ক্রনস ডিজিজ কি?
আমাদের অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একরকম সমস্যাকে ক্রোনস ডিজিজ (Crohn's disease) বলে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পাচন তন্ত্রের নালীতে তীব্র জ্বালা বা প্রদাহ দেখা যায়। এটি মূলত ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD) নামেই বেশি পরিচিত।
এই রোগে মুখ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত যেকোন স্থান আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত স্মল ইনটেসটাইনের একটি বিশেষ অংশ ইলিয়াম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো কোলনও আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ রোগে পরিপাকতন্ত্রের নালির গাত্রে স্কার (ক্ষত) বা ফাইব্রোসিস হতে থাকে এবং নালি সরু হয়ে যেতে থাকে। জটিলতা হিসেবে পায়খানার সমস্যা হওয়া, ফোড়া, ফিস্টুলাও হতে পারে।
পুরুষ মহিলা যে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ যেকোন বয়সেই হতে পারে তবে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেই বেশি হতে দেখা যায়।
পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগটি দেখা গেলেও আমাদের উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন দেখা যেত না। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও ক্রনস ডিজিজ এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস হতে দেখা যাচ্ছে।
ক্রনস ডিজিজের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
প্রাথমিকভাবে,ক্রনস ডিজিজ ক্ষুদ্ৰান্তে নিম্নভাগকে প্রভাবিত করে। লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি মৃদু থেকে তীব্র হতে পারে এবং সাধারনত ধীরে ধীরে এটা বাড়তে থাকে, কিন্তু কখনও কখনও হঠাৎই দেখা দিতে পারে। সাময়িকভাবে উপশম হয়ে যেতেও পারে, কোনো স্পষ্ট লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকলে। সাধারণত, যখন এই অসুখটি সক্রিয় থাকে, তখন যে উপসর্গগুলি দেখা যায়:
ক্রনস ডিজিজ বাড়াবাড়ি রূপ নিলে যেগুলি দেখা যেতে পারে:
ক্রনস ডিজিজের প্রধান কারনগুলি কি কি?
ঠিক কী কারণে ক্রনস ডিজিজ হয় তা এখনো নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। তবে কিছু বিষয় এ রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাস, অন্ত্রের জীবাণু বা জীবাণুর সংক্রমণ এ রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। যদি আঁশজাতীয় খাবার, শাকসবজি কম খাওয়া হয়, তবে এ রোগ বেশি হয়। বলা যায়, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতির কারণেই পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি সাধন হয়ে এ অসুখগুলো হয়।
ক্রনস ডিজিজ কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
কিছু সাধারন পরীক্ষা যেগুলি সাধারণত করানো হয়:
রক্তপরীক্ষা :
ইমেজিং পরীক্ষা:
ক্রনস ডিজিজের চিকিৎসাঃ
এ রোগ নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা এখনো জানা যায়নি। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণনির্ভর বা লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। সাধারণত প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এসব ওষুধের মধ্যে আছে অ্যামাইনোস্যালিসাইলেট ও কর্টিকোস্টেরয়েড। আলসারেটিভ কোলাইটিসে অ্যামাইনোস্যালিসাইলেট উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনতে ভালো কাজ করে। আর কর্টিকোস্টেরয়েডের মধ্যে প্রেডনিসোলন, হাইড্রোকর্টিসন তখনই প্রয়োগ করা হয়, যখন রোগটির তীব্রতা ব্যাপক হয় এবং অন্য ওষুধে ঠিকমতো উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন।
অনেক সময় ইমিউন সিস্টেম সাপ্রেসর বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দমিয়ে রাখার জন্যও কিছু ওষুধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে আছে অ্যাজাথিওপ্রাইন, সাইক্লোস্পোরিন, ইনফ্লিক্সিম্যাব, মেথোট্রেক্সেট ইত্যাদি।
যাদের আলসারেটিভ কোলাইটিসের সঙ্গে সব সময় জ্বর জ্বর ভাব থাকে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও চিকিৎসা করতে হতে পারে। খুব কার্যকরী এ ধরনের দুটি অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে মেট্রোনিডাজল ও সিপ্রোফ্লক্সাসিন।
সাধারণত এসব ওষুধের পাশাপাশি ব্যথানাশক, আয়রন সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন বি ১২, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ইত্যাদিও দিতে হয়।
রোগ নিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ ব্যয়বহুল। আবার কিছু ওষুধ মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন ওষুধ প্রয়োগ করেও রোগ ভালো না হলে সার্জারি বা অপারেশনও প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত ক্রনস ডিজিজে আক্রান্তের অর্ধেকেরই সার্জারির প্রয়োজন হয়।
ক্রনস ডিজিজ প্রতিরোধে করণীয়ঃ
ক্রোনস ডিজিজ প্রতিরোধ করার জন্য যেগুলি করা দরকার