শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

আমেরিকার উষ্ণ অঞ্চলে চড়ুই পাখির চেয়েও ছোট্ট এক পাখি দেখা যায়। চড়ুইয়ের মতোই সারা দিন ডানা ঝাঁপটিয়ে ওড়াউড়িতে তাদের ক্লান্তি নেই মোটেই। মজার ব্যাপার হলো, এই পাখি যখন ওড়ে তখন তার ডানার দ্রুত সঞ্চালনের ফলে বাতাসে গুনগুন শব্দ হয়। গুনগুন করাকে ইংরেজিতে হামিং (Humming) বলে। এ জন্যই এই পাখির নাম হামিং বার্ড। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো এই হামিং বার্ড। 

এই পাখি খুব শৌখিন। অতি উজ্জ্বল গায়ের রং। পালকের উজ্জ্বল রং ও বৈচিত্র্যের কারণে স্ত্রী পাখিদের তুলনায় পুরুষ হামিং বার্ড দেখতে বেশি সুন্দর। এই পাখির বাসা দেখলেই এর শৌখিনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অন্যান্য পাখি যেমন খড়কুটো, গাছের পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করে, সেখানে এরা বাসা তৈরি করে কোমল পালক এবং ফুলের পাপড়ি দিয়ে। সেই নরম তুলতুলে বাসায় এরা শুধু রাতেই বিশ্রাম নেয়। অবিরাম ছোটাছুটির কারণে সাধারণত দিনে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় না। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার উড়তে পারে এরা। ওড়ার সময় এদের ছোট্ট দুটি ডানা গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৮০ বার ওঠানামা করে। তখন এদের ডানার পালক পর্যন্ত দেখা যায় না। চোখে পড়ে শুধু আবছা এক রঙের ছটা। দ্রুত ডানা সঞ্চালনের আশ্চর্য এই ক্ষমতার জন্য হামিং বার্ড উড়ন্ত অবস্থায় শূন্যে এক জায়গায় স্থির হয়ে ভেসে থাকতে পারে। এতে অবশ্য তার লাভই হয়। কারণ, উড়তে উড়তেই খাবারটা সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। এ জন্য পায়ের ওপর ভর দিয়ে কোনো ডালে বসতে হয় না। তা ছাড়া, পায়ের চেয়ে ডানার ওপরই এদের ভরসা বেশি। 

হামিং বার্ড ফুল থেকে মধু খাওয়ার সময়ও শূন্যে ভেসে থাকে। এভাবেই তারা এক ফুল থেকে আরেক ফুলে গিয়ে মধু খায়। তারা সারা দিন যেহেতু ডানা সঞ্চালনের ওপর নির্ভর করে কাটায়, এ জন্য তাদের প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। ফলে এই পাখি সারা দিনে প্রচুর খায় আর শক্তি সঞ্চয় করে। অথচ রাতের বেলা এদের উল্টো অবস্থা। তখন শুধুই বিশ্রাম। ফলে রাতে এদের ক্যালরি খরচের ভয় নেই।

একটি হামিং বার্ডের সারা দিন যে ক্যালরি লাগে, তা একজন বয়স্ক মানুষের প্রয়োজনীয় ক্যালরির তুলনায় প্রায় ৪০ গুণ বেশি।

শুধু পাখি কেন, পৃথিবীতে উষ্ণ রক্তের আর এমন কোনো প্রাণী নেই, যার দেহের অনুপাতে এত বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। অথচ পুঁচকে এই পাখি দৈর্ঘ্যে হয় মাত্র ৫.৭ সেন্টিমিটার এবং ওজন হয় মাত্র ১.৬ গ্রাম। অর্থাৎ কাগজের একটি খামের ওজনের সমান এদের ওজন। 

স্ত্রী হামিং বার্ড একবারে সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। সাদা রঙের এই ডিম আকারে যত ছোটই হোক তা স্ত্রী হামিং বার্ডের ওজনের ১৩ শতাংশ। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সময় লাগে তিন সপ্তাহ। তারপর এক মাসের মধ্যেই বাচ্চা উড়তে শিখে যায়। 

হামিং বার্ড বেজায় সাহসী। সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। কারণ, সাধ্যে না কুলালে ফুড়ুত করে উড়াল দিয়ে বিপদ এড়িয়ে কীভাবে পালাতে হয়, তা এরা ভালোই জানে। Archilochus colubris হচ্ছে এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম। প্রজাতির সংখ্যা: ৩১৫। প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট: বি হামিং বার্ড। বাসস্থান: আমেরিকা। গড় আয়ু: ১-২ বছর।

ধন্যবাদ

তথ্যসূত্রঃ রাইজিংবিডি/রণজিৎ/শাহনেওয়াজ/আবু মো.। রাইজিং বিডি। ঢাকাঃ এপ্রিল ২০, ২০১৪। তাপস রায়।





ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

বিশ্ববিখ্যাত নাবিক কলম্বাস যখন জাহাজে চড়ে আমেরিকার উপকূলবর্তী দ্বীপে পৌঁছান তখন সেই নতুন দেশে ছোট্ট একধরনের পাখি দেখে অবাক হয়ে যান। ফুলের সামনে উড়ে বেড়ানো এ পাখিটিকে দেখে তার সঙ্গীরা অনেকেই অজানা পোকা ভেবে ভুল করেন। এরপর সারা বিশ্বে হামিং বার্ড নামের এই ছোট্ট সুন্দর পাখিটার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম এই পাখির ঠোঁটের অগ্রভাগ থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে ৫-৬ সে. মি. থেকে ১৩ সে. মি. পর্যন্ত হয়। এবং সর্বোচ্চ ওজন ১.৬-২.০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মজার তথ্য হলো হামিংবার্ড-ই একমাত্র পাখি যারা পিছন দিকেও উড়তে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো মহাদেশে এদের সাধারণত দেখা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট হামিংবার্ড পাওয়া যায় কিউবায়। এদের ওজন দুই গ্রামেরও কম। লম্বায় আড়াই ইঞ্চির বেশি নয়। এদের ডিমের আকৃতি মটর ডালের দানার মতো। হামিংবার্ডের প্রধান খাদ্য ফুলের মধু। এরা ফুলের সামনে হাওয়ায় ভেসে থেকে ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু খায়। তবে মাঝে-মধ্যে ছোট পোকা বা মাকড়সাও খায়। হামিংবার্ডদের খাবার হজম করার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য রকম। সারাদিন এরা নিজের শরীরের ওজনের সমান খাবার খেতে পারে। সম্প্রতি পেরুর এক গবেষক আবিষ্কার করেছেন, হামিংবার্ড নাকি তাদের নাকও ডাকাতে পারে! একটা হামিংবার্ডের শরীরের যা ওজন তার শতকরা ৪.২ শতাংশ হলো এদের মাস্তিষ্কের ওজন। সাধারণত পাখিদের মধ্যে এত বড় মস্তিষ্কের অধিকারী অন্য কোনো পাখিকে দেখতে পাওয়া যায় না। এদের মস্তিষ্ক এতটাই পরিষ্কার যে; এরা কোন কোন ফুল থেকে আগেই মধু খেয়ে গেছে সেটা দিব্যি মনে রাখতে পারে। এমনকি সেই ফুলে আবার কখন মধু আসবে, এরা তাও বলে দিতে পারে। এদের শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে অনেক বেশি প্রখর হলেও ঘ্রাণশক্তি খুবই দুর্বল।

এটি আয়তনের দিক থেকে দেখতে অনেকটা মৌমাছির মতোই মনে হয়। তবে এই হামিংবার্ড প্রজাতিরই সব থেকে বড় পাখিকে বলা হয় জায়ান্ট হামিংবার্ড, যারা লম্বায় মাত্র ৮.৫ সে. মি. থেকে ১৩ সে. মি. পর্যন্ত হয় এবং ওজনে সর্বোচ্চ ১৮-২০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাদের এই ওজনের শতকরা ৩০ শতাংশই হলো পেশি; যা এদেরকে উড্ডয়নের কাজে সাহায্য করে থাকে।

এদের খাদ্য তালিকায় প্রধান হলো মধু । জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একটা হামিংবার্ড দিনে প্রায় ১৫০০ ফুল থেকে মধু আহরণ করে খায়, তবে মধু খাওয়ার সময় এরা ফুল থেকে যতটা সম্ভব নিজের দূরত্ব বজায় রাখে এবং শূন্যে ভাসমান অবস্থায় এরা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে।

আমেরিকান জার্নাল অব সায়েন্স কর্তৃক প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, পাখি বিশেষজ্ঞরা এ যাবত্ প্রায় ৩১৯ প্রজাতির হামিংবার্ডের সন্ধান পেয়েছেন। এই ক্ষুদ্র পাখিটি সম্পর্কে সব থেকে মজার তথ্যটি হলো, আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম বিস্ময়কর আবিষ্কার রকেটের উড়ে চলা আর হামিং বার্ডের উড়ে চলা প্রায় একই সূত্রে গাঁথা। কারণ রকেট যেমন নিচ থেকে সোজা ওপরে ওঠার ক্ষমতা রাখে, ঠিক তেমনিভাবে হামিংবার্ডও তাদের স্পেসিফিক গ্রাভিটি বাড়িয়ে ভূমি থেকে সোজা ওপরের দিকে উঠতে পারে। আবার ওপর থেকে সোজা নিচের দিকে নামতে পারে। হামিংবার্ডের আরও দুইটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এরা অনেক দিন পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে পারে। এবং কোনো রকমের বিশ্রাম ছাড়াই একটানা উড়তে পারে প্রায় হাজার মাইল পর্যন্ত। একটা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সেকেন্ডে সর্বনিম্ন ১২ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ বার পর্যন্ত এরা ডানা ঝাপটাতে পারে। যেটা অন্য পাখিদের জন্য একেবারেই অসম্ভব।

হামিংবার্ডের গড় আয়ু ৩-৫ বছর হলেও, কিছু কিছু হামিংবার্ড আছে যারা এক বছরের মধ্যেই মারা যায়। আবার অনেক হামিংবার্ড আছে যারা একটানা ৮-১০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন আর্টিকেল অবলম্বনে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ