মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার (হেডনেক ক্যানসার) কি?
হেড মানে মাথা; নেক মানে ঘাড়, এখানে গলার অংশও আছে। হেডনেক ক্যানসার বলতে বোঝায়, মুখগহ্বর থেকে শুরু করে জিহ্বা, গাল, মাড়ি, দাঁত, স্বরযন্ত্র—সবকিছুর ক্যানসারকে। আসলে মুখ থেকে শুরু করে চোয়ালসহ দাঁতের মাড়ি, দাঁতের পেছনের অংশ, জিহ্বা, জিহ্বার পেছনের অংশ, স্বরযন্ত্র, নাকের পেছনে ন্যাজোফ্যারিং—সবকিছু মিলিয়ে হচ্ছে মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার। এটি সবচেয়ে বেশি মুখে হয়, এবং বয়স্ক পুরুষদের এই ক্যান্সার বাড়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে।

মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
মাথার ও ঘাড়ের এলাকায় উপস্থিত বিভিন্ন কাঠামোর কারণে, এই ক্যান্সারগুলির লক্ষণ ও উপসর্গগুলি প্রভাবিত হওয়া কাঠামোর উপর নির্ভর করে। তবুও, কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ আছে, যেগুলি হল:

  • ঘাড় ফুলে যাওয়া
  • দীর্ঘকালস্থায়ী কাশি
  • ওজন কমে যাওয়া (শরীরের মোট ওজনের >১০ শতাংশ)
  • ডিসফ্যাগিয়া (গিলতে সমস্যা)
  • ঘাড়ের স্থানে লসিকা গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া
  • মাথা ব্যাথা
  • মুখের অসাড়তা।


মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের প্রধান কারণগুলি কি কি?
আমাদের শরীরের যেকোনো কোষ মিউটেশনের কারণে ক্যান্সারযুক্ত হতে পারে। এই মিউটেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং তাই কারণটিকে নির্ধারণ করা কঠিন। ঝুঁকির কারণগুলি হল:

  • ধূমপান
  • তামাক, সাদা পাতা, গুল এর ব্যবহার
  • মাদক খাওয়া
  • পারিবারিক ইতিহাস
  • বার্ধক্য
  • পুষ্টির অভাব
  • ধুলো, ধাতু কণা এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে আসা
  • ক্ষতিকর এক্স-রের সংস্পর্শে আসা।


মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সার কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সাধারণত সঠিক ক্লিনিকাল পরীক্ষার সাথে একটি মেডিকেল ইতিহাস রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে। যদিও, টিউমার-নোড-মেটাস্টাসিস (টিএনএম/TNM) স্টেজিং ব্যবহার করে এই ক্যান্সারকে শ্রেণীবদ্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট আক্রমণমূলক ও অনাক্রমণমূলক অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়, যা চিকিৎসার পরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্ত পরীক্ষা - রোগের অন্তর্নিহিত শর্তগুলি নিরসন করতে সাধারণ বাঁধা-ধরা রক্ত পরীক্ষা করা প্রয়োজন:

  • কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি/CBC)
  • লিভার ফাংশন পরীক্ষা
  • কিডনি ফাংশন পরীক্ষা
  • সিটি স্ক্যান - মাথা এবং ঘাড়ের সিটি স্ক্যান ক্যান্সারের পরিব্যাপ্তি সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়
  • পিইটি/PET স্ক্যান - দূরবর্তী অঙ্গগুলিতে বিস্তারের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য পিইটি/PET স্ক্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • এমআরআই/ MRI স্ক্যান - ক্যান্সারের পরিমাণ নির্ধারণে সিটি/CT স্ক্যানের চেয়ে বেশি যথাযথ
  • ফাইন নিডল এস্পিরেশন সাইটোলজি (এফএনএসি /FNAC) - হয় আল্ট্রাসাউন্ড পরিচালিত বা সিটি পরিচালিত, যা ক্যান্সারের ঐতিহাসিক ধরণের উপর খুঁটিনাটি দিতে ক্যান্সারযুক্ত টিস্যু থেকে একটি বায়োপসি নিতে সাহায্য করে।


মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার হলে এর চিকিৎসার ধরনগুলো কী কী?
অন্য কোন ক্যান্সারের মতো, এই ক্যান্সারের চিকিৎসায়, অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, বা বিকিরণ থেরাপি বা এই থেরাপির সমন্বয় করা হয়। যদি ওরাল ক্যাভিটিতে কোনো ক্যানসার থাকে, জিহ্বা অথবা এর আশপাশের জায়গাগুলোতে, সেগুলোর প্রথম চিকিৎসা আসলে সার্জারি। অস্ত্রোপচার ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসায় কোনো ভালো ফল আসে না। তবে আবার কিছু কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে অস্ত্রোপচার করা যায় না। যেমন : নাকের ভেতর ন্যাজোফেরিংস, জিহ্বার গোড়া। এই জায়গাগুলো সার্জারি করা সহজ নয়। সে জন্য ওই জায়গাগুলোতে রেডিয়েশনের সঙ্গে কেমোথেরাপির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।

আবার আমাদের স্বরযন্ত্রের ক্ষেত্রে, ১০ থেকে ১৫ বছর আগে বলা হতো অস্ত্রোপচার প্রধান চিকিৎসা। সার্জারি করলে অনেক বেশি জটিলতা হয় গলায়। এর জন্য রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে কেমোথেরাপি একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সুতরাং জায়গা বুঝে চিকিৎসা করতে হয়। তবে মুখগহ্বরের ভেতরে যে কিছু আছে, সেটার প্রথম চিকিৎসা আসলে সার্জারি। অস্ত্রোপচার করা ছাড়া অন্য কোনোভাবে চিকিৎসা করলে অত ভালো ফল পাওয়া যায় না।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে