শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

#9 আঙুলের ছাপ দিয়ে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের পর এবার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির স্মার্ট কার্ডের জন্যও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। আর এই কাজে শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী নয়, দুই হাতের ১০ আঙুলের ছাপ দিতে হবে। এ ছাড়া আইরিশ বা চোখের মণির ছবিও দিতে হবে দশ কোটি ভোটারকে।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ গতকাল মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে কালের কণ্ঠকে জানান, স্মার্ট কার্ড ছাপানোর কাজ চলছে। এটি যখন বিতরণ শুরু হবে তখন নাগরিকদের দশ আঙুলের ছাপ  ও চোখের মণির ছবি দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হবে। এনআইডির তথ্যভাণ্ডারে নাগরিকদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর ছাপ রয়েছে। ২০০৮ সালে এই ছাপ সংগ্রহে অনেক ত্রুটি ছিল। অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না। এ সমস্যার সমাধান হবে নতুন করে দুই হাতের দশ আঙুলের ছাপ সংগৃহীত হলে।

নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিনও গতকাল এই পরিকল্পনার কথা জানান। তবে কবে নাগাদ ওই স্মার্ট কার্ড দেওয়া শুরু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে রাজি হননি তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ হচ্ছে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যেই স্মার্ট কার্ড ছাপা ও বিতরণ শেষ করতে হবে। ১০টি মেশিনে এনআইডির স্মার্ট কার্ড ছাপার কাজ চলছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ কার্ড ছাপানোর ক্ষমতা রয়েছে এসব মেশিনের। পর্যাপ্তসংখ্যক কার্ড ছাপানোর আগে বিতরণ শুরু করা ঠিক হবে না।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০-এ বলা আছে, জাতীয় পরিচয়ের জন্য একজন নাগরিকের বায়োমেট্রিকস ফিচার যথা—আঙুলের ছাপ, হাতের ছাপ, তালুর ছাপ, আইরিশ বা চোখের কনীনিকা, মুখাবয়ব, ডিএনএ, স্বাক্ষর ও কণ্ঠস্বর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু এসব কাজের অনেকটাই এখনো বাকি রয়ে গেছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৬ মার্চ এনআইডি বিতরণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে বলে জানালেও সে ঘোষণা এবারের ২৬ মার্চেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, ওই বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এই কার্ড উদ্বোধন করা হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে দেশের ৯ কোটিরও বেশি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে।

ওই দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনলাইনে এনআইডি সেবার উদ্বোধন করেন। ওই সময় ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই সেবার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ভোটাররা নির্বাচন কমিশনের ভোটার তথ্যভাণ্ডার থেকে তাদের নিজেদের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) সম্পর্কিত পূর্ণ তথ্য দেখার এবং সেসব তথ্যে কোনো ভুল-ভ্রান্তি থাকলে তা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সংশোধনের সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এ ছাড়া নতুন যারা ভোটার হতে চায় তারা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারবে। কিন্তু ওই সেবা গ্রহণে নাগরিকদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

এরপর গত বছরের ২ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট এনআইডি  কার্ডের সুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এর সুবিধার কথা জানতে পারলে মানুষ এটি নিতে আগ্রহী হবে। এদিন প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর কার্যালয়ে স্মার্ট এনআইডি কার্ডের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ বিস্তারিত তথ্য এবং এই কার্ড প্রস্তুতের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর পর তিনি এই নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, আট বছর আগে দেশের আট কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন নাগরিক প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার হয়। তাদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই এ আট বছরে পাল্টে গেছে। বিশেষ করে সে সময়ের তরুণ ভোটারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা—এসব তথ্য স্বাভাবিকভাবেই পাল্টে যাওয়ার কথা। অনেকের মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে, ঠিকানা বদল হয়েছে। কিন্তু এত দিন এসব তথ্য হালনাগাদ করার সুযোগ কেউ পায়নি। ২০০৮ সালে ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ শুরুর পর কিছুদিনের জন্য ঢাকার কয়েকটি এলাকায় অনলাইনে এ বিষয়ে সব তথ্য দেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, সারা দেশে পর্যায়ক্রমে এ সুযোগ দেওয়া হবে এবং তথ্যে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু কয়েক দিন এ সুযোগ বহাল রেখে ভোটার বা জাতীয় পরিচয় ডাটাবেইসের নিরাপত্তাগত কারণ দেখিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ত্রুটিপূর্ণ এই অবস্থার মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় দেশে উন্নমানের জাতীয় পরিচয়পত্র  তৈরি হচ্ছে। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ