শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
MST

Call

২৫ জুন’০৯ তারিখে ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন আমেরিকান পপ সিঙ্গার মাইকেল জ্যাকসন। গিনেস বুক অব রেকর্ডস অনুসারে সর্বকালের সবচেয়ে সফল শিল্পী বিচিত্র চরিত্রের এই গায়ক মৃত্যুর পূর্বে যেমন নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়ে সারা দুনিয়ায় আলোচিত ছিলেন, তেমনি মৃত্যুর পর অদ্যাবধি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছেন। ২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রথম মিডিয়ায় খবর আসে যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং নতুন নাম গ্রহণ করেছেন ‘মিকাইল’। বাহরাইনে আরবদের সাথে তোলা বিভিন্ন ছবিতে তার আরবীয় পোষাক পরিধান বিষয়টিকে আরো জোরদার করে তুলে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যে জ্যাকসন নিজে কখনো এরূপ ঘোষণা দেননি, এমনকি মিডিয়ায় বারবার আলোচনা উঠে আসার পরও পক্ষে-বিপক্ষে তাঁর কোন মন্তব্যও পাওয়া যায়নি। তাঁর মৃত্যুর পর যখন পুনরায় তাঁকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে, তখনও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন না করেননি তা নিয়ে বহু বিতর্ক হয়। তাঁর মৃত্যুর দুই সপ্তাহ পর ৭ জুলাই লস্ এঞ্জেলসের স্টাপল সেন্টারে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চলাকালীন যখন বিশ্বের প্রায় ৩২ মিলিয়ন টিভি দর্শক অবাক বিস্ময়ে সে দৃশ্য অবলোকন করেছিল, তখনও তার লাশ ইসলামী রীতিতে দাফন হবে কি-না তা নিয়ে জল্পনা- কল্পনা অব্যাহত ছিল। পরিশেষে তার লাশ দাফন করা হয় অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে তার বাসস্থান নেভারল্যান্ডে। সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর’ ০৯ ক্যালিফোর্নিয়ার ফরেস্ট লোন মেমোরিয়াল পার্কে পুনরায় কবরস্থ করা হয় অন্যান্য হলিউড লিজেন্ডারীদের সাথে। পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে তাঁর মৃত্যুকে একটি হত্যাকান্ড হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এ মর্মে মামলাও করা হয়েছে। যা এখনও আদালতে বিচারাধীন। তার ইসলাম গ্রহণ নিয়ে এখানেই আলোচনার সমাপ্তি ঘটার কথা থাকলেও মিডিয়ায় আজও এ বিষয়ে সংশয়-বিতর্কে সরব রয়েছে। এমনকি তাঁর ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কয়েক ধরনের গুজব পর্যন্ত তৈরী হয়েছে। আমরা এখানে মাইকেল জ্যাকসনের ভাই জারমেইন জ্যাকসন (মুহাম্মাদ আব্দুল কাদের)- যিনি ১৯৮৯ সালে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন- তার সাক্ষাৎকার তুলে ধরে বিষয়টি বিশ্লেষণের প্রয়াস পাব। তার পূর্বে যেটা বলতে হয় যে, এ বিতর্কের পিছনে বেশ অনেকগুলি ঘটনার উপস্থিতি বর্তমান যা অনেকটা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন নতুবা অচিরেই গ্রহণ করতেন। বাহরাইনের একটি বুলেটিনে যার বিবরণ পাওয়া যায় এভাবে- ‘ইতিপূর্বে তিনি মুসলমান হয়েছেন বলে কয়েকবার গুজব উঠলেও ২১ নভেম্বর ২০০৮ বিশ্বমিডিয়ায় সর্বপ্রথম প্রকাশ পায় যে, তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং নতুন নাম মিকাইল রেখেছেন। এমনকি আল-কায়েদা নেতা আইমান আল-জাওয়াহেরী পর্যন্ত তাঁকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানান। ১৯৮৯ সালে একটি প্রেস কনফারেন্সে মাইকেলের একটি মন্তব্য বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যেখানে তিনি বলছিলেন, ‘আমি ইসলামকে আমার ভাইয়ের মধ্যে দেখেছি। আমি ইসলাম সম্পর্কে বই-পত্রও পড়েছি এবং কোন একদিন ইসলামের এই প্রশান্তি, স্থিরতার মাঝে নিজের অনুভূতিতে একান্তভাবে পেতে ইচ্ছা করি।’ পরবর্তীকালে মাইকেলের জীবনে অনেক ঝড়ঝাপ্টা নেমে আসে। নানা মিথ্যা অভিযোগে তাকে জর্জরিত করা হয়। শিশুর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর মত হীন অপবাদ একাধিকবার আরোপ করে মিডিয়ায় তাঁর নামে দুর্নাম রটানো হয়। ছোট্ট শিশুর মত চঞ্চলপ্রাণ মাইকেল এতসব চাপ সহ্য করার মত লোক ছিলেন না। ফলে তিনি সঙ্গীত জগৎ থেকে অনেকটা পিছিয়ে এসে সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। সঙ্গীত থেকে আয়কৃত বিপুল সম্পদ এ পথে ব্যয় করতে থাকেন। এসময় কয়েক বছর তিনি ইংল্যান্ডে অবস্থান করেন এবং তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ক্যাট স্টিভেন্সের (ইউসুফ ইসলাম) সাহচর্যে কিছুদিন সময় কাটান। দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক প্রখ্যাত মুসলিম সঙ্গীতশিল্পী জাইন ভিখার সাথেও এ সময় তার বন্ধুত্ব হয়, যিনি Give Thanks to Allah শিরোনামে একটি গান রচনা করেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ