হাতে-পায়ে কড়া কি?
শরীরের যেসব অংশ অতিরিক্ত ঘর্ষণ ও চাপের মুখে পড়ে; সেসব অংশে কড়া পড়ে থাকে। পায়ের তলাসহ অন্যান্য অংশ অনেক সময় শক্ত হয়ে যায়। কালচে বা হলুদ হয়ে ত্বকের উপর শক্ত স্তর তৈরি হয়। চলতি ভাষায় একে কড়া বলা হয়।

পায়ে কড়া বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক জুতো না পড়া বা ভালোভাবে পায়ের যত্ন না নেওয়ার কারণে হয়। দীর্ঘদিনের কড়া আরও বেশি শক্ত ও হলুদ হয়ে থাকে। পায়ে, হাতের আঙুল বা কনুইতে বেশি কড়া পড়ে থাকে।

হাতে-পায়ে কড়া পরার প্রধান উপসর্গগুলি কি?
পায়ে কড়ার লক্ষণগুলি শুধুমাত্র আক্রান্ত অংশেই দেখা যায়। এই লক্ষণগুলি হল:

  • চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
  • আক্রান্ত অংশে বৃত্তাকার বা গোলাকার আকৃতি দেখা দেওয়া
  • ব্যথা
  • আক্রান্ত অংশটি সাদাটে, হলদেটে বা ফ্যাকাশে হওয়া
  • হাঁটতে অসুবিধা হওয়া।


হাতে-পায়ে কড়া পরার প্রধান কারণগুলি কি?
পায়ে কড়া প্রধানত সঠিক জুতো ব্যবহার না কড়া এবং বারংবার পায়ের চামড়ার সাথে জুতোর ঘর্ষণের ফলে তৈরি হয়। উচু হিল জুতো পায়ে বেশী চাপ ফেলে যার ফলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। পায়ের আঙ্গুলের অস্বভাবিকতা যেমন হাতুড়ির বা পশুপাখির নখের মত পায়ের আঙ্গুলের কারণেও পায়ের কড়া হতে পারে।

হাতে-পায়ে কড়া পরা কিভাবে সনাক্ত এবং চিকিৎসা করা হয়?
এটির চিকিৎসা মূলত চিকিৎসক বা পোডিইয়াট্রিসটরা করে থাকে। এর জন্য পায়ের পরীক্ষা এবং রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস গ্রহণ করা হয়। পায়ের কড়া সহজেই পা দেখে সনাক্ত করা যায়। কড়ার চিকিৎসা করার জন্য পায়ে রক্ত বা ছবি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না।

চিকিৎসকরা স্ক্র্যাপিং বা চেঁছে ফেলার মাধ্যমে শক্ত অংশটি সরিয়ে এর চিকিৎসা করে। রোগটি প্রতিরোধ করার জন্য ডায়বেটিস ও এর মতো কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থাকে প্রতিহত করা দরকার। পায়ের কড়ার চিকিৎসা করার জন্য বিশেষ কোন চিকিৎসা পদ্ধতির দরকার হয়না, কেবল মাত্র একটু বেশি পায়ের যত্ন ও ঘর্ষণ যাতে কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখলেই হবে। ব্যাথা কমানোর পন্থা নিলেও অস্বস্তি অনেকটা কমে যাবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্ক থাকা উচিত। কারণ পায়ে রক্তের প্রবাহ কম থাকায় জটিলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

হাতে-পায়ে কড়া দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
ঘরোয়া উপায়েও প্রতিকার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। জেনে নিন উপায়-

  • পায়ে বা হাতের যে স্থানে কড়া পড়েছে; সেখানে নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। কর্ন যে স্থানে হয়ে থাকে সেখানে মাঝে মাঝে ব্যথা হয় ও ফুলে যায়। এজন্য লেবুর রস কর্নের স্থানে নিয়মিত ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে তা দূর হয়ে যাবে।
  • রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা আছে। রসুন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। যা ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। কড়া দূর করার জন্য কয়েকটি রসুন বেটে তার সঙ্গে লবঙ্গের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করুন। সারারাত ত্বকে রেখে দিন, সকালে ধুয়ে ফেলবেন। নিয়মিত এ মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহার করলে কর্নগুলো উধাও হয়ে যাবে।
  • পেঁয়াজ তো সবার রান্নাঘরেই থাকে। এ উপদানে রয়েছে শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যাসিড। যা বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরের যেসব স্থানে কর্ন বা ক্যালাস আছে; সেখানে পেঁয়াজের পেস্ট ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হবে। পেঁয়াজের রস এতোটাই শক্তিশালী যে, এটি ত্বকের শক্ত স্তরটিকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করে দেয়। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করে স্থানটি মোজা বা কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখুন।
  • বেকিং সোডা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এটি প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। ত্বকের যেসব স্থানে কর্ন আছে; সেখানে মৃত ত্বকের কোষ দূর করতে ব্যবহার করুন বেকিং সোডা। সামান্য গরম পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে ১৫ মিনিট ত্বকের কর্নের স্থানে রাখুন। এরপর পিউমিস পাথর দিয়ে এক্সফোলিয়েট করুন। বেকিং সোডায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এজেন্ট রয়েছে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • আনারস তো সবাই কমবেশি খেয়ে থাকেন। এর খোসাগুলো নিশ্চয়ই ফেলে দেন! অবাক করা বিষয় হলেও সত্যিই, আনারসের খোসা ব্যবহারে কর্ন ও ক্যালাস নিরাময় করা সম্ভব। এতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণ আছে। এজন্য এক টুকরো আনারসের খোসা আপনার কর্নে ব্যবহার করে ব্যান্ডেজ করে রাখুন সারারাত। সকাল হলে ব্যান্ডেজ খুলে স্থানটি ধুয়ে ফেলুন।


নিয়মিত আরও যেসব ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহারে কড়া দূর করতে পারেন-

  • হাত বা পায়ে কড়া পড়লে গরম পানিতে আক্রান্ত স্থান ভিজিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। পরে ত্বক স্ক্রাব করুন।
  • যে স্থানে কড়া পড়ে, সেখানে ঘন ঘন লোশন লাগানোর অভ্যাস করুন। শুষ্ক ত্বক ক্যালাস এবং কর্ন আরও শক্ত করে দেয়। এজন্য ত্বককে আর্দ্র রাখুন।
  • আক্রান্ত স্থান স্ক্রাব করার জন্য একটি পিউমিস পাথর, ফাইলার বা ওয়াশকোথ ব্যবহার করুন।
  • আরামদায়ক জুতা পরুন। এতে কর্ন বাড়বে না। নিয়মিত পায়ে মোজা পড়ার অভ্যাস করুন।
  • আপনার পায়ের নখ সবসময় ছোট রাখুন। এসব ছোট ছোট ভুল এড়িয়ে চললেই কর্ন বা ক্যালাসের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে