মুখের ভেতরের শুষ্কতা কি?
মুখের শুষ্কতা জেরোস্টমিয়া নামেও পরিচিত, এটি এক এমন অবস্থা যার প্রধান কারণ হলো মুখে স্যালাইভা বা থুতু অর্থাৎ মুখে লালা ঠিকমতো তৈরি না হওয়া। এটি খুবই কমন উপসর্গ এবং সচরাচর নানান ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায়।
আপনি যখন ঘাবড়ে যান অথবা মানসিক চাপে থাকেন, তখনও আপনি মুখের শুষ্কতা অনুভব করতে পারেন। এটা আবার বয়স বাড়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত। অনেক সময় ঠোঁট ও জিব এত বেশি শুকিয়ে যায় যে রীতিমতো ফেটে যায়। ঠোঁটের কোনাও ফেটে যায় এবং খাবার গিলে খাওয়া ও কথা বলা কষ্টকর হয়ে ওঠে।
মুখের লালা তৈরি না হলে মুখের ভেতর খাদ্যকণা চূর্ণ হয় না ও পরিষ্কারও হয় না। সে জন্য মুখের দুর্গন্ধ হওয়াটাও স্বাভাবিক। অনেক ক্ষেত্রে গলার স্বরেরও পরিবর্তন হতে পারে। মুখ শুকিয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া অধিক পরিমাণে বেড়ে যাওয়াতে প্রদাহ তৈরি হয়। মুখের শুষ্কতা দাঁতের ক্ষয় এবং অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন ওরাল থ্রাশ।
মুখের শুষ্কতার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
মুখের শুষ্কতার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি নিম্নলিখিত:
- কথাবার্তা, চিবানো এবং গিলতে সমস্যা।
- ঘন ঘন তৃষ্ণা অনুভব করা।
- ঠোঁট ফাটা।
- স্বাদের অনুভূতি হ্রাস।
- গলা ব্যথা।
- হেলিটোসিস (নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ)।
- মুখের কোণা শুকিয়ে যাওয়া।
- মুখে ঘন ঘন আলসার হওয়া।
- বাঁধানো দাঁত পরতে অসুবিধে হওয়া।
- মাড়ির সংক্রমণ বৃদ্ধি।
মুখের শুষ্কতার প্রধান কারণগুলি কি কি?
মুখের শুষ্কতা নানা কারণে হয়। যেমন:
- লালাগ্রন্থির প্রদাহ বা অন্য কোনো সমস্যায় মুখ শুকিয়ে যেতে পারে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ না করা অথবা কিডনির রোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো চিকিৎসাজনিত অবস্থার কারণে ডিহাইড্রেশন।
- অনেক ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মুখের শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। যেমন অ্যালার্জি বা ঠান্ডা জ্বরের ওষুধ বা কফ-সিরাপ, ঘুমের বা টেনশনের ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের ওষুধ ইত্যাদি।
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়াও (রাত্রিবেলা) মুখের শুষ্কতার জন্য দায়ী। নাকের পলিপ, টনসিল বৃদ্ধি এবং অ্যালার্জিক রাইনাইটিস মতো অবস্থা মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে বাধ্য করে, যা শুষ্কতার কারণ।
- ডায়াবেটিসের কারণে থুতুর প্রবাহ মাত্রা কমার ফলে।
- ক্যানসারের চিকিৎসায় রেডিয়েশন বা রেডিওথেরাপির ফলে লালাগ্রন্থির কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কেমোথেরাপি অনেক সময় মুখের লালাকে শুকিয়ে ফেলে। এতে মুখের ভেতর শুষ্ক হয়ে যায়।
- ধূমপান, তামাক, গুল বা জর্দা, সাদাপাতাও মুখের শুষ্কতার জন্য দায়ী।
- অটোইমিউন রোগের ফলেও মুখের শুষ্কতা হতে পারে (জোগ্রেন সিন্ড্রোম)।
- কোনো কারণে মাথা ও ঘাড়ের স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হলে মুখে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
- শরীরের পানিশূন্যতা ইত্যাদি।
মুখের শুষ্কতা কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
মুখের শুষ্কতা নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায়:
- সায়ালোমেট্রি - থুতু বা লালার প্রবাহ পরিমাপ করা।
- সায়ালোগ্রাফি - থুতু নালীতে রেডিওপেক ডাই প্রয়োগ।
- অন্যান্য সনাক্তকরণ পদ্ধতি - আলট্রাসাউন্ড, ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং, লালাগ্রন্থির বায়োপসি, ইত্যাদি।
মুখের শুষ্কতা চিকিৎসা করার জন্য কোনও বাধাধরা নিয়মাবলী নেই। তাও, নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি অস্বস্তি দুর করার চেষ্টা করতে পারেন:
- স্যালাইভারি লজেন্স এবং স্যালাইভারি স্প্রে বেশি আরাম পাওয়ার জন্য।
- চুয়িং গাম এবং অর্গ্যানিক অ্যাসিডের মতো লালাগ্রন্থির উদ্দীপক।
- মুখের শুষ্কতা কমানোর জন্য তরল পানের মাত্রা বৃদ্ধি।
- পদ্ধতিগত ওষুধ। মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে পারেন।
মুখের ভেতরের শুষ্কতা দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
শুষ্ক মুখের সমস্যার সমাধানে কয়েকটি ঘরোয়া উপায় জেনে নিন:
- পর্যাপ্ত পানি, ফলের রস, ডাবের পানি পান করুন
- গোলমরিচ লালা উৎপাদনের সাহায্য করে। রুচি বাড়ায়, খাবারে গোলমরিচের ব্যবহার করুন
- অ্যালোভেরা জেল মুখের ভেতরের শুষ্কতা দূর করে। এক গ্লস পানিতে আধাকাপ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে পান করতে হবে
- আদা একটি শুষ্ক মুখে লালা উৎপাদন করে। প্রতিদিন এক কাপ আদা চা পান করুন।
এসব করার পরও যদি মুখের ভেতরে শুকনো লাগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।