কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ (হার্টে জন্মগত কোনো সমস্যা) কি?
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ, বা কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট, হলো হার্ট বা তার রক্তবাহী ধমনীর উন্নতির সাথে জড়িত সবচেয়ে কমন কাঠামোগত ত্রুটিগুলির মধ্যে একটি। হার্ট চেম্বারের (সেপ্টাল ওয়ালে ত্রুটি) মধ্যে গর্ত, হৃৎপিণ্ডের প্রধান রক্ত ধমনী এবং পালমোনারি ভেইন স্টেনোসিসের সংকীর্ণকরণ (ফুসফুসের শিরার সংকীর্ণকরণ) হলো কিছু পরিচিত কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের উদাহরণ। এটি শিশুদের হার্টে জন্মগত কোনো ত্রুটি যা হার্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটায়।
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, যদি চিকিৎসা না করা হয় এবং তা যদি চলতে থাকে তবে কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, যেমন:
- শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা (ডিস্পনিয়া)
- ক্লান্তি এবং ব্যায়ামে অসহিষ্ণুতা
- অনেক ক্ষেত্রে, রোগীরা খুব কম বা কোন লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখায় না।
গুরুতর ক্ষেত্রে দেখা যাওয়া লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হলো:
- দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
- অত্যাধিক ঘাম
- বুক ব্যথা
- সায়ানোসিস - ত্বক, ঠোঁট এবং হাতের নখ নীলাভ দেখায়
- অবসাদ
- অস্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন
- ডিস্পনিয়ার কারণে শিশুদের মধ্যে খিদের অভাব।
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজের প্রধান কারণগুলি কি কি?
মায়ের গর্ভে থাকাকালীন ভ্রূণের প্রাথমিক বিকাশের সময় অভ্যন্তরীণ পরিবেশে বিশৃঙ্খলা হলো সবচেয়ে সাধারণ কারণ। অন্যান্য বিষয়গুলি হলো:
- সংক্রমণ
- গর্ভবতী মায়ের ক্ষতিকারক ওষুধ নেওয়া
- গর্ভবতী মায়ের ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করা
- সামাজিক-জনসংখ্যা এবং পরিবেশগত কারণ।
অন্যান্য কারণগুলি হলো:
- ত্রুটিপূর্ণ জিন এবং ক্রোমোজোম
- কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টের পারিবারিক ইতিহাস
- বাবা মায়ের অসুস্থতা শিশুকেও কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টের ঝুঁকিতে রাখে
কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
গর্ভাবস্থার সময়:
- আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান ভ্রূণের কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি ২০ সপ্তাহের মধ্যে সনাক্ত করা যেতে পারে।
- জন্মপূর্ব (ভ্রুণের) ইকোকার্ডিওগ্রাফি ভ্রূণের কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টের সনাক্ত করার ক্ষেত্রেও কার্যকর।
শৈশবের সময়:
যথাযথ নির্ণয়ের জন্য নিম্নলিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা ইতিহাস এবং রোগীর শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজন:
- ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি)
- বুকের এক্স-রে
- ইকোকার্ডিওগ্রাম
- স্ক্রিনিংয়ের জন্য পালস অক্সিমেট্রি।
সাবালক অবস্থায়:
শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি বেশ কয়েকটি রোগনির্ণয় সংক্রান্ত পরীক্ষা প্রাপ্তবয়স্কদের কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট সনাক্ত করতে ডাক্তারকে সাহায্য করে। এগুলি হলো:
- ইকোকার্ডিওগ্রাম
- ট্রান্স-ওসফাজিয়াল ইকোকার্ডিওগ্রাম
- ইন্ট্রাভাসক্যুলার আল্ট্রাসাউন্ড (আইভিইউএস)
- কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন
- বুকের এক্স-রে
- ইসিজি
- ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই)
- পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পিইটি) স্ক্যান।
কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্টের রোগীদের চিকিৎসা, রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে হয় এবং সেগুলো হল:
- কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যায়ক্রমিক চেক-আপ করা হয়
- এন্ডোকার্ডাইটিসের জন্য প্রোফিল্যাক্সিস থাকা ওষুধও দেওয়া হয়
- ক্ষতিপূরণ করতে অথবা অবসানের জন্য সার্জারি করা হয়।
যদি কোনও বাচ্চার সায়ানোটিক কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ থাকে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। অনেকসময় এইসব রোগীদের একাধিক সার্জারির দরকার হতে পারে। কোন ধরনের এবং কোন বয়সে, কতবার সার্জারি করা প্রয়োজন এগুলি একজন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট বিস্তারিতভাবে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে তবে সিদ্ধান্ত নেন। অনেকসময় যথাযথ সার্জারি পরিকল্পনার আগে সি টি অ্যাঞ্জিও বা কার্ডিয়াক অ্যাঞ্জিওগ্রাফির সাহায্য নিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, হার্টের অপারেশনের সাফল্য ‘টিম ওয়ার্ক’ -এর উপর নির্ভরশীল। যে টিমে একজন পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিয়াক সার্জেন (শিশুর হার্ট অপারেশনে বিশেষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন), কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেসিস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কার্ডিয়াক ইনটেনসিভিস্ট, কারণ জটিল অপারেশনের পরের সাফল্য নির্ভর করে পোস্ট সার্জিক্যাল কেয়ারের উপর। তাই সার্জিক্যাল টিমের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত হাসপাতাল হওয়ারও অত্যন্ত প্রয়োজন। যেখানে অভিজ্ঞ নার্সিং স্টাফেরা শিশুটির দেখাশোনা করতে পারবেন।
সর্বোপরি বলা যায়, যদি দেখেন আপনার বাচ্চা সর্দি-কাশিতে ঘনঘন ভুগছে, ওজন ঠিকমত বাড়ছে না, খেতে গেলে অস্বাভাবিক রকমের ঘামছে এবং শিশু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বাচ্চাটির হার্ট থেকে একটি অতিরিক্ত ধ্বনি আসছে বা শিশু নীলচে হয়ে যাচ্ছে, তখন যত দ্রুত সম্ভব পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু করা প্রয়োজন।