ই. কোলাই সংক্রমণ কি?
সাধারণত মানুষের অন্ত্রে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া বাস করে, যাদেরকে বলা হয় ‘নরমাল ফ্লোরা’। এরা ওজনে প্রায় এক কেজি। এই নরমাল ফ্লোরার 0.১ শতাংশ (এক গ্রাম) হচ্ছে এশেরিকিয়া কোলাই যা ই. কোলাই নামেও পরিচিত! বেশিরভাগ ই. কোলাই ক্ষতিকর নয় তবে কিছু ই. কোলাই তাদের হোস্টের শরীরে মারাত্মক খাদ্য বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। ক্ষতিকর নয় এরূপ ই. কোলাই স্ট্রেইন হোস্টের অন্ত্রে অবস্থান করে দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন কে ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স তৈরী করে এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণূ হতে রক্ষা করে। মানুষের মলের মাধ্যমে ই. কোলাই পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাহিরের পরিবেশেও এরা সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। পানীয় বা খাদ্যের মাধ্যমে তারা আমাদের দেহে প্রবেশ করে।

এদের গায়ের আবরণ (O antigen, part of cell wall) ও চাবুকের (ফ্লাজেলা, H: flagellin) উপর ভিত্তি করে এ পর্যন্ত প্রায় সাতশত বর্ণের (Strain) ই. কোলাই (সেরোভার) আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বর্ণের ই. কোলাই আমাদের দেহে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোর মধ্যে হচ্ছে প্রধানত-

  • এন্টেরোপ্যাথজেনিক ই. কোলাই (EPEC) - শিশুদের ডায়রিয়ার জন্য দায়ী।
  • এন্টেরোটক্সিজেনিক ই. কোলাই (ETEC) - ট্রাভেলার্স ডায়েরিয়া ও ফুড পয়জনিং ঘটায়।
  • এন্টেরোইনভেসিভ ই. কোলাই (EIEC) - ডায়রিয়া করে থাকে যার সাথে Shigella (আমাশয়ের জীবাণূ) আক্রমণের সাথে সামঞ্জস্য আছে।
  • এন্টেরোহেমোরেজিক ই. কোলাই (EHEC) - যা হিমোলাইটিক ইউরেমিয়া সিনড্রোম নামক রোগ তৈরী করে যার ফলে কিডনী বিকল হয়ে যায়।
  • শিগা টক্সিন প্রোডিউসিং ই. কোলাই (STEC)।


ই. কোলাই সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ই. কোলাই সংক্রমণে অনেকরকম উপসর্গের অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি নির্ভর করে যে, কোন ধরনের ই. কোলাই সংক্রমণ হয়েছে। সংক্রমণের ধরণের উপর ভিত্তি করে, যে সকল লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি দেখা যায়:

  • শিশুদের ডায়রিয়া এবং ভ্রমণকারীদের ডায়রিয়া: পানির মতো মলত্যাগ (কখনও কখনও সাথে কফও থাকে) এবং বমি।
  • রক্তপ্রদাহজনিত কোলাইটিস: রক্তযুক্ত মল।
  • ক্রোনস রোগের সাথে ই. কোলাই সংক্রমণ: অন্ত্রে অনবরত প্রদাহ, অন্ত্রের দেওয়ালে ক্ষত এবং পানির মতো মলত্যাগ।
  • ইউটিআই: মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ এবং প্রচন্ড জ্বর।
  • নবজাতকের মেনিনজাইটিস: সদ্যোজাতদের প্রচন্ড জ্বরের লক্ষণ।


ই. কোলাই সংক্রমণের প্রধান কারণগুলি কি কি?
সংক্রমণের প্রধান কারণ হল রোগজনক ই. কোলাইয়ের কারণে খাবার এবং পানি দূষিত হওয়া। যদিও ই. কোলাই অন্ত্রের ভিতরে বন্ধুত্বপূর্ণ একটি ব্যাকটেরিয়া, তবে এটি রোগজনক প্রজাতির হওয়ার কারণে মানুষের দেহে ব্যাপক ক্ষতি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলি এমনকি সুস্থ শরীরেও সংক্রমণ তৈরী করতে এবং ছড়িয়ে পড়তে পারে এই সকল উপায়ে:

  • দূষিত পানি পান
  • দূষিত খাবার খাওয়া
  • ই. কোলাই দ্বারা দূষিত মাটিতে উৎপন্ন সব্জি খাওয়ার কারণে
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • হাসপাতালের দূষিত আবর্জনার প্রবাহে থাকা ই. কোলাই।


ই. কোলাই সংক্রমণ কিভাবে নির্ণয় এবং এর কিভাবে চিকিৎসা করা হয়?
বিভিন্ন ই. কোলাই সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য প্রধানত নমুনায় উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া বা তার বিষের পরীক্ষা করা হয়। সংক্রমণের উপর নির্ভর করে, যেসব নির্ণয়কারক পরীক্ষাগুলি করা হয়:

  • ইউটিআই: মূত্র পরীক্ষা এবং মূত্র অনুশীলন।
  • ডায়রিয়া: মলের নমুনা পরীক্ষা।
  • নবজাতকের মেনিনজাইটিস: সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) পরীক্ষা এবং অনুশীলন।
  • ক্রোনস রোগ: অন্ত্রের ক্ষত পরীক্ষার জন্য প্রচলিত রেডিওলজি এবং আলসারেটিভ কোলাইটিস থেকে তাদের আলাদা করা, পাশাপাশি ই. কোলাইয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য মলের পরীক্ষা করা হয়।


ই. কোলাই যেহেতু অনেকগুলি ওষুধ প্রতিরোধকারী ক্ষমতাযুক্ত, তাই এর চিকিৎসা কঠিন হতে পারে। ই. কোলাই সংক্রমণের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল:

  • যুক্তিসঙ্গতভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার
  • প্রোবায়োটিকস
  • ব্যাকটেরিওফেজ থেরাপি
  • অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপ্টাইড
  • ওষুধের সাথে, নিজের যত্ন নিতে হবে যেমন পরিমান মতো পানি খাওয়া এবং বিশ্রাম নেওয়া উপকারী হতে পারে।
  • প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি হল সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সতর্কভাবে খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে