া’ এবং তার অনুসারীদের জন্য ‘ওহাবী’ শব্দটি এক সময় প্রসিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু যারা শায়েখের এই মতাদর্শের জন্য এই নাম ব্যবহার করেছেন তারা সাধারণত তাঁর মতাদর্শকে সঠিকভাবে বোঝেননি বা ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। যেমন হিন্দুস্তানে বাদায়ূনী এবং রেযাখানী ঘরানার লোকেরা শায়েখের অনুসারীদেরকে তাদের তাফাররুদাত (ভিন্ন মতসমূহ) বা তাদের কতেকের বাড়াবাড়ি ও কট্টরতার  কারণে তাদেরকে ওহাবী বলে না; বরং এ জন্য বলে যে, মাজারীদের মাঝে প্রচলিত শিরক-বিদআতের উপর আপত্তি তোলাই তাদের পছন্দ নয়। যদি তারা কট্টরপন্থীদের বাড়াবাড়ির জন্যে তাদেরকে ওহাবী বলতো তাহলে তো শাহ ইসমাঈল শহীদ ও আকাবিরে দেওবন্দকে তারা ওয়াবী বলতো না। কেননা আলহামদুলিল্লাহ এ ধরনের বাড়াবাড়ি তাদের মধ্যে কিছুমাত্রও ছিল না।


৩. শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ. এবং আকাবিরে দেওবন্দকে ওয়াহাবী বলা বাস্তবতা বিরুদ্ধ। তার কারণ :


(ক) শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ও তার শিষ্যদের সাথে এদের কোনো দেখা-সাক্ষাৎ ছিলো না এবং এদের বিস্তারিত পরিচয় ও বৃত্তান্তও এঁরা জানতেন না।


(খ) শায়েখের সাথে তাদের উস্তায-শাগরিদ ধরনের সম্পর্ক কিংবা বাইআতের সম্পর্ক কিংবা বংশ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক- কোনোটাই ছিলো না।


(গ) এঁরা ছিলেন ফিকহে হানাফীর অনুসারী আর শায়েখ ছিলেন হাম্বলী ফিকহের অনুসারী। তদুপরি শায়েখের যে সব ‘তাফাররুদাত’ বা ‘একক ভিন্নমত’ ছিলো তার সঙ্গে তারা একমত ছিলেন না। তদ্রূপ তার মতাবলম্বনকারীদের অনেকের মাঝে যে বাড়াবাড়ি ও কট্টরতা পাওয়া যায় তা তাদের মধ্যে ছিলো না। মোটকথা অনেক বিষয়ে শায়খ ও তার অনুসারীদের সাথে তাদের মতপার্থক্য ছিলো। যার কিছু মাওলানা মুহাম্মদ মনযূর নোমানী রহ. তার ‘শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব ও হিন্দুস্তান কে উলামায়ে হক’ শীর্ষক পুস্তিকায় উল্লেখ করেছেন। এই পুস্তিকাটি হিন্দুস্তান থেকে ‘শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব কে খেলাফ প্রপাগান্ডে আউর হিন্দুস্তানকে  উলামায়ে হক পার উসকে আছারাত’ নামে ছেপেছে। এর আরবী তরজমা دعايات مكثفة ضد الشيخ محمد بن عبد الوهاب নামে ছেপেছে। (আরো দেখুন : হযরত তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের ‘নুকুশে রফতে গাঁ’য় হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মনযূর নোমানী রাহ.-এর আলোচনা)


৪. শায়েখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব রাহ.-এর চিন্তাধারার লোকদের ওয়াহাবী বলার রেওয়াজ আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেকটা কমে গেছে। এখন বলা হয় ‘সালাফী’ । কিন্তু সালাফীদের মধ্যে যারা বেশি কট্টর তারা কেবল ‘ভিন্ন মত’ নয় বরং ‘বিচ্ছিন্নতার’ শিকার। সে কারণে তারা যেমন বেরেলভীদের বিপক্ষে তেমনি আকাবিরে  দেওবন্দেরও বিরোধী। আকাবিরে দেওবন্দের মত-পথ যেহেতু ভারসাম্যপূর্ণ এবং প্রকৃত অর্থে পুরোপুরি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর অনুগামী, সে জন্য একদিকে তাদের বেরেলভীদের গালি শুনতে হয় অন্যদিকে আবার কট্টর সালাফীদের নিন্দা-সমালোচনা হজম করতে হয়।


আকাবােির দেওবন্দের সাথে যাদের তালীম-তরবিয়াতের সম্পর্ক, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ আকাবিরের মত ও পথ (যা মূলত খায়রুল কুরূনের সালাফে সালেহীনেরই মতাদর্শ) নির্ভুলভাবে বোঝার এবং সঠিকভাবে তা গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন। সালাফী ভাইদের মধ্যে খাইরুল কুরূনের সালাফের বোধ ও উপলব্ধি এবং ভারসাম্যপূর্ণ নীতি দান করুন। আর বেরেলভী ভাইদের মধ্যে (যারা নিজেদের নাম রেখেছেন সুন্নী) সুন্নতের মহব্বত এবং বিদআতের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।


-আবদুল মালেক]


 


শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী রাহ.-এর সাথে সন্বন্ধ করে তাঁর আন্দোলন ও আন্দোলনের সাথে জড়িত লোকদের ‘ওহাবী’ বলা হত।


শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নজদী রাহ. ১১১৫ হিজরী মোতাবেক ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১২০৬ হিজরী মোতাবেক ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু হয় নজদের ‘দারইয়্যাহ’ নামক স্থানে। তাঁর আন্দোলনের সূচনা ১১৪৩ হিজরী মোতাবেক ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে।


আলে সাউদ (যারা তাঁর সমর্থক ও তাঁর আন্দোলনের সাথে একমত ছিলেন) হারামাইন শরীফাইনের কর্তৃত্ব লাভ করেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের মৃত্যুর অনেক পরে ১২১৮ হিজরী বা ১২২০ হিজরী সনে। তার কর্তৃত্ব ১২২৭ হিজরী পর্যন্ত কায়েম ছিল। ১২২৭ হিজরীতে তুরস্কের উসমানী খেলাফত নির্দেশে তাদেরকে হটিয়ে দেওয়া হয়। এর একশ বছরেরও অধিককাল পরে ১৩৪২ হিজরী বা ১৩৪৩ হিজরী মোতাবেক ১৯২৪ বা ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে আলে সাউদের তৎকালীন ব্যক্তিত্ব বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন সাউদ নিজ বাহিনীর মাধ্যমে হেজাযে মুকাদ্দাসের তৎকালীন শাসক শরীফ হুসাইনকে হটিয়ে নিজের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। আর এভাবে দ্বিতীয়বার হারামাইন শরীফাইনে তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।


দ্র. খাইরুদ্দীন যিরিকলী, আল আ‘লাম, খ. ৬ পৃ. ২৫৭; মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব খ. ৩ পৃ. ৯০; সাউদ বিন আব্দুল আযীয খ. ৪ পৃ. ১৯-২০; ইবনে সাউদ; মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আল হাজাভী, আল ফিকরুস সামী খ. ২, পৃ. ৪৪৮-৪৪৫; ফযলে রাসূল বাদায়ূনী, সাইফুল জাব্বার পৃ. ১৩-১৭; মাওলানা মুহাম্মাদ মনযুর নোমানী, শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আওর হিন্দুস্তানকে উলামায়ে হক পৃ. ১৪-১৫, ৪০, ৮৭-৯০


শায়েখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহ.-এর আন্দোলন ছিল মূলত তাওহীদ প্রচার, সুন্নতের প্রতিষ্ঠা এবং শিরক-বিদআতের মূলোৎপাটনের উদ্দেশ্যে। তবে কিছু শাখাগত বিষয়ে অন্যান্য আহলে ইলমের সাথে তাঁর মতানৈক্য ছিল। অন্যদিকে তাঁর আন্দোলনে নতুন যোগদানকারী কিছু লোকের মাধ্যমে কিছু বাড়াবাড়িও শুরু হয়েছিল। একে ছুতো বানিয়ে শিরক-বিদআত এবং রসম রেওয়াজের পৃষ্ঠপোষকরা বিশেষত কবর পূজা, তাজিয়া পূজার মতো শিরকী কর্মকাণ্ডের সমর্থক লোকেরা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রোপাগাণ্ডা করতে থাকে যে, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে বেআদবী করে থাকে, এরা ওলী আওলিয়ার দুশমন, নিজেরা ছাড়া অন্য সকলকে কাফের ও হত্যাযোগ্য মনে করে, শাফাআতকে অস্বীকার করে এবং এরা সুন্নী না, ওহাবী। কেউ বলে, তাদের আন্দোলন কোনো দ্বীনী আন্দোলন নয় ওহাবী আন্দোলন, ইত্যাদি ইত্যাদি।



ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ