হজমে সমস্যা কি?
আমাদের মুখ থেকে অন্ত্র অবধি গোটা জায়গায়ই সক্রিয় থাকে অনেক এনজাইম, হরমোন আর রাসায়নিক। খাবার চিবানো বা গেলার পর তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে অণু-পরমাণুতে ভেঙে অবশেষে রক্তে মেশানোই এসব রাসায়নিকের কাজ। এই কাজটা ঠিকমতো না করতে পারলে খাবার হজম হয় না, অর্থাৎ খাবারের কোনো পুষ্টি উপাদান রক্তে মেশে না। ফলে ধীরে ধীরে দেহে নানা ধরনের উপাদানের অভাব দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা, ভিটামিন ও খনিজের অভাব, আমিষের অভাব, হাড়ক্ষয় ইত্যাদি হলো এর পরিণতি। খাবার ঠিকভাবে হজম না হলে তার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরে। নানা কারণেই হতে পারে হজমের সমস্যা।
হজমে সমস্যার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
হজমে সমস্যার কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- পেট ফোলা এবং গ্যাস বেরোনো
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেটখারাপ
- পায়খানায় রক্ত
- বুক জ্বালা
- বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
- পেটে ব্যথা
- গিলতে সমস্যা
- ওজন বাড়া বা কমা
- স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগের ধারায় পরিবর্তন।
হজমে সমস্যার প্রধান কারণ গুলো কি কি?
নিচে দেওয়া এক বা একাধিক কারণে হজমে সমস্যা হতে পারে:
- সময়মতো খাবার না খেলে বা একবারে অতিরিক্ত খাবার খেলেও হজমে সমস্যা হতে পারে।
- মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ
- পরিপাক নালীর প্রদাহ
- পাচক এনজাইমের অভাব
- অন্ত্রে খারাপ রক্ত সঞ্চালন
- পিত্ত থলিতে পাথর হওয়া
- প্রদাহরোধী ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
- মানসিক চাপ
- ধূমপান
- মদ্যপান
- ফ্যাটজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া
- মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া
- জেনেটিক কারণ: নির্দিষ্ট কিছু জিনের অভিব্যক্তির কারণে প্যানক্রিয়াটাইটিস, যকৃতের রোগ এবং ক্রোনের রোগের মতো বিশেষ কিছু রোগের কারণ হতে পারে।
- অস্ত্রোপচারের পরের কারণ: কোনো কারণে পাকস্থলী বা অন্ত্রের একটি অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে হজমশক্তি কমে যাবে।
- বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিপাকনালীর কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে আসে।
কিভাবে হজমে সমস্যা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
রোগ নির্ণয়ের তিনটি প্রাথমিক স্তম্ভ হলো চিকিৎসা ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করানো।
- চিকিৎসা ইতিহাস: খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, মলত্যাগের স্বাভাবিক অভ্যাসের ব্যাপারে খবর নেওয়া হয় এবং মনস্তাত্ত্বিক মূল্যায়ন করলে, ডাক্তার বুঝতে পারেন এরপর কি পরীক্ষা করানো দরকার।
- শারীরিক পরীক্ষা: হাত এবং স্টেথোস্কোপ মাধ্যমে পরীক্ষায় পেটের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়তে পারে।
- ল্যাবরেটরি পরীক্ষা:
- পায়খানা পরীক্ষা
- এন্ডোস্কোপি
- পরিপাক নালীতে সরু নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা
- ল্যাপারোস্কোপিক পরীক্ষা
- পেটের তরল পরীক্ষা
- অ্যাসিড রিফ্লাক্সের পরীক্ষা
- ইমেজিং কৌশল যেমন পরিপাকনালীর স্বাভাবিক ও বারিয়াম এক্স-রে এবং পেটের এমআরআই ও সিটি স্ক্যান
- পেটের আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং।
রোগ নির্ণয়ের উপর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করবে। নিম্নলিখিত কৌশলগুলি চিকিৎসা সফল করতে পারে:
- সমস্যাগুলির কারণ বোঝার চেষ্টা করুন: যেসবের খাবার ও অভ্যাসের জন্য আপনার হজম শক্তি বিগড়ে যাচ্ছে, তার ওপর নজর রাখতে পারেন। আপনার ডাক্তার এবং ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে যথাযথ পরামর্শ নিয়ে, আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
- ঔষধ: আপনার লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করে অ্যান্টি-ডায়রিয়াল, অ্যান্টি-নউসিয়া, অ্যান্টি-এমেটিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।
- সার্জারি: আপনাকে গলস্টোন, অ্যাপেনডিসাইটিস এবং হার্নিয়ার জন্য অস্ত্রোপচার করানোর পরমার্শ দেওয়া হতে পারে।
- এন্ডোস্কপি: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের জন্য, হেমোস্ট্যাটিক ওষুধ এন্ডোস্কোপিক ডেলিভারি পদ্ধতির মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাবার খাওয়া
- আপনার অন্ত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রোবায়োটিক ব্যবহার করুন
হজমে সমস্যা রোগ আপনার দৈনন্দিন নিয়ম এবং খাওয়ার অভ্যাসের মধ্যে ছোটো ছোটো পরিবর্তন করলেই প্রতিরোধযোগ্য। ঔষধ এবং প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সম্পূর্ণরূপেই রোগ সারাতে পারে। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নিয়ে সমস্যার পড়ার আগে ভালো হবে যদি আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেন এ ব্যাপারে।
খাবার হজমের সমস্যা নিরসন করতে সহায়ক কিছু খাবারঃ
সবুজ শাকসবজি, পরিমিত পানি পান, টক দই, পেঁপে, কলা, আদা, রসুন ও ধনে, খাবার সোডা, হারবাল চা, ব্রকলি, কাজুবাদাম, দারচিনি-মৌরি, বিটরুট, তিল ইত্যাদি খাবার আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে পাকস্থলীতে খাদ্যপ্রক্রিয়া ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।