শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
KironKhan

Call

ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান

এ,এম,ইশ্তিয়াক সারোয়ার

সুচনাঃ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত একটা বিষয় হচ্ছে ই-কমার্স বিজনেস, যাকে অন্য ভাবে বলে ইলেক্ট্রনিক কমার্স যা কিনা ইন্টারনেটএঁর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং দ্রুতসময়ে পণ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ই-কমার্স অনেক জোরালো ভুমিকা রেখেই চলেছে। তাই এই সম্ভাবনা কে কাজে লাগানোর একটা প্রয়াস হিসেবে এই উদ্দ্যোগটি নেয়া হচ্ছে যার মুল উদ্দেশ্য শুধুই ব্যবসা করা নয় বরং একটা সার্ভিস চালু করা এবং তাঁর সাথে একটা সুপরিচিত ব্র্যান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। আর সেই লক্ষেই এই বিজনেস প্ল্যান টা প্রণয়ন করা হচ্ছে প্রাথমিক ধারণা এবং এঁর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাপার গুলোকে তুলে আনা যাতে একটা পরিপূর্ণ বিজনেস মডেল থাকবে।

এই উদ্দ্যোগের উদ্দেশ্যঃ

বর্তমান যুগটাই হচ্ছে ইন্টারনেট এর যুগ এবং চরম যান্ত্রিকতা এবং অস্বাভাবিক ট্রাফিক জ্যাম আমাদের নাগরিক জীবন টা কে অসহনীয় পর্যায় নিয়ে গেছে, যার থেকে আশু মুক্তি কামণা করা যাচ্ছেনা। তাই মানুষের জীবন যাপনের একটা বড় সময় ঘরের বাহিরে কাটাতে হচ্ছে। মুল্যবান সময় নস্টের কারণে মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকান্ডেও পর্যাপ্ত সময় দিতেও পারছেনা। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের এই উদ্দ্যোগ। যার ফলে ঘরে বসে অথবা অফিসে বসেই বাজার সদাই কিংবা গিফট অথবা প্রয়োজনীয় টিকেট বুকিং ইত্যাদি সেরে নিতে পারবে এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে। তাছাড়া যে কেউ এই ওয়েবসাইটে নিজের পণ্য ছবি সহ পোস্ট করতে পারবে বিস্তারিত।

আমরা আরো গভীরে যাওয়ার আগে যে বিষয় গুলোতে আলোকপাত করবো তা হচ্ছে নিম্নলিখিতঃ

  • আমাদের এই উদ্দ্যোগের টার্গেট কাস্টমার কারা?
  • আমাদের পণ্যের সংস্থাপন কিভাবে হচ্ছে?
  • সাপ্লায়ার এর কাছ থেকে আপনার পর্যন্ত কিভাবে প্রোডাক্ট পৌছাবে?
  • সাপ্লায়ার পদ্ধতিতে না গেলে সেই ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট কাস্টমার এর দোরগোড়ায় পৌছাবে কি করে?
  • আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন এবং লজিস্টিক্স সাপোর্ট
  • পণ্যের বিপণণ কিভাবে হবে?
  • পেমেন্ট সিস্টেম কিভাবে কাজ করবে?
  • যারা ইনভেস্টর তারা কি পরিমাণ ইনভেস্ট করবে, এবং কতদিন পর্যন্ত করবে?
  •  ইনভেস্টমেন্ট এর রিটার্ণ কিভাবে হবে?
  • একটা অনলাইন স্টোর এর ওয়েবসাইট তৈরী এবং এর পরবর্তী মেইন্টেনেন্স এর চ্যালেঞ্জ সমূহ।
  • প্রমোশন ম্যাটিরিয়েল এর ডিজাইন এবং এর বিতরণ এর ব্যবস্থা করা।
  • পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কত দিন চলবে ডেমো ভার্সন সাইট টা এবং ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট এর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

ওয়েবসাইট এর টেকনিক্যাল এবং ফিচার সমূহঃ

1.       ওয়েবসাইট টা ওপেন সোর্স টেকনোলজি দিয়ে তৈরী করতে হবে যাতে যে কোন প্রকার কাস্টমাইজেশন করা যায়।

2.       কাস্টমার লগিন এবং রেজিস্ট্রেশন।

3.       ভেন্ডর / সাপ্লায়ার লগিন এবং রেজিস্ট্রেশন।

4.       প্রোডাক্ট ডিসপ্লে ক্যাটাগরি অনুযায়ী।

5.       Buy বাটন দিয়ে যে কোন পছন্দের পণ্য কেনার সুবিধা নিশ্চিত করা।

6.       পেমেন্ট সিস্টেম (ক্রেডিট কার্ড – ভিসা, মাস্টারকার্ড, ডেবিট কার্ড, ওয়েস্টার্ণ ইউনিয়ন, ক্যাশ অন ডেলিভারী সিস্টেম)।

7.       ফিচার্ড প্রোডাক্ট সেকশন। (অন পেমেন্ট এই সেকশন কাজ করবে)।

8.       কেউ যদি বিশেষ ভাবে তাঁর পণ্যের জন্যে এই ওয়েবসাইটের মধ্যে আলাদা পেইজ চায় তবে সেটা আলাদা চার্জ দিয়ে করে দেয়া যাবে।

9.       মোস্ট সোল্ড সেকশন (যে সব প্রোডাক্ট অনেক বেশি সেল হয়েছে সেগুলো এখানে দেখাবে অটোমেটিক)।

10.   সাইটের নিজস্ব ক্যাশ কার্ড সার্ভিস চালূ করা (এই ফিচার দিয়ে চাইলে যে কেউ যে কোন পণ্য ক্রয় করতে পারবে ওয়েবসাইট থেকে, এর জন্যে ফ্লেক্সিলোডের মত করে প্রিপেইড ভাবে টাকা ভরে নিতে হবে)।

11.   ২৪ / ৭ দিনে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার রাখা সেটা ফোন সাপোর্ট ও হতে পারে।

12.   ক্লাসিফাইড এড সেকশন থাকবে যেখানে (বাসা ভাড়া,কার রেন্ট,টিউশনি) ইত্যাদি পোস্ট করতে পারবে বিনা মুল্যে।

13.   কিছু পণ্য এর ক্ষেত্রে ডিস্কাউন্ট অফার সব সময় চালু রাখা যেটা তে মানুষ সহজে আকৃষ্ট বোধ করবে যা বাহিরের অনেক সাইটে প্রায়ই থাকে। যার ফলে তাদের সেল ও অনেক বেশি। এর ফলে যেসব প্রোডাক্টে বিশেষ কোন অফার নেই সেসব পণ্য ও সেল হয়ে যাবে।

14.   যে সব ভেন্ডর এই সাইটে তাদের প্রোডাক্ট দিবে তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যেমন তাদের পণ্য বেশি দিন দেখানো ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

15.   ভালো এবং কার্যকরী সার্চ সিস্টেম রাখা যাতে ক্যাটাগরি তে না গিয়েও যে কোন পণ্য সার্চ দিয়ে পাওয়া যাবে।

16.   বিশেষ কিছু ক্যাম্পেইন চালু করা যাতে মানুষ এর মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে পায়।

17.   প্রতিটা অর্ডার এর সাথে সাথে একটা কনফার্মেশন এস এম এস যাবে যে কিনেছে এবং যার প্রোডাক্ট সেল হয়েছে তাঁর কাছে।

18.   প্রোডাক্ট শিপমেন্ট এর জন্যে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস এর সাহায্য নেয়া যেতে পারে এবং সেই ক্ষেত্রে শিপমেন্ট মুল্য প্রযোজ্য হবে পণ্যের মুল্যের সাথে যদি ঢাকার বাহিরে হয়। ঢাকার ভিতরে হলে কোন শিপমেন্ট মুল্য না নেয়াই হবে এক ধরনের মার্কেটিং। তবে এই মুল্য টা প্রোডাক্ট এর ভিতরে থাকবে লুকানো অবস্থায় তাই কাস্টমার এর বুঝার কোন উপায় থাকবেনা।

19.   বায়ার এবং সেলার এর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে কিছু নীতিমালা প্রয়োজন হবে যাতে কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় কোন ভাবেই।

20.   সাইট যদি নিজে থেকে প্রোডাক্ট সেল করে সেই ক্ষেত্রে একটা স্টোর লাগবে যেখান থেকে প্রোডাক্ট ডেলিভারী হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট এর ডেলিভারী সময় টাও সেভাবে বলে দিতে হবে সিস্টেম থেকে। একের অধিক ডেলিভারী পয়েন্ট এর প্রয়োজন পড়বে যখন এর কলেবর বৃদ্ধি পাবে।

21.   মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এর জন্যে কিছু রিসার্চ এবং সার্ভে সম্পন্ন করা যা পরবর্তীতে সাহায্য করবে মার্কেটিং প্ল্যান ডিজাইন করতে।

বিজনেস এর সুযোগ সমুহঃ

1.       দুই ধরণের মেম্বারশীপ এর সিস্টেম রাখাঃ সিলভার মেম্বার, গোল্ড মেম্বার। এখানে সিলভার মেম্বার (ফ্রি মেম্বারশীপ)এর প্রোডাক্ট ৭দিনের বেশী দেখাবেনা, যদি সে গোল্ড মেম্বার হয় সেই ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে বেশি দিন প্রায় এক মাস তাঁর প্রোডাক্ট স্টোরে দেখাতে পারবে। এই গোল্ড মেম্বারশীপ টা রেভেনিউ এর একটা বড় উৎস।

2.       ফিচার্ড এডস (হোম পেইজ এবং ভিতরের পেইজে) এর মাধ্যমে রেভেনিউ আসবে। যেহেতু এটা টাকা দিয়ে কিনতে হবেই। মাঝে মধ্যে এই ফিচার্ড সেকশনেও ডিস্কাউন্ট এর ব্যবস্থা থাকলে অনেকে আগ্রহী হবে দিতে।

3.       ফিচার্ড পেইজ এর জন্যে আলাদা চার্জ প্রযোজ্য হবে এবং এটাও রেভেনিউ এর একটা বড় উৎস।

4.       গুগোল এডস দিয়ে ও রেভেনিউ আসবে।

5.       কিছু এডস স্পেস থাকবে ওয়েবসাইটের ডান বা বাম দিকে সেগুলো ব্যানার এড হিসেবে সেল করলে মাসিক একটা বড় অঙ্কের রেভেনিউ আসবে এখান থেকে।

6.       প্রোডাক্ট সেল থেকেও একটা বড় অঙ্কের রেভেনিউ আসবে।

ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান খাত ওয়ারী (আনুমানিক ধারণা)-

1.       ফুল ফাংশনাল ওয়েবসাইট বানাতে খরচঃ কমপক্ষে ৬৫০০০-১,০০,০০০ লক্ষ টাকা যেহেতু এই টা ই-কমার্স সাইট অনেক কিছুই একটু জটিল এবং সাইজে অনেক বড়। (এককালিন)

2.       কোম্পানী হিসেবে নিবন্ধনঃ ট্রেড লাইসেন্স ২৫০০-৪০০০ টাকা।

3.       অফিস ভাড়াঃ মাসিক ৫০০০-৮০০০ টাকা (২০০-৩০০ বর্গফুটের) এবং এর সাথে দুই মাসের এডভান্স ভাড়া অনুযায়ী।

4.       প্রোমশন ম্যাটেরিয়ালঃ ১৫০০০-২৫০০০ টাকা (লিফলেট, স্টিকার, কাপড়ের ব্যনার, প্যানপ্লেক্স ব্যানার)

5.       এলাকা অনুযায়ী ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এ বিজ্ঞাপন এর ব্যবস্থাঃ টোটাল বাজেট ৩০০০০ টাকা

6.       অফিস স্টেশনারী (অফিস প্যাড, মানি রিসিট, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি): ৮০০০-১০০০০ টাকা।

7.       পত্রিকায় বিজ্ঞাপনঃ ১০০০০-২০০০০ টাকা

8.       এস এম এস প্রোমোশন(১০০০০ এস এম এস এর জন্যে খরচ)- ৬৫০০ টাকা।

9.       জনবলঃ (আনুমানিক ধারণা)

a.       অফিস এডমিনিস্ট্রেটর- ১জন => বেতনঃ ১০০০০ টাকা (আনুমানিক)

b.      একজন ওয়েব প্রোগ্রামার- ১ / ২ জন => বেতনঃ ১২০০০ টাকা (আনুমানিক)

c.       মার্কেটিং / সেলস ম্যান- ২ জন => বেতনঃ ৮০০০ টাকা প্রত্যেকের (প্লাস সেলস বোনাস/ কমিশন)

d.      ডেলিভারী ম্যানঃ ২ জন (প্রাথমিক) => বেতনঃ ৫০০০ টাকা প্রত্যেকের

10.   অন্যান্য খরচঃ মাসিক ভিত্তিতে-> ৮,০০০ টাকা (আনুমানিক)

মাসিক খরচ সমূহঃ

1.       বেতন ভাতাঃ ৩৮,০০০ টাকা মাসিক

2.       অফিস ভাড়াঃ ৮০০০ টাকা মাসিক

3.       বিদ্যুৎ বিলঃ ১১০০-১৫০০ টাকা মাসিক

4.       অন্যান্য খরচঃ ৫০০০-৮০০০ টাকা

5.       প্রমোশন খরচঃ ১৫০০০ টাকা মাসিক ভিত্তিতে।

মার্কেটিং প্ল্যানঃ

1.       লিফলেট বিতরণ করা এলাকা অনুযায়ী।

2.       স্টিকার ডিস্ট্রিবিউট করা।

3.       একটা সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের আত্মপ্রকাশ এর খবর প্রচার করা।

4.       রুট লেভেল মার্কেটিং করা।

5.       বিশেষ উৎসব উপলক্ষে ছাড় এবং ডিস্কাউন্ট প্রোডাক্ট পারচেজ করার ব্যবস্থা রাখা সব সময়।

6.       সম্ভব হলে বিল বোর্ড এ বিজ্ঞাপন দেয়া।

7.       কিছু সি এস আর সার্ভিস দেয়া (যেমনঃ শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যার্তদের সাহায্য,দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা বা বাসস্থান এর জন্যে কিছু অনুদান দেয়া সামর্থ্য অনুযায়ী) এতে প্রচার হয় একধরণের যা সবাই করতে পারেনা বা সে ধরনের মানসিকতা রাখেনা।

8.       ইমেইল মার্কেটিং

9.       অন্য ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেয়া যেখানে ভিজিটর বেশী।

10.   অনলাইন রেডিও, এফ এম রেডিও, টিভি তে বিজ্ঞাপণ এর ব্যবস্থা সামর্থ্য অনুযায়ী

11.   এস এম এস মার্কেটিং ইত্যাদি।

ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন প্ল্যান এবং অন্যান্যঃ

1.       কমপক্ষে ৩-৫ বছর লাগবে এই বিনিয়োগ করা টাকা উঠে আসতে। যেটা কে আমরা ব্রেক ইভেন বলছি।

2.       যারা ইনভেস্ট করবে তারা প্রথম ৬মাস-১বছর কোন লাভ / আয় তুলতে পারবেনা যদি তাদের ইনভেস্ট এর পরিমাণ কম হয়। কোম্পানীর ইঙ্কাম্ থেকে অর্জিত আয় আবার বিনিয়োগ করা হবে এবং এতে কোম্পানীর বিনিয়োগ এর পরিমাণ বাড়বে এবং সেই ভাবে এর রিটার্ণ টাও নিশ্চিত হবে।

3.       এক বছর পর থেকে কোম্পানী তাঁর বিনিয়োগকারীদের মাসিক একটা সম্মানী দিবে পাশাপাশি বছর শেষে অর্জিত আয় থেকে লভ্যাংশ প্রদান করবে প্রত্যেকের বিনিয়োগ করা টাকার অঙ্ক অনুযায়ী

4.       যে কোন শেয়ার হোল্ডার তাঁর লভ্যাংশের অর্থ আবার বিনিয়োগ করতে পারবে এবং সেই ক্ষেত্রে তাঁর শেয়ার এর পরিমাণ এবং মুল্য ঐ সময়কার বাজার মুল্য, কোম্পানীর সম্পদ, ব্যবসায়িক ইমেজ, মার্কেট শেয়ার দিয়ে বিবেচ্য হতে পারে।

5.       প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী হলে সর্বোচ্চ ২০ মালিক হতে পারবেন। আর পার্টনারশীপ / প্রোপাইটরশীপ হলে নিজেদের মধ্যে একটা চুক্তি করে নিতে হবে একজন দক্ষ উকিল কে দিয়ে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ