আমাদের সমাজে সমকামী অনেক পুরূষ আছে যাদের ৪০% হল প্রাকৃতিক আর ৬০% হল যৌনকামনা মেটানোর জন্য সমকামিতা করে।আমরা জানি সমকামিতা ইসলাম ধর্মে অনেক পাপ।কিনতু এটাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে যারা প্রকৃতিগতভাবেই সমকামী, তারা কিনতু ইচছা করে এই জীবন লাভ করে নি,আল্লাহ প্রদওই হয়েছে।তাহলে যারা প্রকৃতিগত ভাবেই সমকামী তারা তাদের জীবনে কী করবে?যদি কোন মেয়েলী সভাবের সমকামী তার লিঙগ পরিবর্তন করে একজন নারীতে রুপানতরীত হয়ে (ইসলামের দিক অনুযায়ী নারীদের মতো জীবন-যাপন করে,এবং কোন পুরূষ যদি তাকে সএী রুপে গ্রহন করে,তাহলে ইসলাম এ সমপর্কে কী বলবে?
Share with your friends
Call

ভাই, আপনি যে প্রশ্নটি করেছেন তা বেশ জটিল, বিস্তারিত ভাবে আলোচনা না করলে বিষয়টি পরিষ্কার করা খুব কঠিন। তাই একটু বিস্তারিত ভাবেই শুরু করছি..... মহান আল্লাহ মানুষের মাঝে নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নারীকে পুরুষের জন্য আর পুরুষকে নারীর জন্য শান্তিলাভের মাধ্যম বানিয়েছেন-“ তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে করে তোমরা তাদের কাছ হতে প্রশান্তি লাভ কর”(সূরা আর-রুম) । তিনি নারীদেরকে পুরুষদের জন্য আকর্ষণীয় আর পুরুষদের নারীদের জন্য আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করেছেন।এটা মহান আল্লাহর অসীম দয়া যে তিনি পুরুষ ও নারীদের অসাধারন সৌন্দর্য ও অবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আসলে তাঁর এই দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করা যাবে না। অথচ সমকামীরা চরম অকৃতজ্ঞ। মহান আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার শূকরিয়া আদায় তো দুরের কথা বরং তারা এতোটাই সীমালঙ্ঘন করে যে, তারা মহান আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মের বিপরীতে নিজেদের জন্য বিকৃত পথে চাহিদা মেটানোকেই বেছে নেয়। তাদের এই জঘন্য অকৃতজ্ঞ আচরন ও বিকৃত রুচির প্রতি ধিক্কার জানিয়ে হজরত লুত (আঃ) বলেছিলেনঃ“পৃথিবীতে তোমরা কি কেবল পুরুষদের কাছেই আগমন কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য যে জোড়া(স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন তা পরিত্যাগ কর? প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমা অতিক্রমকারী” (অর্থাৎ হালালের সীমা অতিক্রম করে হারামের সীমায় প্রবেশকারী)[সুরা আশ শুয়ারাঃ১৬৫-১৬৬] সমকামীদের নিন্দা করে কুরআন বলছে – এটা সীমালঙ্ঘন।কারণ ,মহান স্রস্টা প্রদত্ত প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে গিয়ে এই ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। পৃথিবীর বুকে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা সমকামিতার কুফল ও এর প্রতিরোধ ও মূলোৎপাটনের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। মানব রচিত সকল দর্শন,বিজ্ঞান আর মতবাদ হাতড়িয়ে মানুষ যখন কোনও দিশা পায় না ঠিক তখনই ইসলামের বিধিবিধান তার অন্তরচক্ষুকে উন্মুক্ত করে দেয়, মানুষ পায় আলোর দিশা। ইসলামের মতে সমকামিতা চরম সীমালঙ্ঘন ও বিকৃত আচরন।সমকামীরা মহান আল্লাহর ক্রোধ ছাড়া আর কিছুই অর্জন করতে পারে না।এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যৌন উত্তেজনার সাথে নারীদের পারস্পরিক আলিঙ্গনও ব্যভিচারের শামিল।’ তাবরানী ও বাইহাকীতে বর্ণিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন; “চার ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর গযব ও আক্রোশের আওতায় থাকেঃ মহিলাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণকারী পুরুষ, পুরুষদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বেশভূষা গ্রহণকারী মহিলা, জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী এবং সমকামী।” অন্য এক হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, ‘চার শ্রেণীর লোক সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর ক্রোধে অতিবাহিত করে। এরা হল মহিলা বেশধারী পুরুষ, পুরুষ বেশধারী মহিলা, পশু মৈথুনকারী ও পুং মৈথুনকারী।” আরো বর্ণিত রয়েছে, “যখন কোন পুরুষ অপর কোন পুরুষে উপগত হয়, তখন আল্লাহর গযবের ভয়ে আল্লাহর আরশ কাঁপতে থাকে এবং আকাশ পৃথিবীর উপর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়। ফেরেশতারা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত আকাশকে তার প্রান্তসীমায় ধরে রাখে এবং সূরা ইখলাস তিলাওয়াত করতে থাকে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ সাত শ্রেণীর লোকের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন,কিয়ামতের দিন এদের দিকে তাকাবেন না এবং এদেরকে জাহান্নামে প্রবেশের আদেশ দিবেনঃ সমকামীদের, জীবজন্তুর সাথে সংগমকারী, কোন মহিলা ও তার কন্যাকে একসাথে বিবাহকারী, আপন বোনের সাথে ব্যভিচারী, কন্যার সাথে ব্যভিচারকারী এবং হস্তমৈথুনকারী । তবে এরা যদি তাওবা করে তাহলে তারা সবাই হয়ত ক্ষমা পেতে পারে।হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “কোন পুং মৈথুনকারী বিনা তাওবায় মারা গেলে সে কবরে শূকরের আকৃতি ধারণ করবে”। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন পুরুষ বা নারীর মলদ্বারে সংগম করবে, আল্লাহ তায়ালা তার দিকে তাকাবেন না।” (তিরমিযি, নাসায়ী) সমকামিতার মত ঘৃণ্য পাপাচার সমাজ থেকে দূরীকরণে হযরত লুত আঃ এর সংগ্রাম আমাদের সবার জন্যই অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে। তিনি এমন এক জনপদের মানুষের মাঝে সত্যের আহবান পৌঁছে দেয়ার আপ্রান চেষ্টা করেছেন যারা ছিল সমকামিতার মত জঘন্য পাপাচারে নিমজ্জিত।আল্লাহ তায়ালা হযরত লূত(আ) সম্পর্কে বলেনঃ ” আর আমি তাকে সে জনপদ থেকে উদ্ধার করেছি, যে জনপদ ছিল অশ্লীল কাজে লিপ্ত। এ জনপদবাসীরা ছিল দুরাচারী পাপিষ্ঠ।” [সূরা আল আম্বিয়া-৭৪] এদের এ জনপদের নাম ছিল সাদূম।ধারনা করা হয় এই সাদুম থেকেই sodomy(সমকামিতা) শব্দের উদ্ভব। ঐ এলাকার পুরুষেরা পুরুষদেরই মলদ্বারে সংগম করত এবং প্রকাশ্য সমাবেশে নানারকম পাপাচারে লিপ্ত ছিল। হযরত লুত আঃ বারংবার সংশোধন করার নিয়তে তাদের ভুলগুলো তাদের সামনে তুলে ধরেছেনঃ ‘তোমরা তো কামনা চরিতার্থ করতে নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষদের কাছে গমন কর। বরং তোমরা হলে এক সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।’ (সূরা আল আরাফ, আয়াতঃ ৮১) ‘‘হে আমার জাতি!এরা হচ্ছে আমার (জাতির) মেয়ে,( বিবাহের মাধ্যমে যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য) এরাই হচ্ছে তোমাদের জন্যে বেশী পবিত্র,সুতরাং (তোমরা) আল্লাহকে ভয় কর”(সূরা হুদ) কিন্তু এমন আহবানে সাড়া দেয়ার কোনও লক্ষণই তাদের মধ্যে দেখা গেলো না। তখন হযরত লুত আঃ আক্ষেপ করে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে একথাগুলো শোনার জন্য একজন ভালো মানুষও কি অবশিষ্ট নেই?” সমকামীরা লুত আঃ এর আন্তরিক আহবানের দিকে কোনও কর্ণপাত তো করলোই না বরঞ্চ আল্লাহর নবীকেই তাদের জনপদ থেকে বের করে দেবার খায়েশ পোষণ করে।বারংবার আহবান সত্ত্বেও তারা যখন ফিরে আসলো না তখনই তাদের উপর নেমে এলো সেই আজাব যার সম্পর্কে তাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিলো। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হল তখন আমি তাদের দেশটির উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ ওপরে ওঠালাম এবং তার উপর পাকা পাথর ( যা আগুনে পুড়ে ইটের মত হয়ে গেল) অবিরাম ধারায় নিক্ষেপ করলাম। পাথরগুলো ছিল সুচিহ্নিত। এগুলো তোমার প্রভূর ভাণ্ডারে ছিল।” যা(অপরাধী ব্যক্তিদের নাম-ধামসহ) তোমার মালিকের কাছে চিহ্নিত ছিলো, আর (গযবের) এ স্থান তো এ যালেমদের কাছ থেকে দূরেও নয়!’’ [সূরা হুদঃ ৮২-৮৩] কাওমে লুতের ভয়াবহ পরিনতি স্মরন করিয়ে আমাদেরও তা থেকে শিক্ষা নিতে বলা হয়েছেঃ ‘অতএব দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?’ এখান থেকেই বোঝা যায় – সমকামিতা ইসলামে একটি শাস্তিযোগ্য ও নিন্দনীয় অপরাধ। আর লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর পুরুষ হওয়া এবং পুরুষের নারীতে পরিবর্তন হওয়া ইসলামে ঘৃণ্য অপরাধ। এটা প্রকারন্তরে আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন ঘটানোরই নামান্তর। যার মানে হলো, আপনি আল্লাহর সৃষ্টিতে খুশী নন। যা কুফরী ও শির্ক পর্যায়ের.....। এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় হবে এ ধরনের কাজ থেকে মহান আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমীন! (আল্লাহই অধিক অবগত)।

Talk Doctor Online in Bissoy App
Call

না, ইসলাম সমর্থন করেনা। তার মেয়েলী স্বভাব পরিবর্তন করতে হবে। আর আপনি লিঙ্গ পরিবর্তন করে ইসলামী জীবন করার পক্রিয়া কিভাবে বলেন, যখন আপনি আল্লাহ্ এর সৃষ্টিকে অন্য রুপ দেন?

Talk Doctor Online in Bissoy App